দেশের সময়, কলকাতা:‘একুশে আমাদের গর্ব, একুশে আমাদের অহংকার’। অমর একুশে উদযাপনে দেশপ্রিয় পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারকার হাট। দেশপ্রিয় পার্কের ভাষা স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে দুই বাংলার ভাষাকে ঘিরে তৈরি করা বৈষম্য নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একইসঙ্গে বর্তমানে বাংলাকে অসম্মান করে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলার প্রবণতাকে সমালোচনা করেন।
এদিন মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”এখন অনেকে বাংলা জানলেও বাংলায় কথা বলেন না। এখনকার ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে পড়াশুনা বেশি করে আমি মানছি। অন্য ভাষা শিখুন তাতে আমার আপত্তি নেই। বরং ভালো করে শিখুন। কিন্তু, যখন বাড়িতে আমরা খেতে বসি তখন অন্তত বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা উচিত। অন্য ভাষা শিখুন কিন্তু, বাংলাকে ভুলে নয়। এখন অবাঙালীরাও আমাদের থেকে বেশি বাংলা বলে।” এমনই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”সবসময় সবার উপরে রাখা উচিত নিজের মাতৃভাষাকে। এই কথাকে মাথায় রেখে এরাজ্যে কুর্মি, অলচিকি, রাজবংশী, গোর্খা ভাষাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের বাংলায় অনেক বর্ণ, ধর্ম শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন। তাঁর ভাষাটা আমি যদি বুঝতে পারি, তাহলে আমার ভাষাকেও তাঁকে বুঝতে হবে। আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে এটা দরকার। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই আসল।”
এদিন রাজ্য সরকারের তরফে ভাষা দিবসের দিন প্রবাসীদের জন্য একটি পোর্টাল চালু করা হয়। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”বিশ্বের সমস্ত বাঙালির সঙ্গে যোগের জন্যই পোর্টাল। প্রবাসে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।” পোর্টালটির নাম রাখা হয়েছে, মনের বাংলা, আমার বাংলা।
এদিন ভাষা শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে নিজের একটি কবিতাও পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ” মাকে কেউ আম্মা বলে, এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে না। আপনাকে তো মা বলতে কেউ বারণ করেনি। ” মুখ্যমন্ত্রী এদিনের অনুষ্ঠান থেকে আর কী কী বার্তা দিলেন পড়ুন…
মা বললে, সবাই জানে। মা আর মাদার কমন শব্দ। জল কিংবা ওয়াটারও কমন শব্দ। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে, এটা মেনে নিতে হবে আপনাকে। মাকে কেউ আম্মা বলে, এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে না। আপনাকে তো মা বলতে কেউ বারণ করেনি। ওরা দাওয়াত বলে অতিথি সেবাকে, এটা বাংলাদেশের ভাষা। আর বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এপারে এসেছেন, তাঁরা সযত্নে গ্রহণ করেছেন। আমি তো কারোর মাতৃভূমিকে বদলাতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা সে বদলাবে কীভাবে?
ভাষাতেও হার্ট আছে, কান আছে, লিভার আছে। সব মিলিয়ে আমাদের ভাষা। সব ভাষা মিলিয়ে আমাদের দেশ।
এখন আমাদের ভাষার মধ্যে অনেকটা ইংরেজিও বলে ফেলি। কমিউনিকেশন স্কিল যাঁর যত বেশি হবে, তিনি তত বাড়বেন।
আজকালকার সিরিয়ালগুলোকে দেখুন না, বাংলায় হচ্ছে প্রোগ্রাম, হিন্দিতে আবার গান হচ্ছে তাতে। কেন গাইছে, তার কারণ মার্কেটটা তাই। নতুন বিজনেসে যেতে গেলে করতে হবে।
আজকালকার সিরিয়ালগুলোকে দেখুন না, বাংলায় হচ্ছে প্রোগ্রাম, হিন্দিতে আবার গান হচ্ছে তাতে। কেন গাইছে, তার কারণ মার্কেটটা তাই। নতুন বিজনেসে যেতে গেলে করতে হবে।
আমরা হিন্দি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি, উর্দু ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি, আমাদের বাংলায় অনেক ধরনের মানুষ, অনেক ধর্ম বর্ণের মানুষ রয়েছে। আমার এখানে যেসব ননবেঙ্গলিরা বসবাস করেন, তাঁরা মোর দ্যন বেঙ্গলি। তাঁরা যতটা ভালো বাংলা বলেন, আমরা ততটা বলি না।