দেশের সময়, কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের সংগঠন তিনি নিজেই দেখবেন বলে দলের বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
সদ্যসমাপ্ত সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দলের পরাজয় বিশ্লেষণ করে সংখ্যালঘুদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, অন্তর্ঘাত এবং প্রার্থী নিয়ে যে ক্ষোভের কথা সামনে এসেছে, এ দিন সে সব সামনে রেখেই পঞ্চায়েতের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
কালীঘাটের বৈঠকে দলের নেতাদের উদ্দেশে দিদি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিনি বিভিন্ন জেলায় যাবেন। জেলা নেতা তো বটেই, দরকারে ব্লকের নেতাদের ডেকে নিয়েও কথা বলবেন দিদি। এছাড়া শুক্রবার করে তিনি এক একটা জেলা ধরে কালীঘাটে বৈঠকও করবেন।
সেইসঙ্গে মমতা এও বলে দিয়েছেন, পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঠিক হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। অর্থাৎ কলকাতা থেকেই। ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় বিধায়ক, জেলা সভাপতিরা প্রার্থী করার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন বলে খবর আছে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। সেকথা উল্লেখ করেই তাঁদের সতর্ক করে দেন মমতা। দিদির সাফ কথা, ‘এমএলএ কাউকে বলে দিচ্ছে তুমি প্রার্থী হবে, জেলা সভাপতি বলে দিচ্ছে—এসব চলবে না।’
এদিনের বৈঠকে দলে প্রবীণ তথা অভিজ্ঞদের সঙ্গে নবীনদের সমন্বয় করে চলার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘যুব সংগঠন সক্রিয় হচ্ছে ভাল কথা। কিন্তু সংগঠন চালাতে অভিজ্ঞতাও চাই। রাজনীতিটাও বুঝতে হবে।’ যুব নেতাদের রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির করানোর বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে।
এখন প্রশ্ন হল, দিদি এভাবে সংগঠন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তার মানে কি সংগঠনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব কমবে?
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। মমতা-অভিষেক সমন্বয় করেই সংগঠন চালাবেন। এদিন পুরনো সাংগঠনিক বন্দোবস্ত নতুন নামে ফিরিয়ে এনেছে তৃণমূল। তা হল জেলাওয়াড়ি দায়িত্ব বণ্টন। একটা সময়ে পর্যবেক্ষক ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু একুশের ভোটের কয়েক মাস আগে তা তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। এদিন কিছু কিছু জেলায় কিছু কিছু নেতাকে ফের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুরনো বন্দোবস্ত ফেরার পর অনেকেই অভিষেকের গুরুত্ব কমার বিষয় নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করছেন। কিন্তু তৃণমূলের অনেকে বলছেন, পর্যবেক্ষক ব্যবস্থা তোলা হয়েছিল কেবল শুভেন্দু অধিকারীর জন্য। কারণ তাঁর হাতেই গোটা সাতেক জেলার ভার ছিল। অভিষেক নিজেও একাধিকবার বলেছেন, ‘পর্যবেক্ষক হয়ে ওই জেলাগুলো ভাঙানোর ছক কষা হয়েছিল সেটা আমি চিহ্নিত করেছিলাম বলেই আমার উপর এত রাগ।’
এদিনের বৈঠকে মমতা এই বার্তাও দিয়েছেন, দলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেতৃত্ব বদল হবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। দিদি এও বোঝাতে চান, তিনি আছেন। কিন্তু অনন্তকাল যে তিনি থাকবেন তা বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নয়। ফলে তাঁর পরেও দল থেকে যাবে। সূত্রের খবর, মমতা এদিনের বৈঠকে বলেছেন, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে কি কংগ্রেস উঠে গিয়েছে? না থেমে গিয়েছে?
দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচি নিয়েও এদিন নেতাদের ভর্ৎসনা করেন মমতা।
দিদির কথায়, নেতারা গ্রামে যাচ্ছেন কিন্তু রাতে থাকছেন না। কেউ কেউ আবার গ্রামেও যাচ্ছেন না। বিডিও অফিসে চা খেয়ে চলে আসছেন। দলের বিভিন্ন বক্তব্য, ইস্যু টুইট করা না করা নিয়েও নেতাদের বকুনি শুনতে হয়েছে দিদির। যে সব নেতারা টুইট একেবারেই করেন না তার লম্বা তালিকা পড়েন মমতা। তাতে নাম রয়েছে ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাসেরও।
শাসক দলের এ দিনের বৈঠকের চর্চা বাইরে আসতেই একযোগে আক্রমণ করেছে সিপিএম, বিজেপি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘দলটাই দুর্নীতিতে ডুবে। জেলা সভাপতিরা গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ব্যস্ত। আগের মহাসচিব জেলে চলে গিয়েছেন। ভাইপোকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার হাতে গেলে আরও কেলেঙ্কারি হবে, মুখ্যমন্ত্রী জানেন! কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাই নিজেই সব করবেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন, পুরনোদের দায়িত্ব দিলে হয়তো দলের ভাঙন ঠেকানো যাবে কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। উনি এ ভাবে দল ধরে রাখতে পারবেন না।’’
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, দলের নেত্রী হিসাবে ভবিষ্যতের দিশা দিতে চেয়েছেন মমতা।