দেশের সময়: কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ। আর প্রত্যাশিতভাবেই সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শনি অথবা রবিবার শপথ গ্রহণ মোদীর। ইতিমধ্যেই এনডিএ শরিকদের নিয়ে প্রাথমিক বৈঠক সেরে ফেলেছেন মোদী, অমিত শাহরা। কিন্তু সেই বৈঠকে মন্ত্রক নিয়ে রীতিমতো দর কষাকষির আভাস মিলেছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। সরকার গড়তে তাদের নির্ভর করতে হবে জোটের উপর। বিশেষ করে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমার এনডিএ সরকারের প্রধান দুই খুঁটি হতে চলেছেন।তাঁরা একটু নড়বড়ে হলেই ভেঙে পড়বে সরকার।
ফলে তাঁদের এখন যে মোদী তোয়াজ করে চলবেন তা ভালোমতোই জেনে গিয়েছেন চন্দ্রবাবু ও নীতীশ কুমার। আর এই পরিস্থিতিকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা। নীতীশ কুমার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চায় তাঁর। তবে দরাদরি করেও যদি শেষ পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক না মেলে তবে তিনি কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ও রেলমন্ত্রকের দাবি থেকে সরবেন না।
অন্যদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রক চাই তাঁর। সেইসঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশকে দিতে হবে স্পেশাল স্ট্যাটাস। অন্যতম বড় দুই শরিকের এই আবদার রাখতে হলে বিজেপিকে অনেকটাই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
সেক্ষেত্রে বিজেপির হাত থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলি জোট শরিকদের হাতে চলে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার জ্বালা যে কত বড় তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মোদী, শাহরা। এই পরিস্থিতিতে আপাতত বিরোধী বেঞ্চে বসে সুযোগের অপেক্ষায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ডিয়া জোট।
বুধবার রাতে মল্লিকার্জুন খারগের বাড়িতে ইন্ডিয়া জোটের যে বৈঠক হয়েছে তাতে ঠিক হয়েছে যেহেতু সরকার গড়ার মতো সংখ্যা তাদের হাতে নেই, তাই আপাতত তারা সরকার গড়ার জন্য ঝাঁপাবে না। বরং পরিস্থিতির উপর নজর রাখবে। এনডিএ জোট শরিকরা খুশি না অখুশি সেটা দেখেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে ইন্ডিয়া। একইসঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে এনডিএ সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ বজায় রেখে চলবে বিরোধী জোট। পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোট যাতে কোনভাবেই ভেঙে না যায় চালানো হবে সেই চেষ্টাও।
এদিকে বঙ্গ বিজেপির ফলাফলে ব্যাপক ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে অমিত শাহ ও নাড্ডা চটেছেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের উপর। অভিযোগ, ভোটের আগে তাঁরা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল সাংগঠনিক রিপোর্ট পাঠিয়েছেন আর সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এ রাজ্যে প্রচারে এসে অমিত শাহ বারবার বলেছেন বাংলা থেকে অন্তত ৩৫টি আসনে জিতবে বিজেপি। কিন্তু তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি বিজেপি।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার থেকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতো হেভিওয়েটকে বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, বঙ্গ বিজেপির ভুল রিপোর্ট দেওয়ার কারণেই বাংলার মানুষের কাছে নাক কাটা গেল তাদের। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপিতে যারা বিভিন্ন পদে রয়েছেন, তাঁদের সেই পদ কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলেও দিল্লি সূত্রের খবর।
একইসঙ্গে খারাপ ফলের মাশুল গুনতে হতে পারে বঙ্গ বিজেপিকে। এ রাজ্য থেকে যে ১২ জন বিজেপি সাংসদ জিতেছেন তাঁদের কাউকেই এবার মন্ত্রী না করা হতে পারে। কিংবা মন্ত্রী করা হলে এ রাজ্য থেকে একমাত্র শিকে ছিঁড়তে পারে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার। আর খুব বেশি হলে মন্ত্রী হতে পারেন শান্তনু ঠাকুর।
২০১৪ সালে এরাজ্য থেকে মোদী মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন দুজন। ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় চারজন। এবার যা ফল হয়েছে তাতে যে মন্ত্রীর সংখ্যা বাংলা থেকে কমবে, কোন সন্দেহ নেই। এদিকে বেশ কয়েকটি আসনে খুব কম মার্জিনে হারতে হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীদের। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতার চেয়েও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব সামনে এসেছে। দলের কর্মীরাই তাঁকে হারিয়ে দিয়েছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। একই ছবি উত্তরবঙ্গের আরো কয়েকটি আসনের ক্ষেত্রে।
দক্ষিণবঙ্গে বিশেষ করে মেদিনীপুরে তৃণমূলের অন্দরেই গদ্দারদের জন্য প্রার্থীদের হারতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী শনিবার বিকেলে কালীঘাটের বাসভবনে দলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে গিয়ে কোন বিষয়গুলিকে জোর দিতে হবে তারই প্রাথমিক পাঠ দেবেন নেত্রী। পাশাপাশি বিভিন্ন আসনের ফলাফল নিয়েও বিশ্লেষণ হবে সেদিন।
ইতিমধ্যেই যে সমস্ত আসন থেকে সাবোতাজের খবর আসতে শুরু করেছে, সেই কেন্দ্রগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে তৃণমূলের হাইকমান্ড। মোদী বিরোধিতায় যখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অলআউট ঝাঁপাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় যারা তৃণমূলের অন্দরে থেকে ভোট ময়দানে তৃণমূলের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জোড়াফুলের হাইকমান্ড সূত্রের খবর।