বনগাঁয় বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার, মৃতদেহ রাস্তায় রেখেই পুলিশ কে ঘিরে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের । এই ঘটনায় তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলল বিজেপি । দেখুন ভিডিও
স্থানীয় সূত্রের জানা গেছে ,উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানার বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায়
মঙ্গলবার সকালে পেট্রাপোল স্থল বন্দর থেকে একটি খালি ট্রাক বনগাঁ শহরে ঢোকার মুখে যশোর রোডের উপরে বিএসএফ ক্যাম্পমোড় এলাকায় পথচারী এক বৃদ্ধাকে সজরে ধাক্কা মাড়লে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর I পুলিশ সূত্রে খবর মৃত ওই বৃদ্ধার নাম সীতা রানী দাস , বনগাঁ থানার শিমুলতলা ৩ নম্বর ওয়ার্ড চামরাকুঠি এলাকার বাসিন্দা ।
এর পরই স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন ঘটনা স্থলে । মৃতদেহ ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা । দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পোঁছাতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা । চলে ভাঙচুর । একই সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তৃণমূল ও বিজেপি নেতা সমর্থকেরা । উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে ।
বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, এখানে পথচারীদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয় বহু মানুষ অকালে মারা গেছেন এখানে । এরপরই তাঁর সংযোজন এই দুর্ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী তৃণমূল। এখানে পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করে তোলাবাজি করছে আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষ ।
এ বিষয়ে আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষ দেশের সময় কে জানান, বিএস এফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় ট্রাক সংক্রান্ত বিষটি দেখে বনগাঁ পুরসভা সেখানে আইএনটিটিইউসি-র কোন কর্মীদের যোগাযোগ নেই। বিষটি সম্পূর্ণভাবে চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ ও বনগাঁ মহকুমাশাসক বলতে পারবেন আমার কিছু জানা নেই ।
এদিকে ঘটনা স্থলে আরও উত্তেজনা বাড়তে থাকে । পুলিশের সামনেই চলতে থাকে রাস্তা অবরোধকারীদের বিক্ষোভ । ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত বৃদ্ধার ছেলে ভগীরথ দাস সহ স্থানীয়দের দাবি বিএস ক্যাম্প মোড় এলাকার অশোক স্তম্ভ সরিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণ করতে হবে ।
এই প্রসঙ্গে যশোহর রোডের সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠও।তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে শহরের মধ্যে যশোহর রোড সম্প্রসারণ হওয়া দরকার। বিষয়টি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বনগাঁর বাসিন্দাদের।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের স্কুলগুলির সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
যশোহর রোড যেন মৃত্যুফাঁদ, সমাধান চান স্থানীয় বাসিন্দারা: সমাধান কোন পথে ?
বনগাঁ শহরে যশোহর রোড দিয়ে যাতায়াত করাটাই এখন আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দে বলেন, গত জানুয়ারী মাসের সম্ভবত ১৮ তারিখ মঙ্গলবার মঙ্গলবারই পেট্রাপোল ছয়ঘড়িয়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। তিনি স্বামীর সঙ্গে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে ফিরছিলেন। স্বামীও গুরুতর চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চোখের সামনে একের পর এক মৃত্য সংবাদ আসছে যশোর রোডের দুর্ঘটনায় । এটা যেন মৃত্যুপুরী হয়ে গেছে ।
পেট্রাপোল সীমান্ত বাণীজ্যের সঙ্গে যুক্ত কাৰ্তিক চক্রবর্তী বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই যশোর রোড। বাংলাদেশের যশোহর পর্যন্ত গিয়েছে এই রাস্তা। এই রাস্তাতেই পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বনগাঁর পেট্রাপোল।
