দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইসলাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম নয় বলে অভিমত জানালেন সেদেশের তথ্যমন্ত্রী মুরাদ হাসান । পড়শিদের মৌলবাদের দাপট ক্রমশঃ বেড়ে যাওয়া, দুর্গাপুজোর সময় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু  হিন্দুদের ওপর  পরিকল্পিত হামলার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাত্পর্য্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। মুরাদ বলেছেন, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাবিত ১৯৭২ সালের সংবিধান ফেরানোর কথা বলেছেন তিনি। বাংলাদেশ ধর্মীয় মৌলবাদীদের অভয়ারণ্য হতে পারে না বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের শিরায় শিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বইছে। যে কোনও মূল্যে ১৯৭২ এর সংবিধান ফেরাতে হবে। আমি পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবিত সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দাবি করব। আর কেউ না বলুক, মুরাদ একথা সংসদে বলবেই।

মুজিবুরের কনিষ্ঠতম পুত্র শেখ রাসেলের ৫৭ তম জন্মবার্ষিকীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মৌলবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানিয়ে মুরাদ বলেন, ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রধর্ম বলে মনে করি না। আমরা ১৯৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্লামেন্টে ওই বিল কার্যকর করব। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রবর্তন করা ১৯৭২ সালের সংবিধানে শীঘ্রই ফিরে যাব আমরা। এই বাংলাদেশ এক অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে প্রত্যেকে তাঁর নিজের ধর্ম পালন করবে।

সংবিধানে ইসলামকে  রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করায়  প্রয়াত সামরিক শাসকদ্বয় হুসেন মহম্মদ এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে ধর্মের নাম দেশে বিভাজন ঘটানো, হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ায় মুরাদ কাঠগড়ায় তোলেন বিএনপি-জামাত জোটকেও।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা  উদযাপন পরিষদ দুর্গাপূজার সময় বিগ্রহ ভাঙচুর, মন্ডপে মন্ডপে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেছে। সংগঠনের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবেইদুল কাদের আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তারা সব জানেন। তবে কেন অপরাধীরা সাজা পাচ্ছে না! পরিষদের দাবি, তাদের সুরক্ষা  নিশ্চিত করতে  আইন চাই, জাতীয় সংখ্যালঘু কাউন্সিল গড়তে হবে।

প্রঙ্গত, বাংলাদেশে অশান্তি অব্যাহত।  ফেসবুকে সংবেদনশীল ইস্যুতে এর যুবকের আপত্তিকর পোস্টের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রংপুরে ২০টির ওপর হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা । অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান স্থানীয় মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ফেসবুকে এক হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্ট্যাটাস পোস্টের অভিযোগ ওঠে। সেটি ভাইরাল হয়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ তার বাড়ির নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের ক্রোধের শিকার হন তার প্রতিবেশীরা। তাদের ঘরবাড়ির ওপর হামলা করে তারা। ২০টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কেউ এঘটনায় হতাহত হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। রবিবার রাতে পীরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ঘটনাটি ঘটেছে চলতি অশান্তি পর্বে দুজন হিন্দু হত্যার  দুদিনের মাথায়।

সোস্যাল মিডিয়ায় কুমিল্লার দুর্গাপুজোর মন্ডপে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগের ফুটেজ ছড়ানোর পর থেকে হিংসায় অশান্ত পড়শী দেশের নানা জেলা। হাজিগঞ্জে মন্দিরে হামলা রুখতে শপাঁচেক লোকের মিছিলে পুলিশের গুলিচালনায় চারজন মারা যায়। শনিবারও ঢাকা শহরতলিতে মিছিল করে চরম দক্ষিণপন্থী সংগঠন ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলন। কুমিল্লার ঘটনায় দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ আহত বলে তাদের দাবি।  মন্দির কমিটির এক সদস্যরকে মারধর, ছুরির ঘায়ে হত্যা করে হামলাকারীরা। শনিবার সকালে আরেক  হিন্দুর একটি ডোবার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে জানান জেলা পুলিশ প্রধান শাহিদুল ইসলাম।

শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রামে উন্মত্ত দুষ্কৃতীদের বিক্ষোভ, ইটপাথর সামলাতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ব্যবহার করতে হয় পুলিশকে। মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও কোথাও কোথাও বন্ধ রাখতে হয় গুজব, উত্তেজনা ছড়ানো ঠেকাতে।

ফেনি  জেলা থেকেও হিন্দুদের  দোকানপাট, মন্দির ভাঙচুর, লুঠপাট হওয়ার খবর এসেছে। দুর্গাপুজার মন্ডপে হামলার  প্রতিবাদ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়। বিক্ষোভকারীরা আক্রান্ত হন। জখম হন অন্ততঃ ৪০ জন। ইসকনের মন্দিরেও হামলা চালানো হয়েছে।

পরিকল্পিত হিংসার নিন্দায় দেশব্যাপী অনশন ধর্মঘটের ডাক  দিয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা । বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল ২৩ অক্টোবর এই কর্মসূচি পালন করবে। ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লায় প্রতিবাদ  সভা হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলের  সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। শনিবারও চট্টগ্রামে তাঁরা ৬ ঘন্টার হরতাল পালন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here