দেশের সময় কলকাতা : একটা দশ বছরের পুরনো আবাসন। বাঘাযতীনের শুভ অ্যাপার্টমেন্ট ভেঙে পড়ার ঘটনার আকস্মিকতায় হেলে গিয়েছে গোটা শহর কলকাতা। অবৈধ নির্মাণ তো বটেই, অভিযোগ আরও ভয়ানক। আবাসন সামান্য বেঁকে যাওয়ার পর লিফটিংয়ের কাজ চলছিল। আর সেটাও হচ্ছিল পৌরসভার অনুমতি না নিয়েই। আর সেই লিফটিংও কিনা হয়েছে গাড়ির তোলার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে।তেমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
বৃহস্পতিবার বাঘাযতীনের ঘটনাস্থলে বহুতল ভাঙার কাজ পরিদর্শনে গেছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখান থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রমোটারকেই দুষলেন তিনি। এছাড়া হরিয়ানার যে সংস্থা বাড়িতে কাজ করছিল তাদেরও নিশানা করেছেন ফিরহাদ। স্পষ্ট বলেন, মাথামোটার মতো কাজ হয়েছে।
বহুতল হেলে পড়ার ঘটনায় কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে নেতাজি নগর থানায় আগেই মামলা রুজু করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে মেয়র বলেন, বেআইনি নির্মাণের জন্যই এই ঘটনা। বাড়ি তৈরির আগে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। আর গাড়ি লিফট করার যন্ত্র নিয়ে বাড়ি লিফটিং করার হচ্ছিল বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
ফিরহাদের কথায়, যে সংস্থা বাড়ি লিফটিংয়ের কাজ করছিল তাঁরা ভেবেছিল হরিয়ানার মতো বাংলার মাটিও শক্ত হবে। কিন্তু এখানকার মাটি পাথুরে নয়, নরম। তাই অনেক রাস্তা জল জমার ফলে নীচু হয়ে যায়। গর্তেও তাড়াতাড়ি জল জমে যায়। প্রমোটার এবং ওই সংস্থার কর্মীদের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে।
কেন এমন ঘটনা ঘটল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্থানীয় বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার সিপিএম আমলের ওপর দোষ চাপিয়েছিলেন। ফিরহাদের বক্তব্যও একই ছিল। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘সিপিএম আমলের পাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’ যদিও এই আবাসনের বাসিন্দাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বাড়ি ভাঙা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, যারা সর্বস্ব হারালেন তাঁদের পাশে থাকবে কলকাতা পুরসভা। সবরকম সহায়তা করা হবে।
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। নেতাজি নগর থানায় যে ৭টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে, তার মধ্যে ৪টি কেএমসি অ্যাক্ট এবং তিনটি মামলা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী করা হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১০-১২ বছর আগে জলাভূমি ভরাট করে বেআইনি ভাবে ওই বহুতল নির্মাণ করা হয়েছিল। চারতলা বাড়ি নির্মাণের অনুমোদনও ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বাড়ি তোলার জন্য ‘নায়াগ্রা লিফটিং’ নামে একটি সংস্থার সঙ্গে ডিল করেছিলেন অভিযুক্ত প্রোমোটার। সেই প্রোমোটারই নাকি গাড়ি তোলার যন্ত্রাংশ দিয়ে বাড়ি তুলছিলেন।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বুঝিয়েছিলেন লিফটিং আদতে কীভাবে সম্ভব? আর সেটা করার ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ দিয়েছিলেন। রাস্তায় যদি গাড়ি খারাপ হয়ে যায়, চার চাকার গাড়ি। তখন গাড়ির পিছনে যে স্টেপনি থাকে, যে চাকাটা খারাপ হয়েছে, সেটা খোলার জন্য আলাদা একটা হাইড্রোলিক জ্যাক থাকে।
সেটা দিয়ে যে চাকাটা খারাপ হয়েছে, তাকে তোলা হয়। তারপর খুলে ভাল চাকা লাগিয়ে ভালো করে টাইট করে হাইড্রোলিক জ্যাকটাকে খুলে নেওয়া হয়। বাড়ির তোলার ক্ষেত্রে এই যন্ত্রাংশ আরও উন্নতর ও ভারবহনকারী। কিন্তু প্রোমোটার যে সংস্থাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন, তাঁর কর্মীরা যে সত্যি সত্যি গাড়ি তোলার যন্ত্রাংশ দিয়েই বাড়ি তুলছিলেন, তা ভেবেই স্তম্ভিত পুরকর্তা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়াররা।