দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃনেতা–নেত্রীর সুপারিশ থাকলেও পাওয়া যাবে না পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট।
সম্প্রতি একটি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বলেছিলেন, যে কোনও দিন পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে। তখন আর কাজ করতে পারবেন না। এখন যা করার ঝটপট করে নিন।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির সভা থেকে তৃণমূলের কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলে দিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে কারা তৃণমূলের টিকিট পাবেন, আর কারা পাবেন না।
প্রসঙ্গত আগামী বছরেই রাজ্যে হতে চলেছে পঞ্চায়েতের নির্বাচন। তার আগেই নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘যোগ্যতা’র মাপকাঠি ঘোষণা করলেন তিনি।
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকলেই মিলবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়ার দলীয় ছাড়পত্র। মঙ্গলবার ধূপগুড়িতে দাঁড়িয়ে একথা ঘোষণা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এমনিতে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের একাংশের নেতার বল্গাহীন সম্পত্তির অভিযোগ নতুন নয়। সে কথা সরাসরি না বললেও ঠারেঠোরে অভিষেক বুঝিয়ে দিলেন, যাঁরা পঞ্চায়েতে কাজ না করে শুধু আখের গুছিয়েছেন, তাঁরা এবার টিকিট পাবে না।
অভিষেকের কথায়, “আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের উপর আপনার টিকিট পাওয়া নির্ভর করবে না। আপনার সম্পর্কে মানুষের কী ধারণা সেটাই টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “কোনও দাদা-দিদির পা ধরে পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া যাবে না। যাঁদের পোষাবে না, তাঁরা অন্যদলে চলে যান। তৃণমূল কংগ্রেসের তাতে কিচ্ছু আসে যায় না।”
গত লোকসভা থেকেই উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি ধসে যাওয়া শুরু হয়েছিল। একুশের বিধানসভাতেও তেমন কোনও দাগ কাটতে পারেনি তৃণমূল। তবে সম্প্রতি পুরসভার ভোট ও সদ্য সমাপ্ত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটে একচেটিয়া জয় পেয়েছে শাসকদল। এদিন অভিষেক বলেন, দলের ত্রুটির জন্যই মানুষ ভোট দেননি। মানুষ যে ভাবে তৃণমূলকে দেখতে চায় সে ভাবেই দলকে গড়ে তোলার কথা বলেন অভিষেক।
সভায় উপস্থিত স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশ, ‘যেখানে যেখানে ফল খারাপ হয়েছে সেখানে সেখানে আগামী দু’মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিতে হবে। মানুষের আস্থা আমরা নিজেদের দোষেই হারিয়েছি।’ এখানেই না থেমে নেতৃত্বের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘২১ জুলাইয়ে যখন আসবেন তখন গত একবছরে কে কতগুলো বুথে গেছেন সেই রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসতে হবে। যে আনতে পারবেন না তিনি জেনে রাখুন তৃণমূল আর খুশি করে চলতে পারবে না।’
এদিন ধূপগুড়ি যাওয়ার পথে দোমোহনি হাটে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন অভিষেক। সেই প্রসঙ্গেই অভিষেক বলেন, আগামী দিনে এরকম আরও করবেন। সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, নেত্রী যদি এই বয়সেও মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারেন, তাহলে পঞ্চায়েতের নেতারা কী এমন কেউকেটা যে তাঁরা বুথে বুথে যেতে পারবেন না?
পুরসভা ভোটেও বহু জায়গায় প্রার্থী বদল করে দলের ভিতর ঝাঁকুনি দিয়েছিল তৃণমূল। তাতে বেশ কিছু জায়গায় নির্দল কাঁটা বিঁধেছিল বটে কিন্তু সেখানেও সাংগঠনিক ভাবে কঠোর পদক্ষেপ করেছিল দল। এদিন অভিষেক ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, পঞ্চায়েতেও সেই ধারা বজায় থাকবে। কে কেমন কাজ করেছেন তা দেখে নিয়েই দল টিকিট দেবে। টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কোনও মানদণ্ড কাজ করবে না।
কার্যত উত্তরবঙ্গকে যে আগামী নির্বাচনের আগে তৃণমূল পাখির চোখ করতে চলেছে এদিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। সেখানকার স্থানীয় মানুষের অভিযোগ শুনতে সভায় আসার আগে তিনি দোমহনিতে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। কথা বলেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে। ব্যবসায়ীরা জানান, বহুবার আবেদনের পরেও জেলা পরিষদ বাজার তৈরি করেনি। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে অভিষেক বলেন একমাসের মধ্যে বাজার তৈরি করতে।
এদিন মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অভিযোগ ও সমস্যা শোনার জন্য তিনি যেই ফোন নম্বরটি চালু করেছেন সেই নম্বরে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারের বাসিন্দারাও তাঁদের সমস্যা এবং অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিষেকের কথায়, ‘সকাল ন’টা থেকে সন্ধ্যে ছ’টা পর্যন্ত এই নম্বরে যোগাযোগ করুন। পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের নেতা–নেত্রীর বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে আমায় জানান। চাইলে পরিচয় গোপন রাখা হবে।’
স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি তাঁর নির্দেশ গাড়ি নয়, বাইক বা সাইকেলে মানুষের কাছে যেতে। তিনি বলেন, ‘সামনে পেছনে চারটে গাড়ি আর চলবে না। জেলার দায়িত্ব মানেই কেউকেটা হয়ে গেছি এসব ভাবনা আর চলবে না।’ দলে ঠিকাদারি রাজ ঠেকাতে এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানান, ‘ঠিকাদারি আর তৃণমূল কংগ্রেস, দুটো কিন্তু একসঙ্গে করা যাবে না। এটা হলদিয়ায় বলেছিলাম। গোটা বাংলায় এটা বাস্তবায়িত করব।’ জ্বালানি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এদিন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে অভিষেকের অভিযোগ, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। পাশাপাশি পৃথক রাজ্য হিসেবে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার সব চেষ্টাই যে প্রতিহত করা হবে সেকথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘উত্তরবঙ্গ নয়। শুধুই বঙ্গ।’