দেশের সময় : বুধের দুপুরে অমিত শাহের কণ্ঠে সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গ। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এদিন তিনি হুগলির মশাটে সভা করেন। এদিনের সভা থেকেই তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর নিশানায় ছিল রাহুল গান্ধীও। ‘পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি একসঙ্গে নিশানা করেন তৃণমূল এবং কংগ্রেসকে।
এদিন নির্বাচনী প্রচারে এসে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যের দুর্নীতি বোঝাতে টেনে আনলেন প্রখ্যাত পরিচালক প্রয়াত সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গ।
মঙ্গলবার শ্রীরামপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী কবির শঙ্কর বোসের সমর্থনে মোশাট বাজারে বিজয় সংকল্প সভা থেকে শাহর কটাক্ষ, সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকলে ‘হীরক রানির দেশে’ সিনেমা বানাতেন।
অমিত শাহের কথায়, ‘‘সত্যজিৎ রায় ‘হীরক রাজার দেশে’ কালজয়ী সিনেমা তৈরি করেছিলেন। সেই সিনেমা খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। উনি বেঁচে থাকলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্ব দেখলে ‘হীরক রাজার দেশে’র পরিবর্তে ‘হীরক রানির দেশে’ বানাতেন! কারণ, মমতা হীরক রানি!’’
এই প্রসঙ্গেই শাহ টেনে এনেছেন রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ-সহ একাধিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ। মঙ্গলবার বনগাঁর সভা থেকেও এ ব্যাপারে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন শ্রীরামপুরের সভা থেকেও বারে বারে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এনে শাহ বলেন, “মোদীর নীতি হল দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া। দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে যেতেই হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। কেউ বাঁচবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করছেন বলে অভিযোগ করে শাহ বলেন, “কাউকে লুকোতে পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আঁচলে লুকিয়ে নিলেও দুর্নীগ্রস্তদের জেলে ঢোকাবই।”
তৃণমূলের স্লোগান মা-মাটি-মানুষকেও কটাক্ষ করেছেন শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বাংলা এখন মৌল-মাদ্রাসা-মাফিয়ার ভূমিতে পরিণত হয়েছে।’’
অনুপ্রবেশের প্রশ্নেও ফের কড়া বার্তা শুনিয়েছেন শাহ। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ করে বলেন, “আমি মমতাদিদি এবং আপনার ভাইপোকে বলে যাচ্ছি, আপনি যত চিৎকারই করুন, সিএএ হবেই।’’
টেনে এনেছেন সন্ত্রাসবাদীদের প্রসঙ্গও। শাহর কথায়, ‘‘কাশ্মীরে এখন আর অশান্তি হয় না। লাখো লাখো মানুষ সেখানে ঘুরতে যান। এটাই মোদীর সাফল্য।” ক্ষমতায় এলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরও পুনরুদ্ধারের কথা শুনিযেছেন শাহ।
শাহের ‘সত্যজিৎদা’ সম্বোধন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা মনে রয়েছে! সেটা একটা ঘটনা মানছি। এরপর বিবেকানন্দের ভিটেতে গিয়ে মাল্যদান করার কথা ছিল অমিত শাহের। কিন্তু, তিনি ‘ছোড়’ বলে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তা বলে বাঙালির আবেগ সত্যজিৎ রায়কে সত্যজিৎদা বলবেন? এটা তো তাঁকে তাচ্ছিল্য করে দেখা। আমাদের এখানে কেউ কি বলেন? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মানিকদা বলতেন। তাঁর সেই অধিকার ছিল। কিন্তু, তা বলে মিটিং থেকে সত্যজিৎদা সম্বোধন? এতো বাংলার কৃতী সন্তানদের তাচ্ছিল্য করে দেখা! অর্মত্য সেনের সঙ্গেও এরা একই কাজ করেছে।’
Mr @AmitShah mentions Satyajit Ray in his speech😂 Amused. But on a serious note, it's been 3 years & not a word yet on 2 questions
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) May 15, 2024
After being rejected in the 2021 elections, why has BJP Union Govt DEPRIVED BENGAL by not releasing:
i) Even Rs 1 for MNREGA
ii) Even Rs 1 for Awas
অপর তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘এরা বাংলার সংস্কৃতিতে সবসময় ভুলুণ্ঠিত করেছে। বাংলার মানুষ এর জবাব দেবে।’ যদিও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার দাবি, ‘দাদা কবে থেকে কটু কথা হল জানি না। দাদা বলার রীতি তো বাংলায় সব থেকে বেশি। অনেক সময় ছোটদেরও দাদা বলেন অনেকেই। সত্যজিৎ রায়ের থেকে সত্যজিৎদা বলাটা অনেক আপন করে নেওয়া বলে আমার মনে হয়। তাই তৃণমূল গোটা বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছে না।’
উল্লেখ্য, এদিন রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, ‘গরম পড়লেই বিদেশে যান সনিয়া গান্ধী রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করতে চান।’ একই সঙ্গে শাহের দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই ছাড়বে ভারত। এদিন শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী কবীর বসুর প্রশংসা করে কল্যাণকে তোপ দাগেন অমিত শাহ।