দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারে জোর দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী বছর নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস।”
প্রসঙ্গত ত্রিপুরার পুর ভোটে লড়াই করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে মাত্র একটি কাউন্সিলর জিততে সক্ষম হয় তারা। শতাংশের বিচারে প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই অবশ্য তৃণমূলের সেই জয়ী কাউন্সিলর দল ছেড়েছেন। যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে তৃণমূলকে একযোগে কটাক্ষ করেছেন বিপ্লব দেব-অমিত মালব্য-শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায় পরিষ্কার, তাঁরা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না এই লড়াইয়ে৷ প্রসঙ্গত চলতি বছরের শুরুতেই ত্রিপুরা গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেঘালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানস ভুঁইয়াকে। অসম দেখছেন সুস্মিতা দেব৷
যদিও ত্রিপুরা বা মেঘালয়ের মতো রাজ্য যেখানে আগামী বছর বিধানসভা ভোট, সেখানে গত কয়েক মাসে বড় কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেনি তৃণমূল। যা দেখে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছিল উত্তর পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক লড়াই থেকে কি তবে তৃণমূল পিছিয়ে এসেছে? যদিও অভিষেকে কথায় পরিষ্কার হল লড়াই চলবে।
একাধিক ইস্যুতে তাই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।ত্রিপুরায় ব্যর্থ বিজেপি সরকার, এই দাবিতে আন্দোলন করতে চায় তৃণমূল। তাদের দাবি, রাজ্যের সামগ্রিক আইন শৃঙ্খলার চূড়ান্ত বিপর্যয়, প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতা কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বাড়ি, ঘর, সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, মহিলাদের উপর নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
রাজ্যের স্থবির পুলিশ প্রশাসন, মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা ও রাজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হতে চলেছে তৃণমূল। রাজ্যের ভয়াবহ বেকার সমস্যা, শূন্যপদ পূরণ, বিকল্প কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা এবং কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনরত বেকারদের উপরে ক্রমাগত নির্যাতন ও পুলিশি অত্যাচার বন্ধ করা নিয়েও আন্দোলনে নামবে দল।
কর্মচারী নির্ভরশীল রাজ্যে যেখানে নিয়োগ বন্ধ রেখে প্রতিদিন ছাঁটাই হচ্ছে, কর্মচারীদের ২৮ শতাংশ ডিএ, কেন্দ্রীয় হারে বেতন ভাতা, বিভিন্ন দফতরের অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করা, পিএসইউ কর্মচারীদের সরকারি কর্মচারীদের মতো সুযোগ সুবিধা দেওয়া, পেনশনপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন দ্বিগুন করা এবং কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তার দাবিও তোলা হবে।
রাজ্যের গ্রাম-পাহাড়-সহ সর্বত্র পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন পানীয় জলের দাবিতে পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝোলানোর পাশাপাশি পথ অবরোধ করছেন স্থানীয় জনগণ। রাজ্যের প্রতিটি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার দাবিও তুলবে তৃণমূল। ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সহ আত্মঘাতী হওয়া ও মৃত্যু হওয়া শিক্ষকদের পরিবারের অন্তত একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবিও তোলা হবে।
রাজ্যের সব মহকুমা, জেলা,প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং দু’টি মেডিক্যালে কলেজে পর্যাপ্ত ডাক্তার,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে। রাজ্যের ভেঙে পড়া কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি দরকার। পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থার অভাবে অধিকাংশ জমি অনাবাদী পড়ে থাকছে। কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে না এবং দুর্নীতি হচ্ছে এসব কৃষিসামগ্রী বিতরণে। দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবিতেও আন্দোলনে নামবে তৃণমূল। ভোটের কয়েক মাস আগেই এইভাবে পথে নেমে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে তৃণমূল।