রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো। তাই স্কুলে স্কুলে, বাড়িতে বাড়িতে, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। পড়ুয়াদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। স্কুল-কলেজে, বাড়িতে বাড়িতে, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে এখন চরম ব্যস্ততা। সরস্বতী পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন ছোট থেকে বড়রা। শাস্ত্র মতে, সরস্বতীকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দেবী বলে মানা হয়। ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাই প্রতিবছর প্যান্ডেলে, স্কুল-কলেজে, বাড়িতে আনা হয়। সাধারণত, শাস্ত্রমতে, সরস্বতী দেবীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে।
বাংলা সরস্বতী দেবীর রয়েছে বহু নাম। সরস্বতীদেবীর অপর নাম হল সারদা, বাগদেবী, বাগ্বাদিনী, বাগীশা, বাগ্দেবতা, বাগীশ্বরী, বাঙ্ময়ী, বিদ্যাদেবী, বাণী, বীণাপাণি, ভারতী, মহাশ্বেতা, শতরূপা, গীর্দেবী, সনাতনী, পদ্মাসনা প্রভৃতি।
সরস্বতী পুজোর সকাল থেকেই উপবাস করেন পড়ুয়ারা। নিরামিষ খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে পুষ্পাঞ্জলি না দেওয়া পর্যন্ত কুল না খাওয়া, এইসব নিয়ম পালন করে থাকেন উপবাসকারীরা। স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে পরিষ্কার বা নতুন পোশাক পরে পুজোয় মন্ত্র উচ্চারণের যে নিয়ম বর্তমান, তা এখনও বিদ্যমান। সরস্বতী পুজোর দিন পুষ্পাঞ্জলি না দেওয়া পর্যন্ত অনেকেই জলস্পর্শ করেন না।
সরস্বতী পুজোর সময় আরও একটি মজার ঘটনা ঘটে। তা হল. সঠিক সময়ে ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত না আসা। তাই অনেকে বাড়িতে পুরোহিত না এলে নিজেরাই মন্ত্র পড়ে সরস্বতী পুজো করে থাকেন। সরস্বতী পুজোর বিশেষ আচার থআকলেও তা পুরোহিত ছাড়াও আরাধনা করা অত্যন্ত সহজ। সঠিক নিয়ম মেনে সরস্বতী বন্দনা করা হলে সারা বছর আশীর্বাদ বর্ষিত হয়। তাই পুজোর আগে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র ভুলে গেলে এখানে জেনে নিন…
শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলি-মন্ত্র
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে
বীণাপুস্তকরঞ্জিতহস্তে, ভগবতি ভারতি দেবি নমস্তে॥
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ॥
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ॥
সরস্বতীর স্তবঃ
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা॥
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা॥
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈরর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূজিতা মুনিভিঃ সর্ব্বৈর্ ঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা॥
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরন্তি ত্রিসন্ধ্যায়াং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে॥
প্রণাম-মন্ত্র:
সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তু তে॥
জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে।
বীণাপুস্তকরঞ্জিতহস্তে, ভগবতি ভারতি দেবি নমস্তে॥
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা॥
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা॥
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈরর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূজিতা মুনিভিঃ সর্ব্বৈর্ ঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা॥
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরন্তি ত্রিসন্ধ্যায়াং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে॥
সরস্বতী পুজোয় পুষ্পাঞ্জলির শুভক্ষণ ও শুভ যোগ
পুষ্পাঞ্জলীর শুভক্ষণ পঞ্জিকা অনুযায়ী মাঘ শুক্ল পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে ২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সকাল ৯টা ১৪ মিনিট থেকে এবং শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে। তাই ২ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজো পালিত হবে। এ দিন পুজোর জন্য মোট ৫ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের সময় শুভ। ভোর ৭টা ৯ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত পুজোর শুভক্ষণ থাকবে এবং এরই মধ্যে পুষ্পাঞ্জলী সম্পাদন করার পরামর্শ দিচ্ছে শাস্ত্র। তবে সরস্বতী পুজোর দিনে অবুঝ মুহূর্ত থাকে। তাই এই তিথির উপস্থিতিতে যে কোনও সময় পুজো করতে পারেন।
সরস্বতী পুজোর সামগ্রী
শুভক্ষণ ও পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র তো হল, এবার চোখ বুলিয়ে নিন সামগ্রীর তালিকায়–
সরস্বতীর মূর্তি, গঙ্গাজল, পবিত্র জল, হলুদ ফুল, পাঁচটি ফল, ধূপকাঠি, প্রদীপ অক্ষত অর্থাৎ অখণ্ড চাল, ধান, দূর্বা, ঘট, দুধ, ঘি, গুড়, বাতাসা, সাদা কাপড়, অষ্টগন্ধা, সুগন্ধী, চন্দন, মোমবাতি, তুলো বাতি, সিঁদূর, পান পাতা, আম পাতা, বেল পাতা, পদ্ম, জাফরান, কাঁচা হলুদ, মিষ্টি, দোয়াত, খাগের কলম, পলাশ ফুল, আমের মুকুল।