Kabir Suman: ‘কল রেকর্ড করার কথা আমাকে ওই সাংবাদিক বলেননি’, ফের বিতর্ক উসকে দিলেন কবীর সুমন, বিতর্ক শেষ হোক, আবারও ফেসবুকে সরব কুণাল

0
781

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কবীর সুমনের গলায় একটি অডিও ক্লিপ গত কয়েকদিনে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বাংলায়। অকথ্য ভাষায় সেখানে শিল্পীকে গালিগালাজ করতে শোনা গেছে।

রবিবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্ষমা চেয়েছিলেন।কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের দ্বিতীয় পোস্ট কবীর সুমনের। ওই দ্বিতীয় পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘একটি বিশেষ চ্যানেলের এক প্রতিনিধি যখন আমাকে ফোন করেন তখন তিনি কিন্তু আমাদের দু’জনের কথাবার্তা রেকর্ড করার কথা আমায় বলেননি। আমার অনুমতি নেননি।’

এই গালাগালি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই একদফা পিছু হঠেছেন কবীর সুমন। ফেসবুকে পোস্ট করে সর্বসমক্ষে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। এর পরে ফের আজ আরও একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে লেখেন, “একটি বিশেষ চ্যানেলের এক প্রতিনিধি যখন আমায় ফোন করেন তিনি কিন্তু আমাদের দুজনের কথাবার্তা রেকর্ড করার কথা আমায় বলেননি, আমার অনুমতি নেননি। ….. লুকিয়ে রেকর্ড করা একটি অডিও ক্লিপ যেমন অনেকে শুনেছেন। শুনে যাঁরা দু:খ পেয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এই অধম।”

গতকালও অবশ্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার একটি পোস্ট কবীর সুমন করেছিলেন। তবে ক্ষমা চাইলেও তাতে তিনি এও জানান, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘অপমান’ তিনি মানতে পারেননি কোনও ভাবেই। সেই সঙ্গে বলেন, এই ব্যাপারে আগামীদিনে তিনি চুপ করে থাকবেন। শেষমেশ চুপ করে থাকলেন না। কল রেকর্ডের অনুমতি না নেওয়ার বিষয়টি জানালেন ফেসবুকে।

সুমন সেই পোস্টে লেখেন, “যে চ্যানেল ও দল দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশের মুসলমানদের আক্রমণ ও অপমান করে চলেছে, যে দলের কোনও কোনও নেতাকে বলতে শোনা গেছে অমুক সম্প্রদায়ের মৃত মহিলাদের কবর থেকে তুলে… ইত্যাদি ইত্যাদি, তাদের গালাগাল দেওয়ার অধিকার আমার নেই।

যে দলের এক নেতা, বর্তমানে বিধায়ক, মুখ্যমন্ত্রীকে, যিনি একজন মহিলা, সমানে “বেগম” বলে যান, নন্দীগ্রামকে বলে যান “মিনি পাকিস্তান” তাঁর দলকে মুখের কথায় আক্রমণ করতে পারব না আমি। তখন বিরোধীকে বলতে দিতে হবে। আমাদের সুংখ্যালঘুদের যারা যুগ যুগ ধরে “কাটুয়া” “নেড়ে” বলে চলেছে তাদের আছে তা বলার অধিকার। কারণ? “বিরোধী”? মানে মুসলমানদের বিরোধী?এদিকে আমিও তো বিজেপি আর এস এসের বিরোধী, আমার বেলা কী হবে। বিজেপি আর এস এসের করা কটুক্তি তাহলে অনুমোদনযোগ্য। আমি কটুক্তি করলে গোঁশা, মুণ্ডপাত। এই তো?”

এখানেই থামেননি সুমন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি না হয় তাঁর ‘খিস্তি’র জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা অমুক সম্প্রদায়ের মহিলাদের কবর থেকে তুলে ইত্যাদি ইত্যাদি করতে বলেন, সে জন্য তাঁরা দুঃখপ্রকাশ করবেন কি?

