অর্পিতা বনিক,পেট্রাপোল: শৈশবে ট্রেনে চড়়ে ওপার বাংলায় যাতায়াতের স্মৃতি আছে পেট্রাপোল সীমান্তের স্থানীয় বহু বাসিন্দাদেরই৷ কারণ দেশ ভাগের আগে তাদের অনেকেরই আদি বাড়ি ছিল ও পার বাংলায়৷।
যাঁরা শৈশবে বাবা-মায়ের হাত ধরে ট্রেনে করেই এ দেশে এসেছিলেন এক সময় ৷ এখন তারা এপার বাংলার বাসিন্দা৷ সে সব অন্য কথা অন্য প্রসঙ্গ ৷ কিন্তু ফের যাত্রীদের আনাগোনা শুরু হবে ট্রেনে, এ কথা জেনে ফের খুশির হওয়া এলাকাজুড়ে ৷ আবারও ট্রেনে চেপে বাংলাদেশের আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে তাঁদের অনেকের মনে ৷
পূর্বরেল সূত্রে জানা গেছে,২০২০ সালের শেষের দিকেবিদ্যুতায়িত করা হয় বনগাঁ-পেট্রাপোল রেলপথ । পেট্রাপোলে স্টেশন থাকা সত্ত্বেও এই সেকশনে খুব বেশি ট্রেন যাতায়াত করে না । শুধুমাত্র কয়েকটি মালগাড়ি ও বন্ধন এক্সপ্রেসের জন্য পূর্ব রেলের এই লাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
ফলে পরিকাঠামো কিছুটা তৈরিই ছিল। আগে থেকেই আছে শুল্ক ও অভিবাসন দফতরের অফিস।
বর্তমানে যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোর জন্য পেট্রাপোল স্টেশনের পরিকাঠামো নতুন করে তৈরির কাজও প্রায় শেষ। দেখুনভিডিও:
পেট্রাপোল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, গোটা চত্বর ঝাঁ চকচকে করে তোলা হয়েছে। নতুন করে রঙের পোঁচ পড়েছে। ফুলের বাগান তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে যাত্রীদের বিশ্রামাগার। পাসপোর্ট ও ভিসা পরীক্ষার সময়ে তাঁরা ওই বিশ্রমাগারে বসবেন। প্ল্যাটফর্ম চত্বরে বসানো হয়েছে পানীয় জলের কল। বসারও ব্যবস্থা রয়েছে। তৈরি হয়েছে শৌচালয়, বুকিং কাউন্টার। জিআরপি ও আরপিএফ অফিস রয়েছে। রয়েছে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাও।
পূর্ব রেলের তরফে জানা গেছে, ইতিমধ্যেইএই সিঙ্গল লাইন সেকশনটিকে (4.167 কিমি পথ) বিদ্যুতায়িত করার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে । এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধা হবে ৷ ভবিষ্যতে লোকাল ট্রেন ও আরও পরিমাণে মালগাড়ি যাতায়াত করতে পারবে ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পেট্রাপোল অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন । এলাকায় স্টেশন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বনগাঁ থেকে অটো করে পেট্রাপোল যাতায়াত করেন । পাশাপাশি যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে অর্থাৎ বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে যান তাঁদেরও ওই অটোই ভরসা । শিয়ালদহ সেকশনটিকে যখন বিদ্যুতায়িত করা হয় তখন বাদ ছিল এই অংশটুকু । ২০০১ সাল থেকে এই লাইন দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মালগাড়ি যাতায়াত করছে । একাধিক কারণে এই অংশটি বিদ্যুতায়িত করা হয়নি এতদিন । অবশেষে সেই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে । সম্প্রতি এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও চালানো হয় ।
পূর্ব রেলের তরফে জানা গেছে , কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি-র অধিকারিকদের পরিদর্শনের পর চূড়ান্ত ছাড়পত্র মিলবে ৷ তারপর পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের শেষ রেল স্টেশন পেট্রাপোলে চলাচল করবে ইএমইউ বা বিদ্যুৎচালিত ট্রেন ।
পূর্ব রেলের আধিকারীকেরা (শিয়ালদহ) পেট্রাপোল স্টেশন পরিদর্শনে করে গেছেন বহুবার ৷ তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে জানিয়েছিলেন ‘‘সব কিছু ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই পেট্রাপোল থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে ঠিক কবে থেকে ট্রেন চলবে, তা ঠিক করবে কেন্দ্রীয় সরকার।’’
বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, পেট্রাপোল স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরুহলে স্থানীয় ও বাংলাদেশের যাত্রীদেরও যাতায়াতের জন্য খুবই সুবিধা হবে এটা ঠিক ৷ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এই লোকালট্রেন পরিষেকা চালু করার আগে যেসমস্ত মানুষ ওই জায়গায় রেলের বস্তিতে বসবাস করছেন তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা না হলে আন্দোলনের মুখে পড়তেহবে রেল কর্তৃপক্ষকে৷ এছাড়া আরও একটি বড় সমস্যা দেখা দেবে স্থানীয় অটো রিক্সা বা টোটো রিক্সা চালকরাও অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে ৷ কারণ এখন পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটারের রুট রয়েছে ফলে একটু লাভে মুখ দেখছেন তাঁরা৷ ট্রেন চালু হলে এই রুট কমে দাঁড়াবে ১কিলোমিটারে ৷ সেভাবে আর অটো বা টোটোর তেমন প্রয়োজন হবে না ৷বিশেষ করে বাংলাদেশ যাত্রী পাবেন না ৷ সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে বড় সমস্যার মুখে পড়বেন কয়েক হাজার মানুষ৷ তাই এত সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গাটা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও নজর রাখছে রাজ্য সরকার৷