Sankar Adhya: ইডি-র হেফাজতে শঙ্কর আঢ্য, ‘ বনগাঁয় প্রাণহানির আশঙ্কায়’ মূর্তি শিল্পী সিন্টু ভট্টাচার্য! কেন ?

0
408

ফরেক্স কোম্পানি থেকে আইসক্রিমের কারখানা, ইডির নজরে ‘ডাকু’র আট আত্মীয়, ছয় সংস্থা

দেশের সময়, বনগাঁ : পেট্রাপোল সীমান্তে রয়েছে শঙ্কর আঢ্যর মানি এক্সচেঞ্জের অফিস। ২০-৩০ বছর ধরে সেখানে শঙ্কর আঢ্য কারবার চালাচ্ছেন বলে জানাচ্ছে চেক পোস্ট ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই অফিসই এখন পড়ে রয়েছে তালাবন্ধ অবস্থায়। এদিকে শঙ্কর আঢ্যর পাড়ারই শিল্পী তাঁর বিরুদ্ধে আনলেন বিস্ফোরক অভিযোগ। 

এলাকায় ঠিক কতখানি প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল শঙ্কর আঢ্যর?

বনগাঁর শিমূলতলা এলাকার বাসিন্দা সিন্টু ভট্টাচার্য। পেশায় শিল্পী সিন্টু কাজ করেন বিভিন্ন মূর্তি তৈরির। শঙ্কর আঢ্যর বিরুদ্ধে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছেন তিনি। যিনি আবার তৃণমূল কর্মীও।

শিল্পী ও তৃণমূলকর্মী  সিন্টু ভট্টাচার্য বলেন, বছরখানেক আগে একটি সংবাদমাধ্যমের লাইভ অনুষ্ঠানে বলেছিলাম জ্যোতিপ্রিয় উত্তর ২৪ পরগনাকে পুরো নষ্ট করে দিচ্ছে ,বিষয়টি দেখতে বলে অনুরোধ করেছিল। এরপরই জ্যোতিপ্রিয় ও শঙ্কর আঢ্য মিলে থানায় একাধিক কেস করে। বাড়িতে হামলা হয় শঙ্করের নেতৃত্বে। এই মুহূর্তে ‘প্রাণহানির আশঙ্কায়’ রয়েছি । ইডির হাত থেকে ছাড়া পেলেই শঙ্কর ওরফে ডাকু আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে ৷ কারণ ওর অনৈতিকাজ এবং তৃণমূলদলের বিরুদ্ধে ওর সমস্ত বেআইনি কাজে আমি প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি ৷ এবং শুধু শিমুলতলার মানুষ নয় , বনগাঁর সাধারণ মানুষের প্রতি ওর অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়িয়েছিলাম আর এখনও প্রতিবাদ করে চলেছি ৷ তাই আমার ধারণা ইডির হাত থেকে ছাড়া পেলেই আমার জীবনহানি হতে পারে শঙ্করের দ্বারা ৷ ইডির কাছে আমার দাবি এই ধরণের অসামাজিক মানুষকে আইনের পথে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেওয়া হোক ৷ যাতে আর কারও ক্ষতি করতে না পারে ৷ টাকার লোভে প্রয়োজনে দেশও বেচে দিতে পারে এই কুখ্যাত ‘ডাকু ‘ ৷

সিন্টুর বাবা,শিল্পী স্বপন ভট্টাচার্য জানান, তাঁর বাড়ির সামনে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে। যাতে মাঠের রাস্তা ব্যবহার করতে না পারে এই এলাকার মানুষ ৷ পুর প্রধান গোপাল শেঠকে এ বিষয়ে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি ৷ ডাকুর বিরুদ্ধে শুধু শিমুলতলা পাড়া নয় , গোটা বনগাঁবাসী মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে প্রাণহানির ভয়ে ৷ আমার ছেলে সিন্টু প্রতিবাদ করায় তাকে বহু কেস দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে বহুবার এখন আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, এবার ইডির হাত থেকে ছাড়া পেলে ফের আমার পরিবারের উপরে হামলা করবে শঙ্কর ৷ পুলিশ কোন দিনই ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নি ৷ উল্টে আমাদের কে হুমকি দিয়ে গেছে ৷ আমাদের একমাত্র ভরসা এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনিই আমাদের মতো শিল্পীদেরকে বাঁচাবেন বলে মনে করি ৷

বনগাঁর শিমূলতলায় শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শুনশান গোটা বাড়ি। বাড়িতে ২-১ জন সদস্য রয়েছেন বটে,কিন্তু কথা বলতে রাজি হননি কেউই। শঙ্কর আঢ্যর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যর মা-ও অবশ্য এই নিয়ে তেমন কিছু বলতে নারাজ। 

রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। তাঁকে আদালতে পেশ করে বিস্ফোরক দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এক-দু কোটি বা পাঁচশো-হাজার নয়, রেশনে দুর্নীতির অঙ্কটা ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা! এমন কি দুর্নীতির এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইডি! আর এই আবহেই, পেট্রাপোল সীমান্তে শঙ্কর আঢ্যর অফিসে গিয়ে দেখা গেল, বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে শঙ্কর আঢ্যের মানি এক্সচেঞ্জের অফিস। 


