বাঙালি রসনাপ্রিয়৷ রসাস্বাদনে তার উদ্ভাবনীর শেষ নেই৷ আবার বাঙালি রাজনীতিপ্রিয়, তর্কপ্রিয়ও৷ ভাবছেন রসনার সঙ্গে রাজনীতির কী সম্পর্ক? আছে,আছে৷ ভোটের মরশুমে চায়ের টেবিলে তর্কবিতর্কের প্রবল ঝড়ঝাপটা সামলে দিতে পারে একমাত্র মিষ্টি৷ তাও আবার তা যদি হয় পছন্দের দলের৷ অশোকনগরের এক নামী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক চিহ্ন দিয়ে তৈরি করেছে ক্ষীরের মিষ্টি৷ আর নির্বাচনী আবহে তা বিকোচ্ছেও দেদার৷
এবারের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফা ভোট প্রচার শেষ হচ্ছে আজ শনিবার বিকালে। কোথাও লড়াই ত্রিমুখী, কোথাও আবার ভোটযুদ্ধ চতুর্মুখী হওয়ার আভাস। ভোটারদের মন জয় করার জন্য ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা প্রচারে ঝড় তুলেছেন বিগত কয়েক দিন ধরেই। গণতন্ত্রের উৎসবে ‘বাজারও’ প্রস্তুত। এখন বিভিন্ন দলীয় প্রতীক আঁকা ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের সন্দেশ বিক্রি হচ্ছে শহরে। মিষ্টির বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে ঘাসফুল, কাস্তে-হাতুড়ি, পদ্ম আঁকা মিষ্টি। বিক্রির পরিসংখ্যান দেখে ‘ভোটের হাওয়া’ কোন দিকে তার আভাস দিলেন দোকানদারেরা।
মিষ্টিগুলোর মধ্যে দিয়ে নির্বাচনে ‘সম্প্রীতির বার্তা’ পৌঁছে দিতে চাইছেন বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা ।
আমরা রয়েছি অশোক নগরের একটি মিষ্টির দোকানে এখানে বিভিন্ন দলীয় প্রতীক আঁকা মিষ্টির এখন রমরমা।
অশোকনগরের এই মিষ্টির দোকানে জোড়াফুল থেকে শুরু করে পদ্ম, হাত এবং কাস্তে-হাতুড়ি-তারা চিহ্নের মিষ্টির জন্যই আলাদা করে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। সেই সব মিষ্টি কেবল রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সমর্থকেরাই নন, সাধারণ মানুষও কিনছেন।
বিক্রেতার কথায়, ‘‘মিষ্টিময় ভোটের বার্তা দিতে এই প্রচেষ্টা।’’ তা কোন প্রতীকের মিষ্টির চাহিদা বেশি? সরাসরি জবাব না দিলেও বিক্রির পরিসংখ্যান ধরে ভোটের হাওয়া বলেছেন ওই বিক্রেতা।
মিষ্টি দোকানের মালিক এবং কারিগরদের কাছ থেকে জানা গেল ভ্যানিলা, ম্যাঙ্গো, অরেঞ্জ এবং পেস্তা ‘ফ্লেভারে’ তৈরি হচ্ছে জোড়াফুলের প্রতীক আঁকা সন্দেশ, কেশর ব্যবহার হচ্ছে গেরুয়া রঙের মিষ্টিতে। তার উপর বিজেপির প্রতীক পদ্ম আঁকা।
স্ট্রবেরি মিষ্টিতে স্থান পেয়েছে সিপিএমের কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। আর সব মিষ্টিই রাখা হয়েছে পাশাপাশি ট্রেতে। দাম পড়ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। জানা যাচ্ছে, অশোক নগরের কেন্দ্রে ক্রেতাদের বেশি পছন্দ জোড়াফুল এবং পদ্ম ফুল আঁকা মিষ্টি। কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীক দেওয়া সন্দেশও বেশি কিনছেন তবে তুলনামূলক ভাবে কম ।
অশোকনগরের মিষ্টি বিক্রেতা কমল সাহা জানান, ‘‘দলীয় প্রতীক আঁকা সন্দেশ তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য হল মিষ্টিময় ভোটের বার্তা দেওয়া। বিক্রির পরিসংখ্যান অনেকটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে স্পষ্ট কিছু বলব না।’’ বিক্রেতাদের বার্তা, ভোট হোক উৎসবমুখর এবং মিষ্টিময়।
যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীকেই পাবেন মিষ্টি৷ তাহলে আর কী? প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিতর্ক করতে গিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেই, তাঁকে নিয়ে যান শিবানী সুইটসে৷ খাইয়ে দিন তাঁর পছন্দের দলের চিহ্ন-সহ একটা গোটা সন্দেশ৷ মনোমালিন্য মিটিয়ে ফের বন্ধুত্বে মাততে এ মিষ্টির জুড়ি নেই৷ তাই ভোট উৎসবের মরশুমে রাজনৈতিক তর্কও চলুক, চলুক মিষ্টি মুখও।