দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তিন দিনের ইডি হেফাজতে দিল্লিতে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতাকে লাগাতার জেরা করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে কেষ্টর বিরুদ্ধে। তাঁর এক সময়ের ছায়াসঙ্গী সায়গল হোসেন কোটি কোটি টাকার ‘প্রোটেকশন মানি’ নিতেন গরু পাচারের জন্য।
ইডি সূত্রে খবর, অনুব্রতর নির্দেশেই সেই টাকা নিতেন সায়গল। ইডি সূত্রে খবর, শুধু ‘প্রোটেকশন মানি’ই নয়, গরুপাচারের উপর মাসে কমিশনও নিতেন অনুব্রত। আর সেই টাকাও জমা পড়ত ছায়াসঙ্গী সায়গলের কাছেই। সূত্রের দাবি, সেই কমিশনের টাকাতেই নিজের নামে, পরিবারের সদস্যদের নামে চালকল থেকে জমি, বাড়ি কিনেছিলেন অনুব্রত। মাত্র তিন বছরেই এই সম্পত্তি বাড়ান তিনি। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনুব্রতর সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়।
ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রভাবশালী অনুব্রত মণ্ডল ৬ দিনে কিনেছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি! ২০১৪-র ১০ নভেম্বর থেকে ২০১৪-র ১৭ নভেম্বরের মধ্যে কেনা হয়েছিল এই বিপুল পরিমান সম্পত্তি।
ইডি সূত্রে খবর, গরু পাচারের টাকা কার কার কাছে গিয়েছে, তা জানতে মরিয়া ইডি। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের বয়ানকে সামনে রেখে জেরা চলছে বলেও সূত্রের দাবি। ইডি সূত্রে খবর, প্রাক্তন এক ব্যাঙ্ককর্মীকে কেন ৬ কোটি টাকা দিয়েছিলেন, তা জানতে চায় ইডি।
এখানেই শেষ নয়, ইডি সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, এই বিপুল সম্পত্তি কিনে তার বেশিরভাগেরই দাম মেটানো হয়েছিল নগদে। ওই সম্পত্তির মধ্যে বোলপুরের কালিকাপুর মৌজাতেই সিংহভাগ জমি রয়েছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের কাছে কোথা থেকে এল সেই বিপুল পরিমাণ টাকা? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ভোলে ব্যোম রাইস মিলকে সামনে রেখে ছবি মণ্ডলের নামে কেনা হয়েছিল এই বিপুল জমি।
তবে, অনুব্রতর নিজের নামেও জমি রয়েছে। ২০১৬ সালে নিজের নামে দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছিলেন কেষ্ট। তবে, তাতেও ২৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি দেখানো হয়েছে মাত্র ৮ লক্ষ টাকার।
১৮ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের উৎসও জানাতে পারেননি কেষ্টর৷ শুধু তাই নয়, মলয় পিটের একটি এনজিও রয়েছে, যেখানে কেষ্ট মণ্ডল বিনিয়োগ করেছেন বলে তদন্তকারী সংস্থা জানতে পেরেছে। এমনকী এর মাধ্যমে পেট্রোল পাম্পও চালু করেন বলে সূত্রের খবর। ইডির নজর রয়েছে, স্ত্রীর ক্যানসার চিকিৎসার খরচেও।
ইডি যেহেতু মূলত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিই দেখে, সে বিষয়েই জেরা চলছে অনুব্রত। অনুব্রত কোনও চাকরি করেন না, তিনি কোনও ব্যবসাও করতেন না, তাহলে কীভাবে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন তিনি, তাও খতিয়ে দেখছে ইডি। ২০১৪ সালে অনুব্রত যে আয়কর দিতেন, ২০২২ সালে গিয়ে তা রকেট গতিতে বেড়েছে বলেই ইডি সূত্রে খবর।
এদিকে ইডি হেফাজতে নেওয়ার পর এই প্রথমবার আজ বৃহস্পতিবার আইনজীবীর সঙ্গে হবে সাক্ষাৎ হবে অনুব্রত মণ্ডলের। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন আইনজীবী। কেষ্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় থাকতে পারবেন তিনি।
সূত্রের খবর দুজন বাঙালি আধিকারিককে দিয়েই অনুব্রত মণ্ডলের গোটা জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। ইডির জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ায় ওই দুই বাঙালি অফিসারই মূলত জিজ্ঞাসাবাদ করছেন অনুব্রতকে। কারণ দিল্লির স্থানীয় আধিকারিকরা সেই ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছেন না ভাষাগত সমস্যার কারণে। কেষ্ট মণ্ডলের মুখে শুধু একই বোল। “মেঠো রাজনীতি করেছি বাংলার গ্রামের মানুষের স্বার্থে তাই যা বলার বাংলাতেই বলব। আমি হিন্দি জানি না, হিন্দি বুঝিও না।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ছ’ টায় আসানসোল জেল থেকে বেরিয়েছিলেন। এর পর কলকাতা হয়ে দিল্লির বিচারকের বাড়িতে শুনানি শেষে যখন ইডি-র লক আপে ঢোকানো হয় অনুব্রতকে, তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত দুটো পেরিয়েছে। যদিও তার আগে জোর সওয়াল হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে। অনুব্রতকে সুস্থ রাখতে বিচারকও বেশ কিছু আর্জি মেনে নিয়েছেন।