দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চন্দ্রযান চাঁদে পৌঁছতেই বুধ সন্ধেয় চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণের সময়ে ইসরোর সরাসরি সম্প্রচারে বিক্রম ল্যান্ডারের পাশে অর্ধেক স্ক্রিন জুড়ে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। চন্দ্রযান সফল ভাবে চাঁদে অবতরণ করতেই কাল বিলম্ব না করে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চোখের সামনে এভাবে ইতিহাস তৈরি হওয়া যখন আমরা দেখতে পাই, জীবন ধন্য হয়ে যায়।
এই মুহূর্ত অবিস্মরণীয়, অভূতপূর্ব। এই মুহূর্ত উন্নত ভারতের শঙ্গনাদের, এই মুহূর্ত ভারতের জয় ঘোষণা করছে। এই মুহূর্ত জয়ের চন্দ্রপথে চলার মুহূর্ত।
চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণের মুহূর্তে গত বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবার ইসরো দফতরে ছিলেন না। ব্রিকস সম্মেলনের জন্য তিনি রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। চন্দ্রযানের অবতরণের মুহূর্তে সেখান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ইসরো কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে তিনিও চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণ দেখেন।
ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ‘ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। সফ্ট ল্যান্ডিং করতে পেরেছি আমরা !’
এদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেষ ১৫ মিনিটের যাত্রা। প্রথমে চাঁদের উপর ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্ডার বিক্রমকে (Chandrayaan-3)। অবতরণ স্থল থেকে তার দূরত্ব ছিল ৭৪৫.৫ কিলোমিটার। ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের দিকে নেমে আসার প্রক্রিয়ায় ল্যান্ডারের গতিবেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১.৬ কিলোমিটার। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে হাল্কা পালকের মতো নামে চাঁদের মাটিতে।
৬৯০ সেকেন্ড এইভাবে ধীরে ধীরে নামার পর ল্যান্ডারের ইঞ্জিনগুলো কাজ করা শুরু করে। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে পাঁচটি ইঞ্জিন ছিল। তৃতীয় চন্দ্রযানে (chandrayaan-3) ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে চার করা হয়েছে। সফট ল্যান্ডিংয়ের সময় দু’টি ইঞ্জিন চালু রাখা হয়। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে যে সেন্ট্রাল ইঞ্জিন ছিল সেটা এবার বাদ দেওয়া হয়।
ল্যান্ডিংয়ের সময় গতিবেগে গন্ডগোল হলে বা সেন্সর কাজ না করলে যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সেজন্য সফটওয়্যার আরও উন্নত ছিল। চাঁদের মাটি থেকে যখন দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ৭.৫ কিলোমিটার, তখনই শুরু হয় আসল চ্যালেঞ্জ। এই পর্যায়ে গিয়েই আগের বার মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিল চন্দ্রযান-২। কিন্তু এবার তা হয়নি।
শেষ সাড়ে সাত কিলোমিটারের পথ অত্যন্ত সতর্কভাবে এবং সময় ও গতিবেগ হিসেব করে পালকের মতো নামে ল্যান্ডিং স্পটে।
চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করতেই ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ঘোষণা করেন, ‘ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। সফ্ট ল্যান্ডিং করতে পেরেছে চন্দ্রযান’। ইসরো চেয়ারম্যান এই দুই লাইন বলেই প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলতে বলেন।
ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই দেশবাসীকে পরিবারজন সম্মোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ১৪০ কোটি মানুষকেও আমি এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ভারত চাঁদের এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যেখানে পৃথিবীর আর কোনও দেশ পৌঁছতে পারেনি। আজ থেকে চাঁদকে নিয়ে মিথ, নানা প্রবাদ বদলে যাবে। আমরা পৃথিবীর লোকেরা চাঁদকে মামা বলি। আগে বলা হত, চাঁদ মামা অনেক দূরকে হ্যায়। এর পর এমন একটা সময় আসবে যখন ছোট ছেলেমেয়েরা বলবে চাঁদ মামা একটা ট্যুর দূরে মাত্র।