পেট্রাপোল : বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্তমুক্তির দাবিতে এবং সেই দেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ সোমবার ভারত-বাংলাদেশ পেট্রাপোল সীমান্তে প্রতিবাদ সভা করতে আসছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ইতিমধ্যেই পেট্রাপোল সীমান্তের অবস্থায়ী মঞ্চের সামনে মউপস্থিত হয়েছেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ।
উপস্থিত থাকার কথা বিজেপির আরও বেশ কিছু বিধায়ক এবং সাধু, গোসাঁইদের। তবে এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্য কতটা স্বাভাবিক থাকবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যেই।
বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে যে, এই প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে সনাতনী ঐক্য পরিষদ। এ দিন সভাস্থলে সাত সকালেই প্রস্তুতি দেখতে আসেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ।
অশোক বলেন যে, ‘‘সভায় বিজেপির কোনও পতাকা, ব্যানার থাকবে না। সভা হচ্ছে সনাতনী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে।’’ এই সভার ফলে দুই দেশের মধ্যেকার যাতায়াত এবং বাণিজ্য ব্যাহত হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন করা হলে অশোক অবশ্য স্পষ্ট কিছু জানাননি। তিনি শুধু বলেন, “যা হবে, তা চোখের সামনে দেখতে পারবেন।”
তবে বিজেপি সূত্রেও জানা গিয়েছে, আজ পেট্রাপোল সীমান্ত অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকছে।
এ দিন সকালে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন মছলন্দপুরের বাসিন্দা মতুয়া ভক্ত চৈতন্য দাস । তিনি গিয়েছিলেন বাংলাদেশের তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। চৈতন্য বলেন, “ আরও কয়েক দিন থাকার কথা ছিল সেদেশে। কিন্তু জীবনের আশঙ্কায় দ্রুত ফিরে আসতে বাধ্য হলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয়দের এখন ওই দেশে দেখলেই গালিগালাজ করা হচ্ছে।’’
এ দিন এ দেশে এসেছেন নড়াইলের বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আমরা দেশে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আছি। তবে জন্মভূমি ছেড়ে তো আর ভারতে চলে আসতে পারি না। ওই দেশে আমাদের জন্ম। জমিজমা, ভিটে বাড়ি সব আছে। তাই লড়াই করেই বাঁচতে হবে।’’
বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না দেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা প্রাক্তন ভারতীয় সৈনিক সমরেন্দ্র কুমার মন্ডল। বয়সের ভারে বার্ধক্য চেপে ধরলেও ক্ষোভে ফুঁসছেন তিনি।
বাংলারই তো অংশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাই এক ডাকে দৌড়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে লড়িয়ে দিয়েছিলেন জান-প্রাণ। সেই লড়াই, ত্যাগেরই প্রতিদান এটা? বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি হিংসা-অত্যাচার, ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা মেনে নিতে পারছেন না মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা প্রাক্তন ভারতীয় সৈনিক।
বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না দেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা প্রাক্তন ভারতীয় সৈনিক সমরেন্দ্র কুমার মন্ডল। বয়সের ভারে বার্ধক্য চেপে ধরলেও ক্ষোভে ফুঁসছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন,মহম্মদ ইউনূস কী করছেন? প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের শোচনীয় অবস্থা নিয়েও।
কালনা শহরের মিশন এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন ভারতীয় সৈনিক সমরেন্দ্র কুমার মন্ডল (৭২)। বংশ পরম্পরায় তিনি খ্রিস্টান। যখন বয়স ২২ বছর, ভারতীয় সেনায় যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনা হিসাবে মিশন ক্যাকটাস লিলিতে অংশ গ্রহণ করেন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডে সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মনে করেই ক্ষোভে ফুঁসছেন সমরেন্দ্র কুমার। ওপার বাংলায় জাতীয় পতাকা অবমাননার ছবি দেখে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর চোখে এসেছে জল।
ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, “যে দেশটাকে ভারতীয় সৈনিকরা জীবন দিয়ে স্বাধীন করেছে, সেই দেশ আজ ভারতের সাহায্যের কথা ভুলে গেল। কৃতজ্ঞতার বদলে জঘন্য থেকে জঘন্যতম কাজ করছে এরা। হিংসা, জঘন্য, নোংরা- এগুলো বললেও হয়তো কম হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া দেশের দায়িত্ব। আমরা জান দিয়ে, জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি, ওরা সেটা ভুলে গেল?”