দেশের সময় , গাইঘাটা :গাইঘাটার কিশোরী নৃত্যশিল্পীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতদের নাম সুমন্ত বিশ্বাস ও রকি দাস ওরফে বিট্টু। এখনও বেশ কয়েকজন পলাতক বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার এক উদীয়মান নৃত্যশিল্পী কিশোরীর গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে। কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হয় গাইঘাটা থানায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই আত্মঘাতী হয় ওই কিশোরী। ধৃতদের একজনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গিয়েছে।
ছোট থেকেই নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল কিশোরীর। বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের একটি রিয়েলিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। এর পর থেকেই তার খ্যাতি বাড়তে থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির সঙ্গে ধৃত সুমন্তর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক নিয়েই ইদানীং ঝামেলা চলছিল। মঙ্গলবারও দু’জনের মধ্যে গোলমাল হয়।
মৃত কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, ‘মেয়ে সুমন্ত ও রকির সঙ্গে মেলামেশা করত। কিন্তু ওরা যে ভালো নয়, তা ও পরে বুঝতে পেরেছিল। তাই ওদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। তবুও মেয়েকে ওরা ফোন করত। মেয়ে ফোন না ধরলে অন্য নম্বর থেকে ফোন করত। অশালীন ভাষায় মেয়ের সঙ্গে কথা বলত। মেয়ের আত্মহত্যার জন্য ওরাই দায়ী।’ ধৃতদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কিশোরীর মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে মেয়েটির বাবা নিজের মুদিখানায় ছিলেন। মা গিয়েছিলেন কালীপুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে।
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এক যুবক আমাকে ফোনে জানায়, মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। আমি দ্রুত বাড়ি ফিরে দেখি, মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলে আছে।’’ বাবার প্রশ্ন, ‘‘ওই যুবক কী ভাবে জানল, আমার মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে?’’ তিন অভিযুক্তের মধ্যে এই যুবকের নামও পুলিশকে জানিয়েছে পরিবারটি।
কিশোরীর পরিবারের দাবি, এলাকার কয়েক জন যুবকের সঙ্গে মেয়ের পরিচয় ছিল। তাদের ‘দাদা’ বলে ডাকত ওই কিশোরী। পরে বুঝতে পারে, ওই ছেলেদের ‘উদ্দেশ্য ভাল নয়।’ তখন সরে আসতে চেয়েছিল। পরিবারের দাবি, ওই যুবকেরা মেয়েকে অন্য বান্ধবীদের সঙ্গে মিশতে দিত না। মঙ্গলবার মেয়ে মেলায় গিয়েছিল। অভিযোগ, ফেরার সময়ে অভিযুক্তেরা বাড়ির আশপাশে ছিল। তারা মেয়েকে হুমকি দেয়, নোংরা কথাবার্তা বলে। মেয়ে ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় ১০-১৫ জন যুবকের একটি দল আছে। তারা মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নানা ভাবে ব্ল্যাকমেল করে। আগেও একই ভাবে এক কিশোরী মারা গিয়েছিল।
মৃত কিশোরীর স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে স্কুলের উৎসবে নাচ করেছে, স্কুলের নাচের দলকে কার্যত নির্দেশনা দিয়েছে। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল।