দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশে কার্ফু জারি করল সরকার। সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী চলমান আন্দোলনের মোকাবিলায় এবার গোটা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আন্দোলনকারীরা দেশ জুড়ে ট্রেন অবরোধের ডাক দিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রশাসনের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দেশের মধ্যে যাতায়াতে লাগাম দিতে চাইছে সরকার। সরকারের নির্দেশে গোটা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার এমন পদক্ষেপ স্মরণকালের মধ্যে নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট কার্যত বন্ধ। সীমিত সময়ের জন্য কোথাও কোথাও পরিষেবা ফেরানো হচ্ছে। অনিয়মিত মোবাইল সার্ভিসও। আন্দোলনে রাশ টানতে শুক্রবার সকালে সরকার সারা দেশে জমায়েত, মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাতে অবশ্য লক্ষ্যপূরণ হয়নি। দিনভর ঢাকা-সহ দেশের বহু শহর অশান্ত ছিল। আন্দোলনকারীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে। কার্ফু ও সেনা মোতায়েনের খবর বিবিসি বাংলা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, দেশের চলতি অস্থির পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পেন ও ব্রাজিল সফর নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। রবিবার থেকে চারদিনের জন্য তাঁর ওই দুই দেশ সফরের কথা অনেক আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সফর নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করতে ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রক বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে দেয়। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সরকারি মহল নীরব।
যদিও আওয়ামী লিগ সূত্রে খবর, দলনেত্রী হাসিনা এই ব্যাপারে পার্টির প্রথমসারির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনও কোনও নেতার মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল হলে প্রচার হবে সরকার ভয় পেয়েছে। আবার ভিন্ন মতও আছে। দেশ শুধু আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ তাই-ই নয়, সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা কার্যত অচল। সভা-সমিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বিদেশে গেলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে।
শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার থেকে সরকারিভাবে বিরোধী দল বিএনপি কোটা আন্দোলনের পক্ষে পথে নেমেছে। যদিও বিনপি ও জামাত গোড়া থেকেই আন্দোলনরত ছাত্রদের চালিত করে যাচ্ছে বলে আওয়ামী লিগের অভিযোগ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লিগ ও সহযোগী দল মিলিয়ে ১৪ জোটের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। তাঁদের কাছে তিনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে বন্ধু দলের নেতাদের সামনে তা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি বিএনপি-জামাত যোগের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আদালতের পাশাপাশি পরিস্থিতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কথাও আলোচনায় আসে।
পূর্ব ঘোষণা মতো হাসিনার ২১ জুলাই রবিরার বিদেশ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টে কোটা মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা। চারদিন আগে জাতীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কোটা আন্দোলনকারীদের আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষার আর্জি জানান হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর দেশের বাইরে থাকা ঠিক হবে কিনা সেই ব্যাপারে নানা মহলের মতামত নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সফর বাতিল কিংবা বহাল, দুই ব্যাপারেই পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো মত আছে। সপ্তাহ দুই আগে কোটা আন্দোলন চলাকালেই চিন সফরে গিয়েছিলেন হাসিনা। বেজিং থেকে একদিন আগেই দেশে ফিরে আসেন। তখন প্রচার হয়ে যায়, কোটা আন্দোলনের চাপে পরে সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। যদিও হাসিনা জানান, অসুস্থ মেয়েকে সময় দিতেই তিনি বেজিংয়ের হোটেলে রাত না কাটিয়ে কয়েক ঘণ্টা আগে দেশে ফিরে আসেন। এখন বিদেশে দেলে রটিয়ে দেওয়া হতে পারে তিনি ভয়ে দেশ ছেড়েছেন। তাতে আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে যেতে পারে, মনে করছে আওয়ামী লিগ ও সরকারের আর এক অংশ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সে দেশে আন্দোলনের জেরে সংঘাতের বলি ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। শুক্রবার আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। তাঁদের মধ্য দু’জনের পরিচয় মিলেছে। তৃতীয় জনের পরিচয় জানা যায়নি। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। অন্য দিকে, সে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে সংবাদ সংস্থা এএফপি দাবি করেছে, বাংলাদেশে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সরকার এবং পড়ুয়াদের সংঘাতের জেরে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।