দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট প্রথমেই অবৈধ বলে বাতিল করেছিল। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টও প্রশ্ন তুলেছিল। শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। এবার নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের ২৯ জন উপাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ মঙ্গলবার উচ্চ আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, আচার্যের অনুমতি ছাড়া উপাচার্যদের পুনরায় নিয়োগ করা যায় না। ফলে যাঁদের মেয়াদ ফুরনোর পর সরকার নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়েছিল, তা বাতিল করা হল।
অর্থাৎউপাচার্য নিয়োগ মামলায় ধাক্কা খেল রাজ্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগ করার কোনও অধিকার রাজ্যের নেই, মঙ্গলবার এমনটাই জানায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের প্রায় ২৯ জন উপাচার্যের পদ বাতিল হল এদিন। বাতিল করলেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে যখন সোনালি চক্রবর্তীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নতুন করে নিযুক্ত করেছিল নবান্ন, সেই সিদ্ধান্তও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করে দেয়। এবারও আদালত জানিয়ে দিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্নিয়োগের অধিকার রাজ্যের নেই। তাই সব পদ বাতিলের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের প্রায় ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে মানা হয়নি ইউজিসি গাইডলাইন ৷ এই দাবি তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘ (আরএসএস-এর অধ্যাপক সংঘ)। এই মামলা যখন হয়, তখন রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনখড়। মামলাকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে রাজ্যপালের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি শাসকদল।
পাশাপাশি তারা জানিয়েছিল, রাজ্যপাল চাইলে উপাচার্য পদে নিযুক্তদের পদ বাতিলও করতে পারেন। যদিও সেই সময় তেমন কিছু ঘটেনি। বরং মামলা হয় আদালতে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই রাজভবনে বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। এরপর রাজ্যপালকে পাশে বসিয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বলেছিলেন, “উপাচার্যরা প্রত্যেকে রাজ্যপালের হাতে একটি করে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং রাজ্যপাল তাঁদের তিন মাসের এক্সটেনশন দিয়েছেন। এখন তাঁরা প্রত্যেকেই বৈধ উপাচার্য।”
অন্যদিকে রাজ্যপালও বলেছিলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জন্য কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। উপাচার্যরা তাই নিজে থেকে এগিয়ে এসে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা সবাই বিজ্ঞ মানুষ। তাই আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি, আপাতত তিন মাসের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সময়ের মধ্যে আইন মেনে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগের কাজ করা হবে।” এই আবহে এদিন আদালতের এই রায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এমনটা যে ঘটতে চলেছে তা নিয়ে কোনও রহস্য সম্ভবত ছিল না। কারণ, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার এই সমস্ত উপাচার্যকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাঁরা তাই করবেন। তার পর ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের নিয়ম মেনে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। রাজ্যপাল এ ব্যাপারে সহমত হন এবং শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।
অতীতে রাজভবনে জগদীপ ধনকড়ের মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সচিবালয় ও রাজ্যপালের সংঘাত বেঁধেছিল। রাজভবনকে এড়িয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে গিয়েই সমস্যায় পড়ে সরকার। তবে রাজ্যপাল কিছু দিন আগে একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিধানসভায় আনা বিল খারিজ করে দেবে বলে জানিয়েছে। তা ছাড়া রাজ্য সরকার পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী।