দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: শনিবার মুম্বইতে নতুন করে আক্রান্ত ৬ হাজার ৩৪৭ জন।
গত কালের থেকে ১২ শতাংশ বেড়েছে সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৭১। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও দেশে সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছিল বাণিজ্যনগরী। এবারও সেই পথেই এগোচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা এই সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্যে ওমিক্রনের হাতই দেখছেন। গতকাল বৃহমুম্বই পুরসভা জানিয়েছিল, একটি গবেষণাগারে যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, তার অর্ধেক ওমিক্রন আক্রান্ত। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া বিধি চালু করেছে উদ্ধব ঠাকরের সরকার।
বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সৈকত এবং পার্কে নাইট কারফিউ জারি। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শহরে জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। মহারাষ্ট্রে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫৪।
পিছিয়ে নেই দিল্লিও। গতকালের তুলনায় সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। শনিবার দিল্লিতে নতুন করে আক্রান্ত ২ হাজার ৭১৬ জন। চিন্তা বাড়িয়েছে সংক্রমণের হার। ৩.৬৪ শতাংশ। গত এক দিনে দিল্লিতে কোভিডে মারা গিয়েছেন এক জন। ২১ মের পর আজই এত জন আক্রান্ত হল রাজধানীতে। এর আগে ২১ মে দিল্লিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩,০০৯ জন। সেদিন দিল্লিতে মারা গিয়েছিলেন ২৫২ জন। তখন সংক্রমণের হার ছিল ৪.৭৪ শতাংশ। তবে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানালেন, এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ হাসপাতালে ভর্তির হার কম।
চলতি সপ্তাহে সোমবার পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৪৩৯। শনিবার তা বেড়ে হলো সাড়ে চার হাজার। অর্থাৎ, বিগত ছয় দিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় ১০ গুণ বেশি বৃদ্ধি দেখা গেল রাজ্যে। শুধু কলকাতাতেই দৈনিক আক্রান্ত ছাড়াল দু’হাজার। পাল্লা দিয়ে অস্বাভাবিক হারে সংক্রমণ বাড়ছে মহানগরী সংলগ্ন হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। শুধু তাই নয়, রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হারও ১০ শতাংশ ছাড়াল। বাড়ল মৃত্যুও।
গত বুধবার রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ হাজারের গণ্ডি পার করেছিল। বৃহস্পতিবার দু’হাজার আর শুক্রবার তিন হাজার ছাড়িয়েছিল। শনিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ হাজার ৫১২ জন। কলকাতাতেও গত বুধবার যেখানে সাড়ে পাঁচশোর কাছাকাছি দৈনিক সংক্রমণ ছিল, শনিবার তা বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ৩৯৮।
দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে জেলা ভিত্তিক তালিকায় কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় শুক্রবার নতুন আক্রান্ত পাঁচশোর কাছে পৌঁছেছিল। শনিবার তা বেড়ে দাঁড়াল ৬৮৮।
অস্বাভাবিক হারে বা়ডছে পশ্চিম বর্ধমানেও। শুক্রবার ওই জেলায় দৈনিক আক্রান্ত ছিল ১৩৮। শনিবার তা বেড়ে হল ২৪১। দৈনিক সংক্রমণ অনেক বাড়ল নদিয়া, বীরভূম এবং বাঁকুড়ায়। উত্তরবঙ্গের মালদহে শুক্রবারের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণ শনিবার কিছুটা কমলেও কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে বৃদ্ধি দেখা গেল।
কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া, হুগলিতে এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ। হাওড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক আক্রান্ত বেড়ে হল ৩৪৪। হুগলিতে শুক্রবারই ১০০ পার করেছিল নতুন সংক্রমণ। শনিবার তা হল ১৬৫। বুধবার ১০০-র গণ্ডি ছাড়িয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। শনিবার তা আরও বেড়ে দাঁড়াল ১৯৮।
রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে সোমবারই তা ছিল আড়াই শতাংশের একটু উপরে। বৃহস্পতিবার সাড়ে পাঁচ শতাংশের কাছে পৌঁছে শনিবার তা হল ১২.০২ শতাংশ। এ দিকে, শুক্রবারের তুলনায় কোভিড পরীক্ষা কমেছে শনিবার। এ দিন রাজ্যে ৩৭ হাজার ৫৪২ জনের কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছে।
রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছেন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার থেকে এক লাফে সক্রিয় রোগী বেড়ে হল ১৩ হাজার ৩০০। কলকাতায় সোমবার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজারের কাছাকাছি ছিল। শুক্রবার তা বেড়ে প্রায় পাঁচ হাজার হয়েছে। শনিবার আরও বেড়ে হল ৬ হাজার ৪৪২।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে নয় জনের। এর মধ্যে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় দু’জন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিডে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ হাজার ৭৭৩ জন। শনিবার সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯১৩।