সেই সঙ্গে তাঁর নিজের গালিগালাজের উদ্দেশ্য আদতে কী ছিল, তাও ব্যাখ্যা করেছেন সুমন। লিখেছেন, “কেউ যদি আমায় শুয়োরের বাচ্চা বলে তো সেটা স্রেফ রাগের কথা। সে নিশ্চই ভাবে না আমার বাবা-মা শুয়োর। তেমনি মা তুলে গালাগাল খুবই গর্হিত, কিন্তু তার মধ্যে কারুর মায়ের সঙ্গে বাস্তবিকই শয়ন করার অভিলাষ নেই, আছে স্রেফ গাল পাড়ার ইচ্ছে – যেটা গর্হিত।

তবে, অমুক সম্প্রদায়ের পুরুষদের কথা বলতে গেলেই তাঁদের সুন্নৎ এর বিষয়টি ঘোষণা করা বা তাঁদের মহিলাদের… ইত্যাদি ইত্যাদি করার ডাক দেওয়ার মধ্যেও শিষ্টাচারের মঙ্গলশংখ বেজে উঠছে কি? সেগুলিও কি গর্হিত নয়? যাই হোক, উত্তেজনা বাড়ানো নয়, প্রশমন। তাই দোষ কবুল।”

এর সঙ্গেই তিনি আরও লেখেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির নেতাও উপদেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ আমার বিরুদ্ধে ডান-বাম ঐক্যবদ্ধ। ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’ লিখেছিলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। ‘তিনি’ স্তরের নই আমি। কিন্তু যা দেখছি, আমিও পারলাম। যাই হোক উত্তেজনা বাড়ানো নয়, প্রশমন। তাই দোষ কবুল। অন্যপক্ষকে কিছু করতে হবে না। ধরে নিন খুব ভয় পেয়ে গেছি। খুব। আমি বুড়ো মানুষ এক ধাক্কাতেই কাত।’ সেই সঙ্গে কটাক্ষের সুরে তিনি লেখেন, ‘লুকিয়ে রেকর্ড করা একটি অডিও ক্লিপ যেমন অনেকে শুনেছেন, শুনে যাঁরা দুঃখ পেয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এই অধম। ইচ্ছে- তাঁদের নেমন্তন্ন করে খাওয়াই। বেশি না পরিমিত। করোনার ঝামেলা মিটলে। আশা করি অধমকে সে সুযোগ দেবেন।’

তবে তাঁর লেখায় ব্যঙ্গের ছোঁয়াও কম নেই। তিনি লিখেছেন, “ধরে নিন খুব ভয় পেয়ে গেছি। খুব। আমি বুড়ো মানুষ। এক ধাক্কাতেই কাৎ। তাই – না, বাবু, মারবেন না, ছেড়ে দিন।” পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন হিন্দুত্ববাদীদের একটি অন্যায় কাজের কথাও, “কাদের হাতে যেন কোপানো আর আগুনে পোড়া আফরাজুল যা বলছিলেন… তাঁর হত্যাকারীরা সেই স্বর্গীয় ঘটনাটর ভিডিও করেছিলেন প্রকাশ্যে। অনেকে দেখেছেন।”

প্রসঙ্গত, সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনালাপে কটুক্তির জন্য রবিবার সকালে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন কবীর সুমন। মনে করা হয়েছিল সেই বিতর্কে ইতি পড়ল। কিন্তু রেকর্ডিং করার অনুমতি চাওয়া হয়নি বলে ফের বিতর্ক উসকে দিলেন তিনি। যদিও ওই অডিও টেপে কবীর সুমনকে বলতে শোনা গিয়েছে ‘যা ব্রডকাস্ট কর’।