 
পেট্রাপোল চেক পোস্ট ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অশোক ঘোষ বলেন, ‘এই অফিস খোলা হয়নি,বাংলাদেশে ভোট চলছে বলে বন্ধ। ২০-৩০ বছর ধরে ব্যবসা করে। ওর ওখান থেকেই অনেক লাইসেন্স আমারা বের করিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ED-র দাবি, ধান-চাল-গম কেনাবেচা নয়, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা কোন পথে, কীভাবে ঘুরিয়ে সাদা করা হবে, সেই পরিকল্পনায় শঙ্কর আঢ্যর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটে শঙ্কর আঢ্যর কারেন্সি লেনদেনের সংস্থা, আঢ্য ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস। ফুল ফ্লেজ মানি চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে এই কোম্পানি। ED-র দাবি, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা দিয়ে তৃণমূল নেতার এই কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে কেনা হয়েছে সোনা, বিদেশি মুদ্রা। হাওয়ালার মাধ্যমে বাইরে টাকা পাঠানো হয়েছে। ED-র দাবি, রেশন দুর্নীতি তদন্তে উঠে আসে শঙ্কর আঢ্যর নাম। তারপরই তার বিভিন্ন আস্তানায় তল্লাশি ও শেষমেষ গ্রেফতার করা হয়। 

ইডি-র তদন্তেশঙ্কর এবং তাঁর আত্মীয়দের সূত্রে ছ’টি সংস্থার নাম উঠে এসেছে ইডির সামনে। তার মধ্যে রয়েছে একটি আইসক্রিমের কারখানাও। শঙ্করের পরিবারের সদস্যদের নামে ওই সংস্থা রয়েছে।

বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে আদালতে হাজির করিয়ে ইডি জানিয়েছে ফরেক্স সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। তাদের দাবি, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। ইডির নজরে রয়েছেন শঙ্করের আত্মীয়েরাও। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর, শঙ্কর ছাড়াও তাঁর আট জন আত্মীয়ের নামে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, যেগুলি টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত।

শঙ্কর এবং তাঁর আত্মীয়দের সূত্রে ছ’টি সংস্থার নাম উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। তার মধ্যে শঙ্করের নামে একটিমাত্র সংস্থা রয়েছে, যার নাম ‘এসআর আঢ্য ফিন্যান্স প্রাইভেট লিমিটেড’। তাঁর স্ত্রীর নামও রয়েছে ওই সংস্থায়। এ ছাড়া শঙ্করের স্ত্রী জ্যোৎস্নার নামে রয়েছে ‘অর্পণ ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে আরও এক সংস্থা। শঙ্করের পুত্র শুভ আঢ্যের নামে সংস্থাটির নাম ‘শঙ্কর ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’। শঙ্করের কন্যার নাম ঋতুপর্ণা আঢ্য। তাঁর নাম রয়েছে ‘অর্পণ ফরেক্স’-এ।

শঙ্করের ভাই মলয় আঢ্যের নামে ফরেক্স সংস্থা ছাড়াও রয়েছে একটি আইসক্রিম কারখানা। যার নাম ‘অঞ্জলি আইসক্রিম প্রাইভেট লিমিটেড’। ওই সংস্থায় নাম রয়েছে মলয়ের স্ত্রী তানিয়া আঢ্যেরও। ইডি যখন বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল, আধিকারিকেরা মলয়ের এই আইসক্রিম কারখানাতেও তল্লাশি চালান।

মলয়ের নামে যে ফরেক্স সংস্থাটি রয়েছে, তার নাম ‘আঢ্য ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’। সেখানে শঙ্করের মা শিবানী আঢ্যও রয়েছেন।

শঙ্করের শ্যালক অমিত ঘোষ। তিনি যুক্ত আছেন ‘শঙ্কর ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সঙ্গে। এ ছাড়া, মলয়ের স্ত্রী তানিয়ার নামে ‘ত্রিনয়নী ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে আরও একটি সংস্থার কথা জানা গিয়েছে।

ইডির দাবি, রেশন ‘দুর্নীতি’র টাকা ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছ থেকে শঙ্করের এই সমস্ত সংস্থায় আসত এবং সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করে ওই টাকা দুবাইতে পাঠানো হত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরাসরি, কখনও আবার বাংলাদেশের মাধ্যমে টাকা দুবাই পৌঁছত। জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির পর শঙ্কর তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগও করেছেন বলে দাবি ইডির। ওই চিঠি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে এসেছে। সেখানে একাধিক নাম রয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা। চিঠির বয়ান বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায়।

ইডি সূত্রে খবর, মলয় এবং শিবানীর ‘আঢ্য ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এই সংস্থা তাই বিশেষ ভাবে ইডির নজরে রয়েছে। এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। আদালতে শঙ্করের ৯০টি ফরেক্স সংস্থার কথা জানিয়েছে ইডি। যদিও তাঁর আইনজীবীর দাবি, শঙ্কর বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার বৈধ ব্যবসা করেন।

গত শুক্রবার সকালে রেশন ‘দুর্নীতি’র সূত্রে বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। প্রায় ১৭ ঘণ্টা চলে তল্লাশি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শঙ্করকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলা হয়। ওই সময়ে বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান শঙ্করের কয়েক জন অনুগামী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা ভিড় খালি করেন। কেউ কেউ সিআরপিএফের লাঠির বাড়িও খেয়েছেন বলে অভিযোগ। ইডির গাড়ির দিকে ছোড়া হয়েছে ইট। এর পর শনিবার শঙ্করকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। তাঁকে ১৪ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Previous articleSheikh Hasina: বাংলাদেশে ‘নৌকা’র বিজয়গতি অব্যাহত, রেকর্ড ভোটে জয়ী হাসিনা
Next articleMamata Banerjee:স্টুডেন্টস উইক সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ্যশ্রী প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here