দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুম, দাম, শব্দের দামামা । এদিক ওদিক থেকে আতশবাজির রোশনাই ও শব্দে কিছুটা হলেও অন্যদিনের থেকে আলাদা ছবি ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। পরিবেশ বান্ধব বাজি না শব্দ বাজি, গ্রাম-শহর মাতল দুইয়েই। বনগাঁ সীমান্ত থেকে কলকাতা শহরের একাধিক প্রান্তে চলেছে বাজি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি।
তোপ বেরোচ্ছে এক একটা। যুদ্ধে যেমন একের পর এক বোমার শব্দে কান পাতা ভার হয়, এদিনের বনগাঁ, হাবড়া,বারাসত সহ কলকাতার পরিস্থিতিও অনেকটা তাই। পুরো কলকাতা শহরেই কম বেশি বাজির তাণ্ডব চলছে। তবে বিশেষত বিস্তীর্ণ বিধাননগর কমিশনারেট, কসবা, টালা, নারকেলবাগান সহ একাধিক এলাকায় সেই মাত্রাটা অনেক বেশি।
পরিবেশ রক্ষার্থে বাজির বিরুদ্ধে লড়াই করা সবুজ মঞ্চের তরফে নব দত্তের কথায়, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে। এমনকি জেলা থেকেও অভিযোগ এসেছে মাত্রারিক্ত বাজি ফাটানোর। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এমনকি ২০১৯ সালে যখন করোনার কোনও গন্ধ ছিল না সেই সময়েও এত বাজি ফাটেনি, যা এবছর ফাটছে।
কালীপুজোর রাতে বাজির শব্দে কান পাতা ভার হতো বছর দুই আগেও। কিন্তু গত বছর থেকে সেই ছবি কিছুটা হলেও পরিবর্তন ঘটেছে। না, পরিবেশের দূষণের কারণে নয়। করোনার প্রকোপে আগের বছর কমেছিল বাজির তাণ্ডব। এবছর আইনি লড়াইয়ে বারবার আটকে গেছে বাজির বিক্রি। তারপরেও বাজি তাণ্ডব চলল এবারে।
ফুলঝুড়ি, রঙ মশাল, তুবড়ি, চরকির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফাটছে কালি পটকা, চকলেট বোমা, সেল। কোথাও বাড়ির ছাদে, আবার কোথাও বা গলির মধ্যে। রাস্তার ওপর বাজির তাণ্ডব অদেখাই থেকে গেল এবারের কালীপুজোয়। তবে শব্দ যেন থামার নাম নেই।
সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করায় মাথায় হাত পড়েছিল বাজি বিক্রেতা থেকে খদ্দেরদের। তবে শেষ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কিছুটা আশার আলো দেখেছিল বাজি বিক্রেতারা। কোথাও লুকিয়ে আবার কোথাও প্রকাশ্যেই শেষ দুদিন দেদার বিকোয় বাজি। প্যাকেটের ওপর সবুজ বাজি ছাপ্পা মারা থাকলেও সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকেরই। তাও তার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে বাজি। অফিস ফেরৎ মানুষ কিনেছেও সেই বাজি।
কিন্তু তারমধ্যে কতটা পরিবেশ বান্ধব বাজি ছিল আর কতটা শব্দবাজি সেটাই ছিল আসল পরীক্ষা। শহরবাসীর কাছে ছিল এক অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। সচেতনতার চ্যালেঞ্জ। সেই পরীক্ষায় এবার অনুত্তীর্ণই থেকে গেল গ্রাম ও শহরবাসী।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাজি ফেটেছে ভালোই। আগের বার যেমন একদম বাজি ফাটেনি, এবার কিন্তু চিত্রটা আলাদা। পরিস্থিতি পাল্টেছে, তাই এবার মানুষ বাজিও ফাটাচ্ছে। ২০২০ সাল ছিল পুরো অন্যরকম। করোনার কারণে কিংবা আনলক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চলা কলকাতাবাসী বাজি ফাটাতে পারেননি।
তবে এবার সেই অবস্থা পাল্টেছে। বাজি ফাটানোর ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়ে সবুজ বাজি ফাটানোর পক্ষেই রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রাত ৮ টা থেকে ১০ টা দু’ঘন্টার ছাড়। কিন্তু বাস্তব চিত্র এই দুঘন্টার বিধিমালা যেন হাস্যকর, মনে করছেন অনেকেই৷
কিন্তু বাস্তবে এদিন সন্ধ্যা হতেই কম-বেশি বাজি ফাটানো শুরু করে গ্রাম ও শহরবাসীরা। রাত বাড়তেই বেড়েছে প্রকোপ। গ্রিণ বাজি ভুলে শব্দবাজিতেই মেতে ওঠে গ্রাম থেকে শহরবাসী। এক কথায় শব্দ দানবে কেঁপেছে বনগাঁ থেকে কলকাতা।