দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মাঝরাতের পুলিশি অ্যাকশনে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ২০১৪-র টেট আন্দোলনকারীদের আমরণ অনশন। তুলে দেওয়া হয়েছিল ২০১৭-র টেট পাশ করা বিক্ষোভকারীদের।
এমনকী বৃহস্পতিবারের মধ্যরাতে করুণাময়ীতে আন্দোলনকারীদের তুলতে পুলিশের যে ভূমিকা দেখা গিয়েছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। এবার এ ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামতে দেখা গেল শহরের তথা বাংলার বিদ্বজ্জনদের।
এদিনের এই মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষ, শ্রীলেখা মিত্র, সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, পরিচালক অনীক দত্ত, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার সহ বিশিষ্ট জনেরা। এই মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন বাম নেতা বিমান বসু থেকে কংগ্রেস নেতা মান্নাও।
শনিবার দুপুর থেকেই ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে জমায়েত শুরু হয় সাধারণ মানুষের। বিকেল নাগাদ এই মিছিল সেখান থেকে শুরু হয়। সকলের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, মুখে শ্লোগান। প্ল্যাকার্ডে জ্বলজ্বল করছে, ‘আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের উপর বর্বরোচিত পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদ’!
এদিনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন বয়েসের মানুষ। কলেজ পড়ুয়া থেকে অফিস ফেরত মানুষ। নেতা থেকে অভিনেতা। আট থেকে আশির ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাজের সব স্তরের নাগরিকরা হাঁটলেন এদিনের মিছিলে। বিশিষ্টজনদের বলতে শোনা গেল, এ মিছিলে কোনও রাজনৈতিক রঙ নেই। আছে প্রতিবাদের সুর।
এদিন কার্যত সরকারের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়ে তির্যক ভঙ্গিতে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “যাঁরা অনশন করছিল, যারা অবরোধ করছিল তাঁরা বিশাল বড় অপরাধ করে ফেলেছে। কেন অধিকারের কথা বলছে? উনি তো চান না। সে কারণেই তুলে দেওয়া হয়েছে। কোন জায়গায় এসে আমরা পৌঁছেছি সেটা ভাবুন একবার। আগামীদিনে যাতে এই মন্ত্রীসভা না থাকে সেটাই আমরা চাই।”
অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, “গোটা রাজ্যজুড়ে যে দুর্নীতি চলছে সেটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার। যাঁরা অন্যায় করল, বিষয়টি জটিল করল, তাঁরাই পুলিশ পাঠিয়ে যাঁরা নায্য প্রার্থী তাঁদের তুলে দিচ্ছে রাস্তা থেকে। এটা তো হতে পারে না। এটা তো হতে পারে না। যাঁদের টাকা দিয়ে চাকরি দেওয়া হল তাঁরা যে স্কুলে পড়াবে সে স্কুলে কারা পড়তে যাবে?”
তবে মিছিল প্রসঙ্গে পাল্টা তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, “এটা বুদ্ধীজীবীদের মিছিল নয়। এটা বামেদের মিছিল। এদের গুরুত্ব নেই। এদের তো বিধানসভায় আসন নেই। বুদ্ধীজীবীতার নাম করে আসন আনতে পারবে না। সরকার যথাযথ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গুলি চালায়নি সরকার৷”
প্রাথমিকে ২০১৪’র চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল গোটা করুণাময়ী চত্বর। তাঁদের বিক্ষোভ-অনশনের জেরে অবরুদ্ধ এলাকা। সোমবার থেকে চলা এই আন্দোলন তুলে দিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুলিশ অভিযান চালায়। মাত্র ১৫ মিনিটের অভিযানে তুলে দেওয়া হয় তিনদিনের আন্দোলন। অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক চাকরিপ্রার্থীও।
সোম, মঙ্গল, বুধ এই আন্দোলন তুলতে তেমন গা দেখায়নি পুলিশ। এই আন্দোলন নিয়ে মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তবে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, পর্ষদের সামনে ১৪৪ ধারা অমান্য করা যাবে না কোনওভাবেই। তারপর থেকেই পুলিশের সক্রিয়তা বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বলপূর্বক আন্দোলন তুলে দেয় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে। শনিবার কলকাতার সাক্ষী থাকল এক নাগরিক সমাজের প্রতিবাদে।
গত দু’দিন ধরেই পথঘাট থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে বিভিন্ন পেশার মানুষ গর্জে উঠছিলেন বৃহস্পতিবারের ঘটনায়। অনেকের গলাতেই শোনা গিয়েছে নিন্দার সুর। সেই নিন্দার ঝড় আজ বয়ে গেল কলকাতার রাজপথে।
রাজনৈতিক রঙ না থাকলেও এদিনের মিছিলে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকে দেখা গেছে। তবে একেবারে পেছনের সারিতে। বিমান বসু থেকে আব্দুল মান্নান রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে হাঁটলেন এই ‘ধিক্কার মিছিল’-এ। এই বিশাল মিছিল শেষ হয় রবীন্দ্র সদনের সামনে।