দেশের সময় ,কলকাতা: গলায় স্লোগান। শ’য়ে-শ’য়ে মানুষ হাঁটছেন কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার দাবিতে। সরকারি কর্মীদের জমায়েতে কার্যত অবরুদ্ধ হাজরা। শনিবার সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছ দিয়েই মিছিলে হাঁটলেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। তবে এখানেও উঠল অভিযোগ। অভিষেকের বাড়ির সামনে মহামিছিল পৌঁছতেই তারস্বরে বাজানো হল মাইক। চলল রবীন্দ্র-সংগীত। আন্দোলনকারীদের স্লোগান ঢাকতেই এইভাবে জোরে-জোরে মাইক বাজানো হয়েছে বলে দাবি সরকারি কর্মীদের। পাল্টা তৃণমূলের যুক্তি, রবীন্দ্র জয়ন্তী সপ্তাহ পালন করছে তারা।
সরকারে এসেই কলকাতার সিগন্যালে সিগন্যালে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ঘুরেফিরে সেই রবীন্দ্র সঙ্গীতকে নানান আঙ্গিকে ব্যবহার করেছে সরকার ও শাসকদল। শনিবারের বারবেলায় যখন মুখ্যমন্ত্রীর পাড়া দিয়ে ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল ( যাচ্ছে তখন ল্যাম্প পোস্টে চোঙা লাগিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাল তৃণমূল ৷
৭১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে হালকা জমায়েতও রেখেছে শাসকদল। আর ভবানীপুর ঢোকার মুখের রাস্তায় একাধিক চোঙা লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি। কখনও সেই গান শোনা গিয়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায়, কখনও আবার শানের গলায়।
এই গান যখন বাজছে তখন স্লোগানে শাসকদলের উদ্দেশে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। হরিশ চ্যাটার্জি, হরিশ মুখার্জি, কালীঘাট রোড ক্রসিংয়ে মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে—‘আমার ডিএ চুরি করেছে হাওয়াই চটির সরকার, লজ্জা লাগা দরকার।’
সূত্রের আজ দুপুর নাগাদ স্লোগান দিতে-দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সরকারি কর্মচারিরা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অদূরেই রয়েছে ‘জয়-হিন্দ’ কমিউনিটি হল। সেইখান থেকে তারস্বরে বাজানো হয় রবীন্দ্র সংগীত। অভিযোগ, যে চোঙা থেকে প্রথম মৃদুস্বরে রবীন্দ্র-সংগীত বাজছিল সেখানেই আওয়াজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই কমিউনি হলের এক সদস্য বলেন, “২৫ বৈশাখ সামনেই আসছে। এটা কবিগুরুর মাস। তারই প্রাক মহড়া হিসাবে এটা বাজছে। গতকাল সন্ধ্যেবেলা থেকে এই গান বাজাচ্ছি। এটা চলতে থাকবে। প্রায় পাঁচ থেকে ছ’দিন ধরে চলবে।”
তবে এরপরও যে আন্দোলনকারীদের দমানো যাবে তা আবার স্পষ্ট করে জানালেন এক বিক্ষোভকারী। সরকারি কর্মচারি বলেন, “সবাই বুঝতে পারছে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত করে পরিকল্পিতভাবে মাইক বাজানো হচ্ছে।” আরও এক আন্দোলনকারী বলেন, “এইভাবে রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে গণ-সংগীতকে আটকানো যাবে না।” অপর বিক্ষোভকারীর দাবি, “এই সরকার পুরোটাই ভাওতা। সরকার ভাওতাবাজি দিতেই চলছে।” আর এক আন্দোলনকারী বলেন, “একবার ক্যামেরায় দেখান কীভাবে গান বাজাচ্ছে। এইভাবে আন্দোলনকারীদের কখনও থামনো যায়নি। যাবেও না।”
এদিন মিছিলে স্লোগান ছিল নানান কায়দায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ডাফলি বাজিয়ে ছাত্র মিছিল হয় সে ছন্দও ছিল মিছিলে। মিছিল শুরুর মুখে বাজানো হয় শঙ্খ। যৌথমঞ্চের আন্দোলনকারীরা বলেন, শঙ্খধ্বনি হল শুভ। তাই এই অশুভের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু হচ্ছে শাঁখ বাজিয়ে।
মিছিল হাজরা মোড় থেকে শুরু হয়ে আড়াই কিলোমিটার ঘুরে হাজরা মোড়ে পৌঁছয় দুপুর দুটো কুড়ি মিনিটে। তখন মিছিলের শেষভাগ হাজরা মোড় ছেড়ে যায়নি।
মিছিল শেষে সভা হওয়ার কথা হাজরা মোড়ে। সেই সভা মঞ্চ থেকেই মাইক বাজানো নিয়ে কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব। তাঁরা বলেন, ‘পুলিশকে অনুরোধ করব মাইকগুলো বন্ধ করানোর বন্দোবস্ত করুন। এই ধরনের কিছু হওয়ার কথা ছিল না। আপনারা যদি না করেন তাহলে যথা যময়ে পাল্টা ফেরত পাবেন।’