রবিবার দুপুরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল নিজের নেটমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন।

https://www.facebook.com/290249518083133/posts/1370576860050388/

‘আপনি শব্দের জাদুকর। আশা করি ইতি টানলেন…’ কবীর সুমনের পরপর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সরব হলেন কুণাল ঘোষ। রবিবার সকাল থেকেই পরপর কবীর সুমনের পোস্ট নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে নেট দুনিয়া। প্রথম পোস্টে ক্ষমা চেয়ে নিলেও তার কয়েক ঘন্টা পরেই ফের কবীর সুমন অভিযোগ তোলেন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁর অনুমতি ছাড়াই কল রেকর্ড করা হয়েছে।

https://www.facebook.com/290249518083133/posts/1370576860050388/

রবিবার সকাল থেকেই কবীর সুমনের ক্ষমা চাওয়ার পোস্ট সামনে আসে। মনে হয়েছিল, অডিও ক্লিপ বিতর্কে ইতি পড়ল। কিন্তু ঘন্টা খানেক পর ফের একটি ফেসবুক পোস্ট করে বসেন প্রবীণ গায়ক। সেখানে এক বিশেষ সংবাদ মাধ্যমকে নিশানা করে আক্রমণ শানান তিনি। যদিও শেষে ফের ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি।
সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সোচ্চার হলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে এবার অনেক শান্ত ভঙ্গিতে কবীর সুমনকে নীরব থাকার বার্তা দিলেন তিনি। লেখেন, কবীর সুমনকে অনুরোধ, বারবার পোস্ট করে কথা বাড়ানো কি খুব দরকার? বাংলা এবং বাঙালিসহ কোনো সুস্থ মানুষ আপনার ওই শব্দপ্রয়োগ সমর্থন করছেন না…’

তবে পরোক্ষভাবে কবীর সুমনের ক্ষোভের কারণকে সমর্থন জানালেন তিনি। লেখেন, ‘আপনার আপত্তিকর শব্দপ্রয়োগে আসল ক্ষোভের কারণই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে…’। অর্থাৎ কবীর সুমনের অভিযোগে যে যৌক্তিকতা আছে তা মনে করছেন কুণাল ঘোষ। কিন্তু আপত্তি জানাচ্ছেন ‘কবীর সুমনের শব্দচয়ন নিয়ে…’ পাশাপাশি এই যুদ্ধে ইতি টানার কথাও বলেন তিনি।
এর আগে যখন কবীর সুমনের অডিও সামনে আসে, তখন কুণাল ঘোষই ‘ক্ষমা চাওয়া’র রব তোলেন। শনিবার রাতেই সেই ক্ষমার কাজ শেষ করেন কবীর সুমন। কিন্তু তারপরে ফের করা পোস্ট নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

কুণাল তাঁর নাতিদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টের এক জায়গায় লিখেছেন, ‘কবীর সুমনকে অনুরোধ, বারবার পোস্ট করে কথা বাড়ানো কি খুব দরকার? বাংলা এবং বাঙালি-সহ কোনও সুস্থ মানুষ আপনার ওই শব্দপ্রয়োগ সমর্থন করছেন না। আপনার ক্ষোভ, আপনার যুক্তি অনেকেই সমর্থন করছেন। কিন্তু আপনার আপত্তিকর শব্দপ্রয়োগে আসল ক্ষোভের কারণই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।’ সব শেষে কুণাল আশা করেন, সংশ্লিষ্ট পোস্টেই বিতর্কের ইতি টানবেন শিল্পী। তিনি লেখেন, ‘যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তা নিন্দার। প্রতিবাদের। কবিতা ও গানের শব্দের জাদুকর সুমন ওই শব্দ ব্যবহারে ক্ষমা চেয়ে বিতর্ক শেষ করুন। আশা করি, শেষ পোস্টটিতে যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, যতই ভাষার মারপ্যাঁচ থাকুক, তাতেই আন্তরিকভাবে ইতি টানলেন আপনি।’

Previous articleDesher Samay ePaper দেশের সময় ই পেপার
Next articleTMC Picnic: পুরভোটকে সামনে রেখে বনগাঁয় একাধিক ওয়ার্ডে তৃণমূলের পিকনিক, কটাক্ষ করছে বিজেপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here