দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে অমৃতস্নানের সুযোগ পাওয়া খুবই পবিত্র মনে করেন পুণ্যার্থীরা। ১৪৪ বছর পর পবিত্র ত্রিবেণী যোগের কারণে বুধবারের এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তাঁদের কাছে। সেই কারণেই ১০ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী পৌঁছেছেন প্রয়াগরাজে। কিন্তু মধ্য রাতের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তীব্র আতঙ্ক তৈরি করেছে মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে। বিভীষিকাময় সেই মুহূর্তের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে শিউরে উঠছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
দুর্ঘটনার সময়ে মেলা প্রাঙ্গণে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। ব্যারিকেড ভেঙে হুমড়ি খেয়ে একে অন্যের ঘাড়ে পড়তে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। প্রিয়জনদের দেখতে না পেয়ে চিৎকার শুরু করেন অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ।
মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
https://x.com/narendramodi/status/1884486027215266267?t=BFnZxZvbk7D-KMg_0dCk7w&s=19
সকাল থেকে মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে চোখে পড়েছে ছেঁড়া জুতো, ব্যাগ, কম্বল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুণ্যার্থীদের জিনিসপত্র। অনেকেই প্রিয়জনদের খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে মৌনী অমাবস্যায় ‘শাহি স্নান’ করতে বিপুল সংখ্যায় পুণ্যার্থীদের ভিড় হবে। এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহাকুম্ভে ‘শাহি স্নান’কে কেন্দ্র করে ভিড় করতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। সন্ধ্যা যত গড়ায়, ভিড় ততই বাড়তে থাকে। দেশ, বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থীরা আসতে শুরু করেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে এক কিলোমিটার দূরে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করেছিল প্রশাসন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে জ়োন ভাগ করে করে ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও এড়ানো গেল না দুর্ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত ১২টা পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু তার পর থেকে ভিড়ের ছবিটা ক্রমে বদলাতে শুরু করে। রাত ২টোয় পরিস্থিতি পুরো বদলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকেই পুণ্যার্থীরা দলে দলে এগোতে শুরু করেন সঙ্গমের দিকে। প্রশাসন চেয়েছিল, পুণ্যার্থীরা আসুক, স্নান সেরে আবার ফিরে যাক। কিন্তু স্নানের পরেও বহু পুণ্যার্থী সঙ্গমস্থলের আশপাশেই ছিলেন। অনেকে আবার প্লাস্টিক পেতে মাটিতে শুয়েও ছিলেন।
আখড়াগুলি জন্য সঙ্গমের পথ নির্দিষ্ট করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার সকাল ৫টা থেকে সেই পথ ধরেই আখড়ার সদস্যদের সঙ্গমে স্নান করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১টার পর থেকেই সেই পথও পুণ্যার্থীদের ভিড়ে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয় বলে পুণ্যার্থীদের দাবি। প্রশাসনের পরিকল্পনা ছিল, চিহ্নিত ব্যারিকেড ঘেরা পথ দিয়েই পুণ্যার্থীদের ফেরানো হবে।
কিন্তু ভিড় এতটাই বেড়ে যায় রাত পৌনে ১টা থেকে রাত ২টোর মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রাত ২টোর পর থেকে বহু পুণ্যার্থী ব্যারিকেড টপকে, ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন। তাতেই বিপত্তি। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খান নিরাপত্তাকর্মীরা। অনেকেই ব্যারিকেড টপকে গিয়ে ঘুমন্ত পুণ্যার্থীদের গায়ে গিয়ে পড়েন। তার পরই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
পদপিষ্টের ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করা হয় মেলাপ্রাঙ্গণে। মাইকিং করে সঙ্গমের এলাকা থেকে পুণ্যার্থীদের দূরে সরানোর কাজ করছে প্রশাসন। মহাকুম্ভের ডিজি বৈভব কৃষ্ণ জানান, ঘোড়সওয়ার পুলিশ দিয়ে সঙ্গম এলাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভেঙে পড়া ব্যারিকেড আবার বাঁধা হয়েছে। সেখানেই নিরাপত্তারক্ষী টহল দিচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণের বিভিন্ন দিকে।
মহাকুম্ভে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নামানো হয়েছে র্যাফ। কাজ করছে এনএসজি-ও। হেলিকপ্টারেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ফোনে কথা বলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে প্রয়াগরাজ থেকে যথা সম্ভব বেশি ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, আরও বেশি করে ট্রেন চালানো উচিত যাতে প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে স্নান করতে আসা লোকজনকে দ্রুত এবং সহজে নিয়ে যাওয়া যায়।
দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
মহা কুম্ভে পদদলিত হওয়ার পর প্রয়াগরাজ থেকে ভক্তদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য রেলওয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য নেন।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রয়াগরাজে রেলওয়ের ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবহিত করেছেন। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে আজ প্রয়াগরাজ থেকে ৩৬০ টিরও বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রয়াগরাজের অনেক রেলস্টেশনে প্রতি ৪ মিনিটে একটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রয়াগরাজের সমস্ত রেলস্টেশনে RPF এবং GRP কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কালার কোড অনুযায়ী স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে।