দেশের সময় , কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হয়ে গেল ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার। এবারের বইমেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
৪৬তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা ৷ সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা গ্রাউন্ডে বইমেলার ঢাকে কাঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য অতিথি হিসেবে সম্মানিত করা হল সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে। এছাড়াও থিম কান্ট্রি স্পেনের অতিথি ইনস্টিটিউট অফ সার্ভান্তাসের ডিরেক্টর মারিয়া হোসে গালভের সালভাদোর এবং স্পেনের রাষ্ট্রদূত হোসে মারিয়া রিদাও ডমিনিকার উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে আপ্লুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সুপার্ব, মার্ভেলাস বইমেলা। কলকাতার বইমেলা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। প্রকৃত অর্থেই এটা আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা।”
‘কলকাতা বইমেলা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে’, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ব মিলিত হয়েছে বাংলায়। কিন্তু, আজকাল সমালোচনা একটু বেশিই হয়। একটা উইপোকা কামড়ালেও সেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অথচ কত ভালো ভালো বই লেখা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও কথা হয় না। নেগেটিভিটি একটা চিন্তাধারা হয়ে গিয়েছে। আমি বলব নেতিবাচক কথাবার্তা সরিয়ে রেখে আমাদের শান্তি এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার্থে এগিয়ে আসা উচিত। দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। গণতন্ত্র রক্ষার্থে আমাদের সরব হতে হবে। ইতিহাস, ভূগোল, মানুষের অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। হেট স্পিচকে আমি তীব্র নিন্দা করি। সকলকে নম্র ভদ্র হতে হবে।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটো ছোট পাবলিশার্সের পাশে থাকুন। বড় লেখকদের থেকে ছোট লেখকদের গুণ কিন্তু কম নয়। লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব অনেক। আমি এখনও ছোট চার পাতার ম্যাগাজিন পড়ি। তাতে অনেক তথ্য থাকে।” সমস্ত প্রান্তের মানুষ যাতে বইমেলায় আসতে পারেন তাই বাসের সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এদিন তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র এরাজ্যেই নয়। আগামীদিনে দেশের রাজধানী দিল্লিতেও হবে বাংলা বইমেলা। যেখানে বিভিন্ন প্রকাশকদের সঙ্গে যোগ দেবে অন্যান্য দেশও। সোমবার বইমেলা প্রাঙ্গণে ৪৬ তম আন্তর্জাতিক বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে একথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিল্লিতেও বাংলা বইমেলা হবে। সব দেশকে সেখানে আনতে হবে। ব্যবস্থা আমরাই করব।’ এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে এবং সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব নিতে বলেন তিনি।
উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে চুঁচুড়ার টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুলের পড়ুয়ারা। তাদের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ গানটি পরিবেশন করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই গানটিই ছিল এদিনের উদ্বোধনী সঙ্গীত। প্রথা অনুযায়ী, ঘন্টা বাজিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এতদিন বইমেলার জন্য ছিল না কোনও স্থায়ী জায়গা। বিধাননগরের এই মেলা প্রাঙ্গণটিতেই প্রতিবছর বইমেলার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী যার নামকরণ করেছেন বইমেলা প্রাঙ্গণ।
এদিন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের দুই কর্ণধারকে অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এঁরা বইমেলার জন্য সকলের কাছে ঘুরেছেন। আজকের এই স্থায়ী ঠিকানার জন্য আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। এখানে আয়োজনের জন্য মেলার আকর্ষণ এবং জায়গাও বেড়েছে। এটা একটা বড় প্রাপ্তি।’ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ছটি নতুন বই প্রকাশিত হয়।
এর মধ্যে রয়েছে ‘কবিতাবিতান’-এর ইংরেজি অনুবাদও। মমতা বলেন, ‘কাজের ফাঁকে লেখালেখি করি। ১২৮টি বই ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গেছে।’ এবিষয়ে দুই প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার এষা ও অপুর নাম উল্লেখ করেন তিনি। বইমেলার তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ বই হল মানুষের জীবন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নতুন ছয়টি বই প্রকাশ হচ্ছে এবারের বইমেলায়। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ। আমার সবটাই কুৎসার আঙিনায়, অপপ্রচারের আলিঙ্গনে। কারও কারও পছন্দ নাও হতে পারে। তবে আমি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। সমালোচনার থেকে আমি শিখতে পারি। যে তোমায় খারাপ বলে বলুক, তুমি খারাপ বলো না। ১২৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে আমার। এই বইমেলায় আরও ৬টি বই প্রকাশ হবে। আরও ৪-৫টি বইয়ের কাজ চলছে। বই শুধু বই নয়। বই হচ্ছে মানুষের জীবন, বাস্তবচেতনা। এখনও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন কিছু না কিছু শিখে থাকি।”
তালিকায় রয়েছে ‘লহ প্রণাম’, ‘মহীয়সী: ছড়ায় ছড়ায়’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘স্যালুট’, ‘কবিতাবিতান’ এবার ইংরাজিতে।” একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “রাজনীতিবিদরা বই লিখতে পারেন না? সমাজ সংস্কারকরাও তো একাধিক বই লিখেছেন।” ছবিগুলি তুলেছেন ধ্রুব হালদার৷