
নয়া দিল্লি: ভারতের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়, সেটা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে । দু’দিন আগে এমন মন্তব্যই শোনা গিয়েছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মুখে। তাঁর বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তির জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে কাঠগড়ায় তুলবে, আবার নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কও চাইবে, এমনটা হতে পারে না। সোমবার এরই জবাব এল ও–পার থেকে।
সম্প্রতি জয়শঙ্করকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এ দিন তাঁরই মন্তব্য, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক। কিন্তু ভারত কেমন সম্পর্ক চাইছে, সে সিদ্ধান্ত ভারতকেই নিতে হবে।’
ঠিক কী বলেছিলেন জয়শঙ্কর?
সদ্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ দফতরের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের দ্বিচারিতা নিয়ে চরম বিরক্তি প্রকাশ করলেন বিদেশমন্ত্রী। একইসঙ্গে বাংলাদেশকে সতর্কও করলেন তিনি। বললেন, ‘বাংলাদেশ আগে ঠিক করুক, ওরা কী চায়।’

মাসকটে তৌহিদের সঙ্গে মিটিংয়ের সপ্তাহখানেক পর, শনিবার এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্করকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘রোজ অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ না কেউ বাংলাদেশের অশান্তির জন্য ভারতকে দুষবেন, হাস্যকর অভিযোগ তুলবেন, আবার ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাইবেন, এটা হয় না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার আমাদের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এ ব্যাপারে আমাদের কথা বলতেই হতো, সেটা আমরা বলেওছি। ওদেরও নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে, কিন্তু দিনের শেষে আমরা প্রতিবেশী, এটাও অস্বীকারের জায়গা নেই। ১৯৭১–কে ফিরে দেখলে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। ওদেরই ঠিক করতে হবে, আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।’
সোমবার তৌহিদের জবাব, ‘উনি (জয়শঙ্কর) কিছু বলেছেন। বাংলাদেশের সরকারের ভিতর থেকে বিভিন্ন লোক কথাবার্তা বলছেন। আমি জয়শঙ্করের বক্তব্যের ন্যায়–অন্যায়, উচিত–অনুচিত বিচার করতে চাই না। ওঁদের মুখ্যমন্ত্রী (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী) তো পারলে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়ে দেন। ওঁদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তো অহরহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়েই আমরা সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদের সংযোজন, ‘সম্পর্ক ভালো করতে গেলে তো… আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতে থেকে যে সব কথা বলছেন, সেগুলোই সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।’ সংখ্যালঘু ইস্যুতে জয়শঙ্করকে তাঁর জবাব, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অভিযোগগুলো প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ার বিকৃত উপস্থাপনা, তার ভিত্তিতে অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তো ভারতের বিষয় হতে পারে না, এটা বাংলাদেশেরই বিষয়।’
গত বছরের অগস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে। সাম্প্রতিক কিছু অশান্তির ঘটনার জন্য বাংলাদেশ যেভাবে ভারতের দিকে দায় ঠেলছে, বাংলাদেশের নেতারা যেভাবে ভারত সম্পর্কে মন্তব্য করছে, তা যে নয়া দিল্লি খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না, তা একপ্রকার বুঝিয়ে দিলেন জয়শঙ্কর।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের বাড়ি ভেঙে দেওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অপরাধের ঘটনায় ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে বাংলাদেশ। মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, শেখ হাসিনাকে মন্তব্য করা থেকে বিরত রাখছে না ভারত, সেই কারণেই বাংলাদেশে এত অশান্তি। বাংলাদেশের এইসব মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন।”
ঢাকার দ্বিচারিতার কথা উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেছেন, একদিকে ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার কথা বলে, অন্যদিকে ভারতের উপরেই দায় চাপায়। বাংলাদেশ ঠিক কী চাইছে, তা এবার ঠিক করে ফেলা উচিত বলে মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “একদিকে বলবেন, ভাল সম্পর্ক রাখতে চাই, অন্যদিকে যা কিছু ঘটবে, তার জন্য রোজ সকালে উঠে দোষারোপ করবেন, তা হয় না। একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। কিছু কিছু বক্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি কীভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে, সে ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। তাঁর মতে, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কে কেমন সম্পর্ক রাখতে চায়, তা ঠিক করে ফেলা উচিত।
