দেশের সময় , বনগাঁ: পেশায় আইনজীবী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে এবার প্রথম। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তিনি নতুন মুখ। এবারের বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনে তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও তাঁর বাড়ি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তগত ঠাকুরপল্লী এলাকায়। ওই ওয়ার্ডটি এবার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁকে অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়াতে হচ্ছে। ভোটে তাঁর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাম প্রার্থী সুব্রত বিশ্বাস ,কংগ্রেস প্রিয়ব্রত চৌধুরী ও বিজেপি প্রার্থী অন্বেষা সাহা ।
লড়াই শক্ত হলেও মতুয়া গড় ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল প্রার্থী । তাই প্রচারে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না তিনি । প্রতিপক্ষের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে রীতিমতো প্রচারে শান দিতে ব্যস্ত জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস৷
১৯৮৮ সালে বনগাঁ কলেজের ছাত্র হিসেবে তখন সিআর পদে ৪ বছর ছাত্র পরিষদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সুরেন্দ্রনাথ ল কলেজে পড়ার সময়েও ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের এসসি, এসটি, ওবিসি সেলের বনগাঁ শহর সভাপতির পদে ছিলেন।
বর্তমানে তৃণমূলের লিগ্যাল সেলের বনগাঁ মহকুমার সাধারণ সম্পাদক এবং দলের এসসি, এসটি সেলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। রাজনৈতিক পরিমন্ডলের পাশাপাশি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস সারা ভারত মতুয়া মহা সংঘের সাধারণ সম্পাদক এবং মতুয়া উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য। এছাড়াও, তিনি বনগাঁ আদালতের সরকারি আইনজীবীদের মধ্যে একজন।
বনগাঁর ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি মূলত দীনবন্ধুনগর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। শেষ পুরসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডটি তৃণমূলের দখলে ছিল। যদিও শেষ লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে পিছিয়ে যায় তৃণমূল। প্রসেনজিৎবাবুর আশা, সেই জায়গা থেকে নিজেকে তুলে এনে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে জয়ী হবেন তিনি। কারণ, প্রার্থী হবার অনেক আগে থেকেই তিনি ওই এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
এবার মতুয়া গড় ধরে রাখতে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বনগাঁ আদালতের আইনজীবী প্রসেনজিৎ-কে । স্বচ্ছ ভাবমূর্তি হিসেবে এলাকায় তাঁর আলাদা পরিচয় রয়েছে । আর তা পুঁজি করেই ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী । তবে জায়গা ছাড়তে নারাজ প্রসেনজিতের প্রতিপক্ষরাও । তাঁরাও সমানে প্রচার করে চলেছেন ওয়ার্ডের বিভিন্ন প্রান্তে । তাই চতুর্মুখী লড়াইয়ে জমে উঠেছে বনগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ।
এই বিষয়ে কংগ্রেস প্রার্থী প্রিয়ব্রত চৌধূরী বলেন, “এই ওয়ার্ডের মানুষ এবার কংগ্রেসকেই সমর্থন করছেন, কারণ মিছিল মিটিংএ মানুষের জমায়েত সেই কথাই বলছে। তাই আমি আশাবাদী, এবার মানুষ আমাকেই জয়ী করবে । তৃণমূলের মধ্যে কী রয়েছে, তা নিয়ে ভাবছি না ।” তাঁর কথায়, “কংগ্রেস তার নিজের গতিতে চলে । সেখানে কোনও ব্যক্তি বিষয় নয় । বিষয়টা হল মানুষের সিদ্ধান্ত । মানুষ তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে । তাঁরা চাইছেন এলাকার একজন মানুষ ভোটে জিতে কাউন্সিলর হোক । যাতে তাঁদের আপদ-বিপদে সবসময় পাশে পান সেই জনপ্রতিনিধিকে ৷”
কংগ্রেস প্রার্থীকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না প্রতিপক্ষরা ৷ তৃণমূল প্রার্থী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ” এটা মানুষের উন্নয়নের গড়, মতুয়াগড় । যেভাবে আমি এই ওয়ার্ডে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানুষের পাশে থেকে দেখছি, তাতে জয়ের বিষয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত । কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছি না।মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দেবে। মানুষ দু-আছলাকে এবার ছুড়ে ফেলে দেবে এই ওয়ার্ড থেকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের অন্তরে আছেন মানুষের মনে আছেন সবসময় । তাই বিশ্বাস, মানুষ আশীর্বাদ করবেন আমাকেই”।
ভোটারদের দুয়ারে গিয়ে আগামী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছেন তৃণমূল প্রার্থী । প্রচারেও ব্যাপক সাড়া মিলছে বলে দাবি তাঁর । ফলে জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী পেশায় আইনজীবী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। তবে কংগ্রেস প্রার্থীকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না শাসক থেকে বাম প্রার্থী, কেউই । প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে কার্যত লড়াইয়ের মধ্যেই রাখছেন না তারা । ফলে চতুর্মুখী লড়াইয়ে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, তা জানা যাবে ভোট গণনার দিন ।