বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পালিত হয় প্রাক মাতৃভাষা দিবস । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো ২১ টি কাগজের নৌকা ইছামতীর বক্ষে ভাসিয়ে দেন পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ-সহ অন্যান্য কাউন্সিলাররা। ইছামতীর উপরে ভাসমান শহিদ বেদীর মঞ্চ থেকে জলে ভাসানো হয় একশো প্রদীপ। বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় শতকন্ঠে গান পরিবেশিত হয়।
পরদিন বুধবার অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি । রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। শহিদ স্মরণে আজ ভারত বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের শূন্য পয়েন্টে ফুলে ফুলে ভরে উঠলো শহীদ মিনারের বেদী।দেখুন ভিডিও
ভাষা মুছে দিল কাঁটাতারের বেড়া। মিলে গেল দুই বাংলা। কারও হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কারও গালে আঁকা অ-আ-ক-খ। দেশভাগের যন্ত্রণা ভুলতে তাঁরা আঁকড়ে ধরলেন মাতৃভাষা বাংলাকে। অমর একুশে উদ্যাপন ঘিরে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠল ভারত-বাংলাদেশের মিলনক্ষেত্র।
মাতৃভাষার জন্য শহিদ হওয়া বীরদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবেগ দখল নিল কণ্ঠের। দুই বাংলার অগণিত মানুষকে সাক্ষী রেখে শিল্পী থেকে কবি, সাহিত্যিক প্রত্যেকেই বললেন, দুই বাংলাই আমাদের দেশ। আমাদের রক্তে, মজ্জায় প্রথীত হয়ে আছে দুই বাংলাই। চলল কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ।
দেশ ভিন্ন। তাই সীমান্তের দু’পাড়ে আলাদা আলাদা মঞ্চ করা হয়েছিল। তাতে কী। ভাষার আবেগের কাছে ধোপে টেকে না নিরাপত্তার কড়াকড়ি। আর তাই সকাল দশটায় গেট খুলতেই এন্ট্রি পাস নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েন দু’পাড়ের মানুষজন।
এদিন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো পুষ্পস্তবক তাঁর হয়ে শহিদ বেদিতে অর্পণ করেন ভারতের পক্ষে বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ । উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী,আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় । সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। ছিলেন ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ, আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষ । সাহিত্যিক অর্পিতা সরকার I রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ,ওপার বাংলার ৮৫ যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ,জনাব নাসির উদ্দিন
মেয়র বেনাপোল পৌরসভা,প্রমুখ ।
দুই দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এই অনুষ্ঠানে। নানা রংয়ের ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড আর ফুল দিয়ে সাজে সাজানো হয় নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা।
তবে এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে খুব বেশি ভাষাপ্রেমীদেরকে দেখা যায় নি। কারণ হিসেবে অনেককেই বলতে শোনা যায় অতিরিক্ত কড়া নিরাপত্তার প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তের দু’ পাড়ের মানুষ সেভাবে মিলিত হতে পারেন নি -ম্যানস ল্যান্ড এলাকায় শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করাও জোটেনি অনেকের ভাগ্যে । তাই এবার তাঁরা মুখ ফিরিয়েছেন এবারের অনুষ্ঠান থেকে । এ কথা জানান এপারের সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা ।
বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান বলেন ,দুই দিকে দুই বাংলা। মাঝে কাঁটাতার। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ, ভাষা এক, তাই আত্মিক টানও একই ভাবে যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসে। সীমান্তের দূরত্ব ঘুচিয়ে ভাষার মাধ্যমে একে অপরকে কাছে টেনে নেন দুই বাংলার মানুষ।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে পালিত প্রাক মাতৃভাষা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো ২১ টি কাগজের নৌকা ইছামতীর বক্ষে ভাসিয়ে দিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ-সহ অন্যান্য কাউন্সিলাররা। ইছামতীর উপরে ভাসমান শহিদ বেদীর মঞ্চ থেকে জলে ভাসানো হয় একশো প্রদীপ। বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় শতকন্ঠে গান পরিবেশিত হয়। দেখুন ভিডিও
সৌজন্য আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। কাঁটাতারে আটকে পড়ে না ভাষা। তাই সীমান্তেই দুই দেশের বাঙালিরা বুধবার মিলিত হলেন ভাষা শহিদদের স্মরণে।
যতই কাঁটাতার দেওয়াল তুলুক। দুই বাংলার আবেগকে কোনও কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না।
যে ভাষাতে মাকে মা বলে ডাকতে পারি, এর চেয়ে বড় সুখ আর কীসে হয়! তাই সেই ভাষাকে রক্ষা করতে এক জোট হয়ে লড়াই চালিয়েছিল বাঙালি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। লক্ষ্য ছিল একটাই, বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই লক্ষ্যপূরণে রক্ত ঝরেছে। খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল। কিন্তু দামাল সন্তানরা তাঁদের লড়াই ছাড়েননি সেদিন। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাঁরা যে জয় নিয়ে এসেছিল সেদিন, সেই জয়ের নাম অমর একুশে। সেই একুশের সকালে এক অন্য আবেগের ইতিহাস গড়ল পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত।