দেবদ্যুতি হালদার ,কলকাতা: রবিবার ছুটির মেজাজে জমে উঠেছে কলকাতা বইমেলা তার মধ্যেই বইমেলায় অংশ নেওয়া সমস্ত প্রকাশকদের জন্য সুখবর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উদ্যোগে সব স্টলের ট্রেড লাইসেন্স ফি মকুবের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। এর মধ্যে রয়েছে লিটল ম্যাগাজিনগুলিও।
গত বছর মেলা না হওয়ায় যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে প্রায় সব প্রকাশককেই। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন নির্দেশে মিলল স্বস্তি। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই যে সব প্রকাশনী ট্রেড লাইসেন্স ফি দিয়েছেন তাদের টাকাও ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।
রবিবার ছুটির মেজাজে বই প্রেমীরা প্রায় শুরু থেকেই এদিন ভিড় জমিয়েছেন মেলা প্রাঙ্গণে৷ ছোট-বড় বহু স্টলেই রীতিমতো লাইন করে লোককে ঢোকাতে হচ্ছে। এদিন বইমেলায় শিশু দিবস। সেই উপলক্ষে ছোটদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা ও আরও নানা চমক।
গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে শুরু হয় ৪৫ তম কলকাতা বইমেলা। রয়েছে মোট ৬০০টি স্টল। লিটল ম্যাগাজিনের স্টল ২০০টি। এবারের থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। মেলায় ঢোকা ও বেরোনোর জন্য মোট ৯টি গেট রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর লেখা বইয়ের আদলেই তিনটি গেট রয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর নামে আলাদা একটি গেটও রয়েছে। ২টি গেট রয়েছে সত্যজিৎ রায় ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। একটি বিশ্ববাংলা গেটও রয়েছে।
করোনা প্রকোপে বন্ধ ছিল গতবারের মেলা। এবারও পূর্ব নির্ধারিত সময়ে করা যায়নি বাঙালির প্রাণের এই উৎসব। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় ১ মাস পিছিয়ে গিয়েছে মেলা।
স্বভাবতই দু’বছরেরও বেশি সময় পড়ে হওয়া বইমেলাকে ঘিরে উৎসাহের অন্ত নেই। শনিবার বিকেলের পরে বহু স্টলেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাভাবিক ভাবেই রবিবার ছুটির দিনে সেই ভিড় আরও বাড়বে বলেই আশা।
তবে বইমেলায় রাশিয়ার ফাঁকা স্টল উস্কে দিচ্ছে অন্য প্রশ্ন!
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পুতিনের দেশ। রোজ ধ্বংস, মৃত্যু, অশ্রুপাত। গোটা বিশ্ব ধিক্কার জানাচ্ছে মস্কোকে। বিভিন্ন দেশ থেকে উঠছে নিন্দার ঝড়। সল্টলেক করুণাময়ী সেন্ট্রাল পার্কের বুকে যে ‘অস্থায়ী রাশিয়া’, সেও কার্যত কোণঠাসা। বইমেলার মাঠে বেশ ফাঁকা রাশিয়ার স্টল। তা হলে কি প্রতিবাদে অনেকে এই স্টল এড়িয়ে যাচ্ছেন? উঠছে প্রশ্ন। যদিও এমনটা মানতে রাজি নন গোর্কি সদনের অনুষ্ঠান আধিকারিক এবং রাশিয়া বিশেষজ্ঞ গৌতম ঘোষ।
গৌতম ঘোষের কথায়, “যে রকম অন্যান্য স্টলেও লোক যাচ্ছে, রাশিয়ার স্টলেও তেমন লোক আসছে। একই লোক তো বিভিন্ন স্টলে ঢুকছে। এখানে তেমন কোনও প্রতিবাদী মানুষকে আমি দেখছি না, যে মনে করছে রাশিয়ার স্টলে সে ঢুকবে না, যুদ্ধ চলছে বলে। কেউই চায় না পৃথিবীর কোনও সমস্যা যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান হোক। রাশিয়ার যারা এখানে উপস্থিত রয়েছেন তাঁরাও সেটা চান না।”
বইমেলায় রাশিয়ার স্টল পরিচালনায় রয়েছেন রাশিয়ানরাই। তাঁদের দেশের সেরা বইয়ের সম্ভার দিয়ে সাজিয়েছেন নিজেদের বিপণীকে। টলস্টয়, দস্তয়েভস্কি কয়েকদিনের জন্য কলকাতার অতিথি। গৌতম ঘোষের কথায়, “এখানে রাশিয়ানরা তাঁদের দেশের সেরা সাহিত্যিকদের সম্ভার যতটা পেরেছেন নিয়ে এসেছেন। অনেক বই এনেছেন। জায়গা অনেকটাই কম, তাই অনেক বই সাজিয়ে রাখতে পারেননি। গতবারের তুলনায় এবার জায়গাটা কমেছে। গতবার তো রাশিয়াই ছিল থিম প্যাভেলিয়ন।”
যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থাকবেই। বই তার অন্যতম হাতিয়ার। রুশ সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালির কিসের আড়ি? মস্কোকে পুতিনের নামে কে চেনে, কলকাতা চেনে পুশকিন-গোর্কির নামে। আর সাহিত্য নিয়ে যুদ্ধ হয় না, সাহিত্যই তো যে কোনও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হাতিয়ার। তাই কলকাতা বইমেলায় রাশিয়ার স্টলে ভিড় থাকুক বা না থাকুক, ভ্লাদিমির নবকভ বা আলেকজান্ডার পুশকিনের সঙ্গে বইপ্রেমীদের বিরোধ থাকতেই পারে না!
উল্লেখ্য চলতি বছরে ২৮ ফেব্রুয়ারী শুরু হয়েছে ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। তৃতীয়বারের জন্য থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারী থেকে চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত। করুণাময়ীর সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গনে মেলা অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। সময়সীমা ১২ টা থেকে ৮ টা অবধি খোলা। রাজ্য সরকার নির্ধারিত যাবতীয় কোভিড প্রোটোকল মেনে মেলা আয়োজিত হয়েছে এবারের কলকাতা বইমেলা।বিগত বছর বইমেলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই এই বছর অনেকটাই চ্যালেঞ্জ বলছেন গিল্ড সদস্যরা। মাস্ক ছাড়া মেলা প্রাঙ্গনে ঢোকা যাবে না।
কলকাতা বইমেলায় এই বছর থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। এই বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা হচ্ছে। গত মাসে বইমেলা শুরু আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে থিম কান্ট্রি বাংলাদেশের লোগো উন্মোচন হয়েছে। যেটি শিল্পরূপ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পী মাসুম রহমান। বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ডক্টর কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী স্মরণ করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রহমানকে। কলকাতা বাংলাদেশের এক অনন্য বন্ধু যার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত সেই বিষয়ে জানালেন তিনি। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২২-এর পরিবর্তিত সময়সূচি ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এসোসিয়েশন জেনেভার স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশের ৪২ জন প্রকাশক এবার উপস্থিত রয়েছেন। ৮৫টি স্টল এবার বাংলাদেশের রয়েছে । প্রায় ৬০০ টি স্টল থাকবে। লিটিল ম্যাগাজিন এর প্রায় ২০০ টি স্টল থাকবে বইমেলায়। ৯ টি গেট থাকবে।বাংলাদেশ ছাড়াও থাকছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি, ইরান, স্পেন,আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং অন্যান্য ল্যাতিন আমেরিকার দেশ। রাজ্যের এবং দেশের ভিন্ন প্রকাশকরাও অংশগ্রহণ করছেন।
কলকাতা বই মেলার প্রথম রবিবারের ছবিগুলি তুলেছেন দেবদ্যুতি হালদার।