কুম্ভের জল নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এবার ১৪৪ বছর অন্তর মহাকুম্ভ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হল। মঙ্গলবার নবান্নের বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি যতদূর জানি, পূণ্যস্নান সংক্রান্তিতে হয়। যেমন গঙ্গাসাগর প্রতিবার হয়, মহাকুম্ভে ১২ বছর পর পর হয়। তা বলে ১৪৪ বছর অন্তর মহাকুম্ভ, আমি যতটুক শুনেছি, এটা ঠিক নয়!” মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “আমার যদি ভ্রান্তি থাকে আপনারা সংশোধন করে দেবেন। আমি একটু অজ্ঞ আছি! যদি কেউ বিশিষ্ট মানুষ থাকেন, যারা জানেন, তাঁদের বলব, একটু গবেষণা করে জানাবেন, আসল সত্যটা কী। আসল তথ্যটা কী!”
বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি নিজের কাঁধে রাখলেন না। বরং সুকৌশলে বিতর্কে উস্কে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং কুম্ভ বিতর্কে বিজেপির স্নায়ুর চাপ আরও বাড়ালেন।

মহাকুম্ভে পূণ্যস্নান ঘিরে সম্প্রতি সঙ্গমের জলের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল । যদিও কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনস্থ ওই পর্ষদের রিপোর্ট মানতে চাননি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে তারপর থেকেই মহাকুম্ভের জল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভাইরাল হয়েছে একাধিক ভিডিও।
সুকৌশলে বিতর্ক উস্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যোগীবাবু হয়তো রেগে যাবেন, কিন্তু যেটা সত্যি সেটা তো আমাকে বলতেই হবে।”

সম্প্রতি গঙ্গাসাগর মেলায় অমৃতস্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কুম্ভমেলার ভিড়কে কেন্দ্র করে দিল্লি স্টেশনেও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আয়োজনের ত্রুটি সামনে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার কথা মনে করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুধু কুম্ভ স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট নয়, কুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র করে রেল দুর্ঘটনা, একাধিক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা গেলেন, অথচ অনেককে ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হল না। আমাদের রাজ্যের মৃতদের পিএম এখানে করতে হল। সকলে যেন ক্ষতিপূরণ পান, এটা উত্তরপ্রদেশ সরকারের দেখা দরকার।
পদপিষ্টের ঘটনায় যোগী সরকারের বিরুদ্ধে ডেডবডি লোপাট করে প্রকৃত সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও আগেই এনেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ টেনে এদিন পরোক্ষে সেকথাও স্মরণ করাতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকারের যে ত্রুটি রয়েছে সে বিষয়েও মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি বিয়েবাড়ির আয়োজন করি, আমাকে খাবার অতিরিক্ত রাখতে হয়। ৪০০ লোককে নিমন্ত্রণ করলে ৫০০ লোকের আয়োজন করতে হয়। আর ধর্মের ক্ষেত্রেও তেমনটাই। এটাও উৎসব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কতটা ক্যাপাসিটি আছে, কত মানুষ যেতে পারে সবটা। ভাবনাচিন্তার প্ল্যানিংয়ের ব্যাপারে বলছি। অনেকে এই নিয়ে অসত্য কথা বলছেন। আমি কোনও ধর্মকে জীবনে অসম্মান করিনি। করবও না। গঙ্গাসাগর মেলা হলে আমাদের পাঁচ-ছ’দিন ঘুম হয় না। তাই গঙ্গাসাগর সেতু তৈরি করছি। রাশের সময় কত লোক হয় আপনারা জানেন! পুজো কার্নিভাল যত ক্ষণ পর্যন্ত শেষ না-হয় তত ক্ষণ আমাদের নজর থাকে।’’
মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে যে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছিল, সেই বিষয়টির উল্লেখ করেও যোগীকে নিশানা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা যখন-তখন হতে পারে। তার পরেও তো প্ল্যানিং করতে হয়। যোগী স্যর আমাকে যতই গালিগালাজ করুন, আমার গায়ে ফোস্কা পড়বে না। তবে আমি বলব, যাঁদের মৃত্যুর শংসাপত্র দেননি, ময়নাতদন্তের সার্টিফিকেট দেননি, তাঁদের তা দেওয়া উচিত।’’

একই সঙ্গে মমতা এও বলেন, “যারা কুম্ভ স্নান করছেন তাদের নিয়ে কিছু আমি বলিনি। কারণ, কে কোথায় স্নান করবে, কী খাবে, কী পরবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। ধর্ম যার যার নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে আমি কিছু বলি না। আমরা সকল ধর্মকে সম্মান করি। কিন্তু মানুষকে বিপদে ফেলা ঠিক নয়।”
