কলকাতা :পুজো পর্ব মিটলেও শহরের আকাশে বাতাসে এখনও উৎসবের মেজাজ ৷ আর তো দিনদুয়েক ৷ তারপরেই বড়দিন ৷ সেই উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে সেজে উঠেছে শহর । আলোকজ্জ্বল পার্কস্ট্রিট ৷ইতিমধ্যেই পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে (Allen Park) বড়দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
অর্থাৎ এবছর ১৯ ডিসেম্বর থেকেই শহরে শুরু হয়েছে বড় দিনের উৎসব (Christmas Festival)। ক্রিসমাস কার্নিভাল চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ডিসেম্বরের শহরে ঝলমলে আলোয় সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট (Park Street)। কলকাতার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রতি বছরই অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসব আয়োজিত হয়। এই বছর অনুষ্ঠানে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খাবার এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দোকানে সারি সারি সাজানো সান্তা ক্লজ, ক্রিস্টমাস ট্রি থেকে সান্তা ক্লজ টুপি ৷ মানুষের জিনিস কেনার ভিড়ে মুখ ঢেকেছে ব্যবসায়ীদের ৷
কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ চিত্রটা একই ৷ শহরের বিভিন্ন জায়গায় বড়দিন উপলক্ষ্যে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা । বহু ঐতিহ্যবাহী সাজের দোকানও এখন নানা রঙে ও নানা আকারে ক্রিস্টমাস ট্রিতে সজ্জিত। কোনটা হলুদ আলোয়, আবার কোনটা সাদা আলোয় আলোকিত । আছে সান্তা ক্লজের বড় বড় পুতুল। সান্তা ক্লজের গিফট বক্স, চেন, বেল, স্টার আরও কত কী৷ নিউমার্কেট থেকে গড়িয়াহাট দোকানে গেলেই মিলবে পছন্দসই সাজানোর রকমারি জিনিস ।
বিক্রেতারা জানান, আলো সমেত ছোট ক্রিস্টমাস ট্রি’র দাম 350 থেকে 550 টাকা । মাঝারি আলো দেওয়া ক্রিস্টমাস ট্রি’র দাম 1500 থেকে 3000 টাকা । বড় আলো দেওয়া ক্রিস্টমাস ট্রি’র দাম 3000 থেক 5000 টাকা । সান্তা পুতুল তিন ফুট- পাঁচ ফুটের দাম 2500 টাকা থেকে 4000 টাকা । ঘর সাজানোর চেন 50-100 টাকা ।
পার্ক স্ট্রিট হল বাঙালির হাতের কাছের ‘লন্ডন’। সাতসকালে ফ্লুরিজ়ের সাহেবি কেতায় সাজিয়ে দেওয়া প্রাতরাশের থালা সেই সাহেবিয়ানার অঙ্গ। বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের দোকান থেকে শৌখিন বাক্সে মোড়া কেক-কুকিজ়-পেস্ট্রি কিনেও ‘বাজেট ফ্রেন্ডলি’ সাহেবিয়ানার স্বাদ নেয় বাঙালি। বাঙালির সেই আবেগে গা ভাসায় পার্ক স্ট্রিটের বহু রেস্তরাঁও।
বড়দিনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই রেস্তরাঁয় রেস্তরাঁয় চলে ‘কেক মিক্সিং’ পর্ব। কাজুবাদাম, কিশমিশ, চেরি, আখরোট, খেজুর, পেঠা-র পাহাড়ে ধুলোঝড় তোলে দারচিনি আর শুকনো আদার মিহি গুঁড়ো। সঙ্গে কোথাও মেশে ফলের রস, কোথাও ওয়াইন। ছোট-বড়-মাঝারি— সব বয়সের হাত কাগজের দস্তানা পরে ডুব দেয় সেই শুকনো ফলের ‘পাহাড়’কে আগাপাশতলা ঘেঁটে দিতে। শেষে সেই ‘পাহাড়ের’ মণ্ড দিয়ে তৈরি হয় ক্রিসমাস কেক। যে কেক কিনতে বড়দিনের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই লাইনে দাঁড়ান মানুষ।
ক্রিসমাস এ শহরের মূল উৎসব না হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ওই উৎসবকে সুন্দর করে তোলার চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখে না। আলো দিয়ে সাজানো থেকে শুরু করে আলাদা করে ট্র্যাফিক সামলানোর ব্যবস্থা। অ্যালেন পার্কে সঙ্গীতানুষ্ঠান চলবে সেই সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ বড়দিনের রাতে পার্ক স্ট্রিট ধরে সেইভিড়ে পা মেলাবেন । তারই প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে । আর কোথাও এমন দৃশ্যের দেখা মেলেনা। আর এখানেই কলকাতা বিশ্বের অন্য সব শহরের থেকে আলাদা । বাঙালির ‘লন্ডন’ বলেই পরিচিত ।