দেশের সময়, বনগাঁ: আগেই বেআইনি শিক্ষা কর্মী নিয়োগে নাম জড়িয়েছিল বনগাঁ শহরের এক সাংস্কৃতিক কর্মীর৷ তাঁর নাম সুশোভন দত্ত ৷ বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরের কোড়ারবাগান এলাকায় ৷তিনি নরহরিপুর সারদাচরণ বিদ্যাপীঠের অশিক্ষক কর্মচারী৷ ২০১৮ সালে তাঁর নিয়োগ হয়েছিল ৷
১৯১১ জন আর গ্রুপ ডি কর্মী থাকবেন না, তাঁদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া যাবে না! শুক্রবার এমনই কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ! তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী বেতনও বন্ধ ওই কর্মীদের, এমনকি যে বেতন এতদিন পেয়েছেন, সেই টাকাও ফেরত দিতে হবে মাসে মাসে। বিচারপতি আরও নির্দেশ দেন, প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে তাঁদের জেরাও করবে সিবিআই।
এবার গ্রুপ ডি কর্মীদের চাকরি বাতিল তালিকায় নাম প্রকাশ্যে এলো বনগাঁ শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী সুশোভন দত্তের ৷ এই ঘটনা জানাজানি হতেই শহরের সাংস্কৃতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন সুশোভন বাবু ৷ চায়ের দোকানের আড্ডায় সান্ধ্যকালীন ঠেকে সুশোভন বাবুকে নিয়ে আলোচনা জমে উঠেছে ৷
বনগাঁ শহরের কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের কথায় , এই বেআইনি তালিকায় থাকা শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় বনগাঁর সংস্কৃতি ক্ষেত্রে লজ্জার বিষয় ৷
বনগাঁ পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর দেবদাস মন্ডল বলেন, আদালতে প্রমাণিত এঁরা সবাই ঘুর পথে টাকার বিনিময়ে চাকরিতে ঢুকেছে ৷ বরং যাঁরা যোগ্য প্রার্থী কলকাতার রাজ পথে বসে কাঁদছে তাঁদের চাকরি হওয়া উচিত ৷
এবিষয়ে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা ৷ কারণ সুশোভন মেধাবী ছাত্র ছিল ৷ অনৈতিক বলে মনেহচ্ছে৷ যদি পর্ষদের কোন ভূল হয়ে থাকে তার জন্য যেন বলিদান দিতে না হয় সুশোভনকে ৷ আদালতের কাছে প্রমাণ কোথায় সুশোভন টাকা দিয়েছে চাকরি পাওয়ার জন্য৷ বনগাঁর মানুষের কাছে সে যোগ্যতা সম্পর্ণ শিক্ষিত যুবক ৷ তার চাকরি পাওয়া উচিত ৷ এবিষয়ে পর্ষদের কোন ভূল থাকলে সেটা দুঃখজনক৷
সুশোভন বনলতা নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করেন৷ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশে তিনি অনেককেই সহযোগিতা করেন|প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে ৷ সরকারি বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায় ৷ বনগাঁর রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ৷এমন একজন সাংস্কৃতিক কর্মীর নাম বেআইনি তালিকায় থাকায় বনগাঁর শিক্ষা সংস্কৃতি জগতের মানুষেরা স্তম্ভিত৷ তাঁর প্রতি সহানুভূতি থেকে অনেকে বলছেন শেষ পর্যন্ত চাকরি চলে যাওয়ায় ছেলেটা জলে পড়বে ৷ এটা আমরা চাই না ৷ ইতিমধ্যেই মানসিক ভাবে বিব্রত বোধ করতে শুরু করেছেন সুশোভন ৷
পথে-ঘাটে পরিচিত লোকজনদের সঙ্গে দেখা হলেই মানুষ তাঁর কাছে জানতে চাইছেন ৷কেউ তাঁর দিকে তাকালেই তাঁর মনে হচ্ছে এই বুঝি বেআইনি তালিকা নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসছেন তারা৷ সব মিলিয়ে অনেকটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সুশোভন বাবু ৷
বনগাঁ নরহরিপুর সারদাচরণ বিদ্যাপীঠের ডি -গ্রুপের কর্মী সুশোভন দত্তের ৮২২ নাম্বারে নাম রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া তালিকায় ।
এই বিষয়ে সুশোভন দত্ত জানান আমি জানতে পেরেছি হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে সেই তালিকায় আমার নাম রয়েছে । তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি সঠিকভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন । কত নাম্বার পেয়েছেন সেটা পর্ষদ থেকে দেখেই তাদেরকে ডেকেছিল । বিচারক নির্দেশ দিয়েছে সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই ।
নরহরিপুর সারদাচরণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা সুপর্ণা ঘোষ রায় জানিয়েছেন আমরাও জানতে পেরেছি । আমাদের স্কুলের দুজন ডি গ্রুপের স্টাফ আছে । স্কুলের অনেক কাজই করতো সুশোভন ফলে আমাদের সমস্যাই হবে ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করে নিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ১৯১১ জনের চাকরি বাতিল করবে।
শুধু তাই নয়, বিচারপতি বলেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাঁদের কোনও পরীক্ষায় কাজে লাগানো যাবে না। তাঁর কথায়, ‘এঁদের আগে আদালত নিজে থেকে চাকরি ছাড়ার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সেটা করেনি।’ পাশাপাশি এদিন আদালত জানায়, আগের যে ৬০৯ জনের চাকরি গিয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে, তাঁদের জায়গায় নতুনদের চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করবে এসএসসি।
শুধু তাই নয়, এই মামলায় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, আদালতে সুবীরেশ জানাবেন কার নির্দেশে তিনি অযোগ্য প্রার্থীদের সুপারিশপত্র দিয়েছিলেন। কেন এই জালিয়াতি করেছিলেন।