কলকাতা: নারীর অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে আরেক নারীর উপর হেনস্তা! এটাই কী রাত দখল ?
বুধবার শ্যামবাজারে যখন রাত দখলের লড়াইয়ে আন্দোলনকারীদের হাতে হেনস্তার শিকার হলেন ঋতুপর্ণা, তখন কী একটিবারও কলকাতাবাসীদের মনে এই প্রশ্ন জাগল না? গোটা শহরের দিকে এমনই প্রশ্ন ছুড়ে দিল টলিপাড়া। যে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে আট থেকে আশি, সেই প্রতিবাদে শামিল হতে গিয়ে এই বাংলারই মেয়ে, এই বাংলারই নায়িকা ঋতুপর্ণা হেনস্তার শিকার! শুধু তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানই নয়, রীতিমতো অসম্মানিত করা হল তাঁকে। অভিনেত্রীর গাড়ির উপরও চড়াও হল বেশ কিছু আন্দোলনকারী। একদিকে যখন তিলোত্তমার প্রতিবাদে গোটা শহরে অকাল দীপাবলি। তখন শ্যামবাজারে আরেক নারীর অসম্মান! আমরা কি প্রতিবাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছি?
এমনই প্রশ্ন তুলছে সুদীপ্তা চক্রবর্তী, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা জীতু কমল, অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, রা। সোশাল মিডিয়ায় গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করছেন টলিপাড়ার একাংশ।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হতে বুধবার রাতে শ্যামবাজার গেছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কিন্তু তাঁকে ঘিরে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। এমনকী গাড়ির ভিতর বসে থাকাকালীনও তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ! ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরই সহকর্মী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, ”কী করে পারলে তোমরা?”
শ্যামবাজারে পাঁচ মাথার মোড়ে জনতার ভিড়ে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তবে তাঁকে প্রতিবাদে সামিলই হতে দেয়নি বিক্ষোভকারীরা। অভিনেত্রী-সেলিব্রিটি জনতার অরাজনৈতিক এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছেন শুনেই মানুষের ক্ষোভ বেড়ে যায়। ঋতুপর্ণার গাড়ি ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। তাঁর গাড়ির কাচেও মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার নিন্দা করে বড় পোস্ট করেছেন অন্য এক অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
অভিনেত্রী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে লিখেছেন, ”আপনারা কী ভুলে গেছেন যে নারীদের রাত দখলের লড়াইয়েই সামিল হয়েছিলেন? মহিলাদের সম্মান, অধিকার রক্ষার দাবিতে আপনারা মিছিলে সামিল হয়েছিলেন সেটাও ভুলে গেছিলেন?
কীভাবে এটা করতে পারলেন?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যা হয়েছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করি।” আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এর আগে শাঁক বাজিয়ে ট্রোল হতে হয়েছিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। সেই প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সুদীপ্তা। বলেন, ”তাঁর একটি ভুয়ো ভিডিও দেখে ঘৃণা উগরে দিলেন। তাঁকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিলেন। তিনি তাও মেনে নিয়ে এলাকা ছেড়ে দিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি যখন গাড়িতে বসে রয়েছেন তখন হামলা চালালেন। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি!”
অভিনেত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ কেন? উপস্থিত আমজনতার জানিয়েছিল, “উনি ভাল অভিনেত্রী। সে জন্য একসময় ওনার অভিনয় দেখেছি, তার প্রশংসাও করেছি। কিন্তু মানুষ হিসেবে এরা সুবিধেবাদী। তাই সাধারণের এই কর্মসূচিতে সুবিধেবাদীদের কোনও স্থান নেই।” অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে হাওয়াই চটিও দেখায় জনতা।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন, ”ঋতুপর্ণাকে বিনা কারণে এই অপমান করা আমি সমর্থন করি না। করব না। এই নাকি নারী সম্মান। নারী সুরক্ষার লড়াই?” দেবলীনা দত্ত লিখলেন, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাই শারীরিক আক্রমণ করলেন ঋতুদিকে। দেবলীনা সঙ্গে আরও লিখলেন, ”যাঁরা ঋতুপর্ণাকে বাঁচাতে গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একজনের সিটি স্কান হবে। আর আরেকজন গুরুতর আহত! আমি প্রত্যক্ষদর্শী।”
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় লিখলেন, ”ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সবাই আন্দোলনে সামিল হতে পারেন। কেউ কাউকে আটকাতে পারেন না।”
জীতু কমল লিখলেন, ”এটা ঠিক হচ্ছে না। দয়া করে এগুলো করে অতি-উৎসাহ দেখাবেন না।”
বুধবার শ্যামবাজারের পাঁচমাথা মোড়ে সেই ভিডিও দেখুন
https://youtu.be/IQQlfy3UTY8?si=dj4PXSe5KMZ0y7FV
উল্লেখ্য, বুধবার সন্ধে থেকে শ্যামবাজারের পাঁচমাথা মোড়ে আন্দোলনে শামিল হন অগণিত মানুষ। তাতে অংশ নেন তারকারাও। প্রায় মধ্যরাতে সেখানে পৌঁছন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সেখানে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুবিচারের দাবিতেই সুর চড়িয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকা তেতে ওঠে। অভিনেত্রীকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’, ‘ধিক্কার’ স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। কোনওক্রমে গাড়িতে গিয়ে ওঠেন অভিনেত্রী। তাতেও পরিস্থিতি সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। গাড়ি ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। অভিনেত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে বোতল ছোড়া হয়। কোনওক্রমে এলাকা ছাড়েন ঋতুপর্ণা।