দেশের সময়: সদ্য শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এবার বোর্ড গঠনের পালা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতো, আগামী ৯, ১০ ও ১১ আগস্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন রয়েছে। তবে বোর্ড গঠনের এই দিনগুলির অনেক আগে থেকেই কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূলের বনগাঁ জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। প্রায় দিনই একের পর এক বিরোধী দলের সদ্য জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যদের তৃণমূলে নিয়ে আসছেন।
এতদিন নিয়ে এসেছেন বিজেপি, সিপিআইএম, কংগ্রেসের সদস্যদের। এবার দলে নিয়ে এলেন এক নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যকে। প্রসঙ্গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট পঞ্চায়েতে ২৪টি আসনের মধ্যে ১১টি তে জয়লাভ করে তৃণমূল।
৬টি তে বিজেপি। সিপিআইএম ৩ টি তে এবং নির্দল ৩ টি তে জয় পায়। তার মধ্যে থেকে পাতুয়া ১৬৫ নম্বর বুথের নির্দল প্রার্থী মিরাজ খান মঙ্গবার দুপুরে বনগাঁতে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে জেলা সভাপতির কাছ থেকে হাতে পতাকা তুলে নিয়ে দলে যোগদান করেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের সদ্য যোগদানকারী মিরাজ খান বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের কাণ্ডারি। তাঁর আমলে আমাদের এলাকায় যা উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কোনোকালে হয়নি৷ সেই উন্নয়নের অংশ হতে এবং গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন করার জন্যই তৃণমূলে যোগদান করেছি।’
এই নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট পঞ্চায়েতের এই নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। উনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। তা যাচাই করে আমরা তাঁকে দলে নিয়েছি।’
এছাড়াও গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত গ্রামসভার জয়ী ২ সিপিআইএম ও ২ কংগ্রেস প্রার্থী রবিবার যোগ দেন তৃণমূলে। ফলে ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের আসন বেড়ে দাঁড়াল ২৫। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন যত এগিয়ে আসছে বিরোধী শিবিরে ভাঙন স্পষ্ট হচ্ছে।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ৩০ টা। পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে শাসক শিবিরে নাম লেখানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় মঞ্চ বেঁধে সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেই প্রতিবাদী মঞ্চে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অনেকেই।
রাজারহাট নিউটাউন ব্লক ও টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা ও মণিপুরে মহিলাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অবস্থান-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আইএসএফ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন চাঁদপুর পঞ্চায়েতের জয়ী প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন।
অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করতে সিপিএমের ৩ প্রার্থীকে দলে নিল তৃণমূল। সিপিএমের ৩ প্রার্থীকে দলে টানল তৃণমূল
তাঁদের মধ্যে একজন মনিরা মীর নালুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী প্রার্থী। বাকি দু’জন হাবিব পিঁয়াদা ও আম্মান নাইয়া শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী প্রার্থী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মথুরাপুর ব্লক তৃণমূলের কার্যালয়ে সিপিএমের তিন জয়ী প্রার্থীর হাতে পতাকা তুলে দিলেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক অলোক জলদাতা, সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি বাপি হালদার ও মথুরাপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মানবেন্দ্র হালদার।
সিপিএম প্রার্থীদের তৃণমূলের যোগদান করানো ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে তৃণমূল দলে টেনেছে বলে অভিযোগ সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি জানান, ভোট গণনার পর শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের দুই জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছিল। তাঁদের পরিবারের লোকজনরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, তৃণমূলে আসতে চেয়ে ওই তিন জয়ী সিপিএম প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে দলে নেওয়া হয়েছে।
নলুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১৯। এরমধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি আসন। বিজেপি ৬টি ও সিপিএম ৪টি আসন পায়। ফলে এই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করতে ম্যাজিক ফিগারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে তৃণমূলের। অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই সিপিএমের জয়ী প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়। অন্যদিকে শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১৯। সিপিএম পেয়েছিল ১০ টি আসন। বিজেপি ১ আসন। তৃণমূল পায় মাত্র ৮টি আসন।
ফলে এই পঞ্চায়েতের ভোট গঠন করতে গেলে দু’জন প্রার্থীর প্রয়োজন ছিল। অভিযোগ, নালুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মতই এখানেও সিপিএমের দুজন জয়ী প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে অপহরণ করা হয়েছিল।
তবে সিপিএমের তিন জয়ী প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর জানান, উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের যোগ দিয়েছেন। কেউ তাদেরকে ভয় দেখায়নি। বুধবার দুই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। এখন দেখার সিপিএম দলের প্রার্থীদের ফেরাতে কী ব্যবস্থা নেয়।