দেশের সময়. বনগাঁ: সামনেই রাজ্য জুড়ে পুরসভার নির্বাচন হবে। এবারের পুর নির্বাচনের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে বনগাঁ।সম্প্রতি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের শঙ্কর আঢ্যকে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোপাল শেঠকে।এর পর থেকেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, শঙ্কর ও গোপালের দুই গোষ্ঠী ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না। তখন থেকেই জেলার অন্দরে কানাঘুষো নির্দল প্রার্থী হিসাবে পুরভোটে লড়তে পারেন শঙ্কর। অর্থাৎ প্রাক্তন পুর প্রশাসক দলের টিকিট না পেলে নিজের উদ্যোগে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন এবারের পুর ভোটে। আর তারই প্রেক্ষিতে বনগাঁ জুড়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। এই প্রসঙ্গে
বৃহস্পতিবার গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় এক কর্মীসভার আগে তৃণমূলের বনগাঁ লোকসভা আসন এলাকার সভাপতি আলোরানি সরকার মন্তব্য করেন দলের বিরুদ্ধে কেউ গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার কথা যদি ভাবেনও ‘চামড়া আমি গুটিয়ে নেব’, পুর নির্বাচন প্রসঙ্গে এমই হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংবাদমাধ্যমকে আলোরানি জানান, ‘‘দলের কোনও সদস্য যদি কোনওরকম গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে তাঁদের চামড়া আমি গুটিয়ে নেব। দল ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নেবে। গোঁজ প্রার্থী আমরা দিতে দেব না। দল স্বচ্ছ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা আছে, এমন মানুষদের ভোটে দাঁড় করাবে। আমরাও তার হয়েই লড়াই করব, তাঁদের জিতিয়ে আনব।’’
এদিন দলের ভিতরের কোন্দল নিয়েই আলোরানিকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। তারই উত্তরে আলোরানি বলেন, ‘দলের ভিতরে কোনও সমস্যা নেই। শঙ্কর খুব ভাল ছেলে। ওকে বোঝালে বোঝে। আমার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না ওর সঙ্গে কাজ করতে।’ কিন্তু, গোঁজ প্রার্থী দিয়ে ভোটে লড়ার পর পুরসভা বের করে নিতে পারে বিরোধীরা। এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আলোরানির মন্তব্য নিয়ে পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসন শঙ্কর আঢ্য সংবাদিকদেরকে বলেন, ‘‘দলের উচ্চপদে থাকা নেতৃত্বের ভাষা সংযত করা দরকার, এমন ভাষা হওয়া উচিত নয়। কে, কার চামড়া গোটাবে, তা ভোটের পর দেখা যাবে।’’
এই মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বনর্গাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘এ সব তৃণমূলের বেক্তিগত বিষয়। তাঁরা কাকে চামড়া গোটাবে, কাকে মারবে, ওদের ঠিক করে নিতে দিন। বনগাঁর মানুষ এবার ভারতীয় জনতা পার্টির হাতে পুরসভা তুলে দেবে। তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে মানুষ এখন থেকেই ভয় পাচ্ছেন।’’
বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে একমাত্র স্বরূপনগর আসনটি তৃণমূল দখল করতে পেরেছে ২০২১ সালে। তার বাইরে কল্যাণী, হরিণঘাটা, গাইঘাটা, বাগদা, বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ— ছ’টি বিধানসভাই বিজেপি-র দখলে। গত দু’বছরে বহু তৃণমূল নেতা, কর্মী বিজেপি-তে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের অন্যতম আলোরানি নিজে। মুকুল রায়ের হাত ধরে দল ছেড়েছিলেন বলে খবর। পরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন তিনি। আলোরানি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর বনগাঁয় বহু বিরোধী নেতা কর্মী তৃণমূলে ফিরছে বলে খবর। কিন্তু, দলের ভিতর যে কোন্দল থেকেই যাচ্ছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।