দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেউ নৈশভোজ সারছিলেন, কেউ আবার সবে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ থরথর করে কাঁপতে শুরু করল বাড়িঘর। পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠতেই বুঝতে পারলেন যে ভূমিকম্প হচ্ছে। গত বছরের শেষভাগ থেকেই দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানী ।
এবারের ভূমিকম্পও সেইরকম হচ্ছে বলেই ভেবেছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন কম্পন অনুভূত হয়, তখনই বিপদ আঁচ করেন। তড়িঘড়ি বাড়ি ছেড়ে নীচে নেমে আসেন বাসিন্দারা। এরপর সারা রাতই কেটেছে আতঙ্কে। ফের যদি ভূমিকম্প বা আফটার শক হয়? বাড়ি ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেকেইব সারা রাত রাস্তায় বসেই কাটালেন। মঙ্গলবার রাতের ভয়াবহ ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা সহজে ভুলতে পারবেন না, এমনটাই বলছেন দিল্লিবাসী।
মঙ্গলবার রাত ১০টা ১৭ মিনিট নাগাদ আচমকাই কম্পন অনুভূত হয় দিল্লি ও সংলগ্ন নয়ডা অঞ্চলে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তরফে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের কারণেই দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকায় । রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৬। ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল আফগানিস্তান লাগোয়া হিন্দুকুশ এলাকায়। প্রায় দুই মিনিট ধরে সেই কম্পন স্থায়ী হয় বলে জানা গিয়েছে। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, চিন, আফগানিস্তান ও কিরঘিজস্তানেও কম্পন অনুভূত হয়।
Delhi University North campus#earthquake #delhincrearthquack #earthquake #DelhiNCR#भूकंप pic.twitter.com/laTo8Y6ks2
— Subhash Suman (@Subha7Suman) March 21, 2023
আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের জোরালো প্রভাব পড়েছে দিল্লি সহ গোটা উত্তর ভারতে। প্রায় ২ মিনিট ধরে কেঁপেছে উত্তর ভারত। সঙ্গে একের পর এক আফটারশক। কেবলমাত্র দিল্লিই নয়, কম্পন অনুভূত হয়েছে হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানাতেও। জোরাল এই ভূমিকম্পের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উত্তর ভারতে। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন মানুষজন।
Insanely scary #earthquake at Delhi, running down 11 floors while the building swung. #Gurgaon pic.twitter.com/cugvMduQgQ
— Aparajita Bahadur (@foot_loose_apra) March 21, 2023
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির অন্যতম প্রধান জেএল গৌতম বলছেন, আফগানিস্তানের ফৈজাবাদের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের ১৫৬ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পে উৎসস্থল ছিল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৫। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে কম্পনের মাত্রা ৬.৮ বা তার বেশিও হতে পারে। উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠের ১৮৪ কিলোমিটার গভীরে ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
ভূকম্প বিশেষজ্ঞের মতে, হিন্দুকুশ পার্বত্য এলাকা এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ। সেখানে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষেই ভূমিকম্প হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মত, হিমালয় অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে রেষারেষির জেরেই এই এলাকাটি অতি মাত্রায় ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এই রেষারেষির সময়ে ইন্ডিয়ান প্লেটটি যখনই ইউরেশীয় প্লেটের নীচে ঢুকে যাচ্ছে, তখন মাটির নীচে বিশাল পরিমাণ শক্তি মুক্ত হচ্ছে। আর সেই নির্গত শক্তির পরিমাপ কতটা, তার উপরে নির্ভর করছে ভূমিকম্পের মাত্রা। মনে করা হচ্ছে, প্রবল সংঘর্ষের কারণেই দীর্ঘস্থায়ী কম্পন অনুভূত হয়েছে রাজধানী সহ গোটা উত্তর ভারতে।
বিগত কয়েক দশক ধরে এই ম্যান্টলের গতিবিধি, টেকটনিক প্লেটগুলোর অবস্থান, সংঘর্ষের ফলে তৈরি শক্তিপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। কম্পন মাপক যন্ত্র বা সিসমোগ্রামের সাহায্যে পাওয়া তথ্য থেকে যে গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন, তা থেকে তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে অনেক নিখুঁত ভাবে জানা গেছে। ভূমিকম্পের কারণ জানতেও তৈরি হয়েছে মডেল।
বিজ্ঞানী বলছেন, হিমালয় অঞ্চলে ভূস্তরীয় প্লেটগুলির মধ্যে প্রধান তিনটি ‘ফল্ট’–প্রধান কেন্দ্রীয় (মেইন সেন্ট্রাল), প্রধান প্রান্তীয় (মেইন বাউন্ডারি) ও পৃষ্ঠদেশীয় (ফ্রন্টাল)। হিমালয়ের ভূস্তরে এখন তুমুল অস্থিরতা। যার প্রভাবে তিনটে ফল্টই স্থিতাবস্থা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। তাদের যে কোনও বিন্দু থেকে যখন-তখন অতিরিক্ত শক্তি বিচ্ছুরণ হতে পারে। অর্থাৎ, আরও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা আছে।
গোটা হিমালয় অঞ্চলের পরিস্থিতি দারুণ রকম নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ভাবে জঙ্গল ধ্বংস আর ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বিধি ভেঙে যত্রতত্র বাড়ি-সেতু-হোটেল ইত্যাদি গজিয়ে ওঠায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। নেপাল, সিকিম, কাশ্মীর কিংবা অসম-অরুণাচলে অদূর ভবিষ্যতে একাধিক অতি প্রবল ভূমিকম্প ডেকে আনতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
Delhi University North campus#earthquake #delhincrearthquack #earthquake #DelhiNCR#भूकंप pic.twitter.com/FxBmzd0cez
— ABHISHEK KUMAR YADAV (@abhishek9541340) March 21, 2023