শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করতে পথে নেমেছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। মুজিবকন্যাকে উৎখাত করে এই সংগঠনের ছাত্ররাই ক্ষমতায় এনেছিলেন মহম্মদ ইউনুসকে। এবার ভোটযুদ্ধে নামছেন সেই ছাত্ররাই। আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারদের নতুন রাজনৈতিক দলের। যার মাথা হয়েছেন ইউনুসের প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি বা এনসিপি)-র পথ চলা শুরু হল। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ের মঞ্চে প্রথমে কোরান পাঠ করেন দলের সদস্যেরা। তার পর গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটকের মতো ধর্মগ্রন্থগুলিও পাঠ করা হয়। দলের আত্মপ্রকাশ হয় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে। এই দলের শীর্ষ পদের সংখ্যা এবং কারা সেই সব পদে থাকবেন, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে জলঘোলা চলছে। শেষ মুহূর্তে আরও তিনটি পদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন দলে মোট শীর্ষ পদাধিকারীর সংখ্যা ১০।

এই ১০ জনের নামও প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাস্তায় বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন। রয়েছে পুলিশি প্রহরা। বাংলাদেশের অন্য দলগুলি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো থেকে জানা গেছে, নতুন দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে দু’জন করে থাকছেন। এ ছাড়াও থাকছে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নামের একটি পদ। শুক্রবার দুপুরে এই তিনটি নতুন পদ যোগ করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই পদে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এ ছাড়া, দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এবং আরিফুল ইসলাম আদীব। নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীকে দলের মুখ্য সমন্বয়কারী করা হয়েছে। মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল)-এর দায়িত্ব পেয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং নাহিদা সারওয়ার। যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে চলে আসেন। ৮ অগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে ।
হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে যাঁরা বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁরা এই নতুন দলের প্রথম সারিতে রয়েছেন।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, এবার কোন পথে এগোবে বাংলাদেশ? এই ছাত্ররা কি সুদিন ফেরাবেন দেশের! নাকি ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ‘নতুন’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠবে?
এই নতুন দল নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে।