দেশের সময় : ভারতের শীর্ষ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ‘হুইসপার’ এবার দুই বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত তারকা, শ্রেয়া ঘোষাল ও সুনিধি চৌহানের কণ্ঠে প্রকাশ করল ভারতের প্রথম ‘পিরিয়ড সং’। অর্থাৎ, ঋতু বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এক মজার গান। যার প্রথম ও শেষ কথা, ‘পিরিয়ড মানেই তুমি সুস্থ আছো।’
আজও বহু গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব বা ‘পিরিয়ড’ নিয়ে ছুতমার্গ দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে না পারা, গোপন রাখা, সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যেতে না পারা, ঋতুজনিত সমস্যার সামাজিক দিকটি সম্ভবত চিকিৎসাবিদ্যার চাইতেও গুরুতর।
অথচ যত দিন যাচ্ছে, তত ঋতুমতী হওয়ার বয়স ক্রমশ সামনে এগিয়ে আসছে। এককালে, উনিশ শতকে মেয়েরা মোটের ওপর কৈশোরে পৌঁছে ঋতুমতী হত। গড় বয়স ছিল ১৭। এখন সেটা নেমে এসেছে গড়ে ১২ বছরে। অথচ ২০১৫-১৬ সালের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে) বলছে, ভারতে এখনও মাত্র ৩৬ শতাংশ মহিলা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন।
উদ্বেগের মাঝেও অতএব যে কাজটা নাগাড়ে চালিয়ে যাওয়া দরকার, তা হল সচেতনতার প্রসার। আর এই কাজেই এবার অভিনব উদ্যোগ নিল দেশের অন্যতম শীর্ষ স্যানিটারি ন্যাপকিন নির্মাতা ব্র্যান্ড ‘হুইসপার’। ভারতের দুই বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত তারকা, শ্রেয়া ঘোষাল ও সুনিধি চৌহানের কণ্ঠে তারা প্রকাশ করল ভারতের প্রথম ‘পিরিয়ড সং’। অর্থাৎ, ঋতু বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এক মজার গান। যার প্রথম ও শেষ কথা, ‘পিরিয়ড মানেই তুমি সুস্থ আছো।’
অভিনব কেন? গানটা বানানো হয়েছে একেবারে খুদে-খুদে শিশু ও বালক-বালিকাদের নিয়ে। অর্থাৎ, আট বছরের বাচ্চাদের মত করে। কারণ? এখন মাত্র আট বছর বয়স থেকেও মেয়েদের ঋতু শুরু হয়ে যাচ্ছে।
শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে সেই গানের ভিডিও:
নিজের প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারেন না অনেকেই। বস্তুত, আজও শুধু ভারত বলে নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তে কন্যাসন্তানের প্রথম ঋতুমতী হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে হয় দেখা যায় আনন্দের উদযাপন, নয়ত দেখা যায় ভয় বা আতঙ্ক। এমনিতেই রক্ত বিষয়টি অনেকের কাছে আতঙ্কের উদ্রেক করে। একেবারে ছোট্ট বয়সে প্রথম সেই দৃশ্যকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারায় অস্বস্তিতে পড়ে অনেক খুদে। অনেকেই ভাবে, তারা হয়ত ভয়াবহ কোনও অসুখে আক্রান্ত হয়েছে, এইবার সব শেষ হয়ে গেল। তাই শ্রেয়া ঘোষাল ও সুনিধি চৌহান একদল খুদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলছেন, রক্তের মত করেই সেটি দেহের বাইরে আসে, কিন্তু ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই এতে!
আজও অনেক মেয়ের ঋতু নিয়ে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা নেই, জানাচ্ছে খোদ ইউনেস্কো। তাদের সমীক্ষা বলছে, মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশে আজও বিভিন্ন স্কুলে পরিশ্রুত জল ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই, যা ঋতুকালীন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বারবার তারা বলেছে, প্রথম পিরিয়ডের আগেই শিশুকন্যাকে এবং তার পাশাপাশি, পুরুষ সদস্যকেও এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যে কারণে খুব ভেবেচিন্তে এই গানের জন্য ‘হুইসপার’ বেছে নিয়েছে আট বছরের বা তার বেশি বয়সের খুদে শিশুদের। ২০১৪ সালের একটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রতি বছর কেবলমাত্র ঋতুকালীন অবস্থা মোকাবিলার পরিকাঠামো না থাকার জন্য প্রায় আড়াই কোটি (২৩ মিলিয়ন) মেয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। যারা স্কুল ছাড়ে না, তাদেরও পিরিয়ডের জন্য অন্তত ৫ দিন করে স্কুল কামাই করতে হয়। যার প্রভাব এসে পড়ে লেখাপড়ায়, খামতি থেকে যায় শেখার।
সুনিধি চৌহানের কণ্ঠে সেই গানের ভিডিও:
শ্রেয়া ও সুনিধি, দু’জনকে দিয়েই গানটি গাইয়ে দু’টি ভিডিও প্রকাশ করেছে ‘হুইসপার’। যেখানে শ্রেয়া রয়েছেন ক্লাসের বেঞ্চির সামনে, সুনিধি রয়েছেন খেলাঘরের মত খোলা জায়গায়। দুই গানেই রয়েছে একই কথা, আট বছরেও এটি হওয়া কোনও বড় ব্যাপার নয়। তবে শ্রেয়ার ভিডিওটি আরও একটি কারণে বেশ মজার। গানের শেষে ‘পিরিয়ডস কা মতলব হেলদি হ্যায় আপ’ কথাটি ছয়টি ভাষায় আলাদা আলাদা করে গেয়েছেন শ্রেয়া। যার মধ্যে রয়েছে তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং বাংলা। মোট কথা, প্রতিবেদন পড়তে পড়তেও এটাই খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু! ‘পিরিয়ড মানে তুমি সুস্থ আছো।’