Shantanu Thakur : শান্তনুকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে পোস্টার পড়ল মতুয়াগড়ে,ওরা ছোবল মারছে বললেন বনগাঁর সাংসদ

0
262

দেশের সময়, বনগাঁ :লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও বঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার কৃষ্ণনগরে সভার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পরেই দিল্লি থেকে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যে বর্তমান সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন।

মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের অনুকূলে রাখতে শান্তনুর উপরেই বিজেপি ফের বাজি রাখল বলে মনে করা হচ্ছে। নাম ঘোষণার পর শান্তনু বলেন, ‘দল আমায় যোগ্য মনে করেছে, তাই প্রার্থী করেছে।’

তারপরেই শান্তনুকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে পোস্টার পড়ল এলাকায়। বুধবার সকালে বনগাঁ স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এবং কল্যাণী লোকালেও পোস্টার দেখা যায়। অনুমান করা হচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে কেউ এগুলি সাঁটিয়েছে। একই পোস্টার লোকাল ট্রেনের কামরায়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে।

পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘তোলাবাজ শান্তনুকে একটি ভোটও নয়। শান্তনু ঠাকুর গত পাঁচ বছরে করেছে কী? চাকরি বিক্রি আর তোলাবাজি ছাড়া আবার কী!’ পোস্টারের নীচে লেখা, ‘প্রচারে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি বাঁচাও কমিটি।’

শান্তনুর প্রার্থী হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘মতুয়াদের উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে কিছুই করেননি শান্তনু। আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করায় মতুয়াদের ক্ষতি করেছে বিজেপি। নির্বাচনে এর জবাব দেবেন মতুয়ারা।’ পাশাপাশি মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর  ইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, মতুয়া মহাসংঘের নামে একটি ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে টাকা জমা করছেন শান্তনু ঠাকুর। এমনকী বনগাঁর সাংসদের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে তোলাবাজিরও অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি সেই টাকার উৎস নিয়েই ইডির তদন্তের দাবি করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন শান্তনু। তাঁর কথায়, ‘‘ ওরা ছোবল মারছে… এই কাজের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত। তৃণমূল রাজনীতিতে এখনও পরিপক্ক হতে পারেনি। প্রার্থী ঘোষণার পরে মমতা ঠাকুর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এ বার আমাকে কালিমালিপ্ত করতে তৃণমূল এই নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শান্তনুর সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জিততে না পেরে তৃণমূল ভেবে পাচ্ছে না, কোনও লাইনে চলা উচিত।’’ দেখুন ভিডিও

শান্তনুর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের কথায়, ‘‘প্রার্থী হিসাবে শান্তনু ঠাকুরের নাম ঘোষণা হতেই তৃণমূল কাঁপছে। আতঙ্ক থেকে এ সব ঘৃণ্য কাজ করছে।’’


তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনাটিকে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল বলে দাবি করেছে। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বিজেপি উপর থেকে নীচ পর্যন্ত আপাদমস্তক গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার একটা দল। শান্তনুকে গত পাঁচ বছর এলাকায় দেখা যায়নি। উন্নয়ন করেননি। বিজেপির লোকজনও তা জানেন। সে কারণেই তাঁরা শান্তনুকে ভোট না দেওয়ার আবেদন করছেন। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় দলের কোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। দলীয় বিধায়ক এবং নেতাদের একাংশের সঙ্গে শান্তনু-দেবদাসদের দূরত্ব বেড়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে এক সঙ্গে সব পক্ষকে কার্যত দেখাই যায় না। দিন কয়েক আগে বিজেপির এক নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, বনগাঁয় বিজেপিকে বাঁচাতে একজোট হতে চাই।

লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ সফরে এসে এর মধ্যেই তিনটি জনসভা করে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর মধ্যে আরামবাগ বাদ দিলে কৃষ্ণনগর এবং বারাসত, দুটোই মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু একটি সভাতেও মতুয়াদের নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা, সম্প্রতি আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি মোদী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বারাসতের কাছারি ময়দানে নারীশক্তি সমাবেশের মঞ্চে মতুয়া শব্দটাও শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রীর গলায়। এ দিনের সভাতেও মতুয়াদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। প্রধানমন্ত্রীর সভা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কাজের কারণ দেখিয়ে হাজির ছিলেন না বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও।

প্রত্যাশিত ভাবেই মোদীর শান্তনুর অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা বেড়েছে। এ দিন শান্তনুর ভাই, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর মোদীর সভায় এলেও মতুয়াদের বিশেষ চোখে পড়েনি। মতুয়াদের কাঁসর, ডঙ্কা, নিশান নিয়ে সভায় আসা ভিড়ের ছিটেফোঁটাও ছিল না কাছারি ময়দানে ।

রাজ্যসভার সংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে কিছু না বলে প্রধানমন্ত্রী অপমান করেছেন মতুয়াদের। ক্ষুব্ধ মতুয়ারা বিজেপির থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে। এর জবাব মতুয়ারা ভোটে দেবেন।’

এ প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য বারাসতের সভায় যেতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী যা ভালো মনে করেছেন, তাই বলেছেন। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সময় হলে নিশ্চয়ই বলবেন।’

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার তাস খেলে বনগাঁয় বাজিমাত করেছিল বিজেপি। প্রয়াত বড়মার বড় নাতি রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা শান্তনু ঠাকুরকে প্রার্থী করে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ইছামতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নাগরিকত্ব আইন পাশ হলেও তা কার্যকর করতে পারেনি কেন্দ্র। সেই ইস্যুতে বেসুরো হয়েছিলেন শান্তনু নিজেও।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্তনুকে বাগে আনলেও নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়ায় বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে মতুয়াদের। গত পঞ্চায়েত এবং পুরসভা নির্বাচনে এর ফসল ঘরে তুলেছিল তৃণমূল। নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়া এবং সম্প্রতি আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে মতুয়াদের একটা বিরাট অংশের।

Previous articleShajahan : সন্দেশখালির শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল সিআইডি
Next articleAbhijit Ganguly Joins BJP : ‘জামাই আদরে’টিম মোদীতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় , দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর লড়াই করব, বিজেপিতে যোগদান করে মন্তব্য অভিজিতের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here