দু’দেশের বাণিজ্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক যাতায়াত এই রোড ধরে। কিন্তু যশোহর রোড একেবারেই অপ্রশস্ত হয়ে রয়েছে। ফলে হাবরা, অশোকনগর-সহ সীমান্ত শহর বনগাঁ শহরে যানজট লেগেই থাকে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রাণও যাচ্ছে।
সম্প্রতি যশোহর রোডে বনগাঁর বিএসএফের ক্যাম্প মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় জয়পুরের বাসিন্দা মা ও ছেলের। দুর্ঘটনার পর কয়েকদিন ট্র্যাফিক পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়েছিল। তারপর যে কী সেই। ফের শুরু হয়ে যায় বেপরোয়া ট্রাকের যাতায়াত। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা এতটাই সরু যে দুটো ট্রাক পাশাপাশি যেতে পারে না। ফলে সামান্য ভুলচুকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের ধারে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন বড় বড় সব গাছ। সেই গাছ কেটে যশোহর রোড সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গাছ কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মানবাধিকার সংগঠন ও পরিবেশপ্রেমীরা। মামলা গড়ায় আদালতে। তারপর থমকেই গিয়েছে যশোহর রোড সম্প্রসারণের কাজ।
এর পাশাপাশি রয়েছে ট্রাকের দাপাদাপি। অপ্রশস্ত যশোহর রোড ধরে কেন সকালের দিকে স্কুলের সময় ট্রাক চলবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। বনগাঁ শহরে যশোহর রোডের উপরেই রয়েছে একাধিক স্কুল। অথচ স্কুলের সময় ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি তেমন থাকে না বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। আর একটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে- ট্রাকের পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে শহরে রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক। যার জেরে যশোহর রোড আরও অপ্রশস্ত হয়ে পড়ছে। যানজট বাড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পর এখন কয়েকদিন কড়াকড়ি থাকবে। তারপর আবার ফিরে আসবে আগের পরিস্থিতি। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান চাইছেন এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সকালের দিকে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার দাবি উঠেছে।
দুর্ঘটনার পর একদিকে যেমন যশোহর রোড সম্প্রসারণের দাবি উঠেছে, তেমনই সকালের দিকে বিশেষ করে স্কুলের সময় ট্রাক চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। যশোহর রোডের সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠও।
এ দিনের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন তুলেছেন দুর্ঘটনায় মৃত বৃদ্ধার ছেলে ভগীরথ দাস, তাঁর কথায় দিনের বেলায় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় পণ্য-বোঝাই ট্রাক চলবে কেন। শহরবাসীর বক্তব্য, এমনিতেই রাস্তাঘাট সংকীর্ণ। টোটো, ভ্যান, অটোর দৌরাত্ম্যে পথ চলা দায়। তার মধ্যে ট্রাকের যাতায়াতে পথেঘাটে আতঙ্কে থাকতে হয়। এ সবের জেরে যানজট তো হয়ই, বাড়ে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যাও। অতীতেও শহরের মধ্যে দিনের বেলায় ট্রাকের ধাক্কায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার।
অতীতে বনগাঁ শহরে দিনের বেলায় ট্রাক দুর্ঘটনার পরে শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। অভিযোগ, সে সব নিয়ম শুধুই খাতায়-কলমে। আদতে কেউ মানে না। কোনও নজরদারিও নেই।
শহরবাসীর অভিযোগ, বনগাঁ আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে। এখানে ডিএসপি ট্রাফিক, ট্রাফিক ওসি রয়েছেন। পরিকাঠামো বেড়েছে। তারপরেও কেন বেআইনি যানবাহন এবং দিনের বেলায় ট্রাক চলবে।
পুরপ্রধান গোপাল শেঠবলেন, ‘দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে শহরের মধ্যে যশোর রোড চওড়া করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্র এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। তা হলে কেন রাস্তা চওড়া হবে না?’
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, সে সব অনেক বড় ব্যাপার। তার আগে দিনের ব্যস্ত সময়ে শহরের পথে ভারী গাড়ি তো আগে নিয়ন্ত্রণ করুক পুরসভা!
বেপরোয়া ট্রাক যেমন রয়েছে, তেমনই অপ্রশস্ত যশোহর রোডকেও দুষছেন স্থানীয়রা।