পিয়ালী মুখার্জী ও আত্মজিৎ চক্রবর্তী , বনগাঁ: শুক্রবার বেঙ্গল টেলারিং লেবার ইউনিয়ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয়। রাজ্যের স্কুল পোশাক নীতির বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ সভা বা সম্মেলন বলে জানিয়েছেন ওই শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা৷ দেখুন ভিডিও:
বর্তমান রাজ্য সরকার তারা প্রথমবার ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজ্য জুড়ে প্রচুর স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলে বিভিন্ন প্রকল্পে। সেগুলির মধ্যে প্রধান ছিল সরকারি স্কুল গুলিতে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি পোশাক। তাতে কাজ পেয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। যা তাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করেছিল। তাদের বাড়ির মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই পোশাক শিল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন।
এই কাজে কাঁচা মালের জন্য অর্থাৎ কাপড়ের জন্য ভিন রাজ্যে নির্ভর করতে হতো। তাতে পরনির্ভরশীল হতে হতো ও খরচও বেশি হতো। তাই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার থেকে রাজ্যের তৈরি কাপড়েই স্কুলের পোশাক হবে, এবং তার টেন্ডার পুরোটাই দেওয়া হয়েছে রাজ্য সংস্থা তন্তুজের হাতে।
এতে ওই স্কুল পোশাক তৈরি শ্রমিকদের মাথায় হাত পড়েছে। বড় সংস্থা কাজ করলে অনেক মানুষ কাজ পাবেন ঠিক কিন্তু এই শ্রমিকরা চরম দুর্গতির মধ্যে পড়বেন বলে সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য।
রাজ্যে তুলোর চাষ হবে, বিভিন্ন পাওয়ারলুম, হ্যান্ডলুম দিয়ে তারা কাজ করবে, তাই এই ছোট ছোট স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলো সঙ্কটে পড়বে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে এদিনের সন্মেলনে সংবাদ মাধ্যমকে জানান।
এই নতুন শ্রমিক সংগঠনের বক্তব্য রাজ্যে সরকার তাদের নিজেদের পূর্ব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।
রাজ্য শ্রমিক সগঠনের কোষাধ্যক অরিজিৎ সাহা বলেন নতুন এই প্রকল্পে বিপদে পড়বে একলাখের উপর পোশাকশিল্পের শ্রমিক। তাদের কথা যেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করেন। যাতে তারা কাজ না হারান। এই জন্যই তাদের আজ এই সম্মেলন। তারা মুখ্যমন্ত্রী কে লিখিত আবেদনেও জানিয়েছেন।
বেঙ্গল টেলারিং লেবার ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী জানান বিগত দশ বছর ধরে তারা যে ভাবে কাজ করে এসেছেন সেভাবেই তারা কাজ করে যেতে চান। তারা বার বার মুখ্যমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন, দেখা করে নিজেদের দাবি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার বক্তব্য পুরো কাজ টা তন্তুজ কে দিলে তার বড় কোনো জায়গা থেকে পোশাক তৈরি করিয়ে স্কুল গুলিতে বিতরণ করবে, তাতে এত দিনের পোশাক শিল্পীদের যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে রাজ্য জুড়ে সেই কয়েক লক্ষ্ শ্রমিক প্রবল সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। তাই তিনি চান রাজ্য সরকার এটা ফিরিয়ে নিক বা এই শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হোক।
এই ইউনিয়নের হুগলীর এক সদস্য শেখ নসির বলেন তারা যেন কাজ না হারান সেটাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন তাঁদের।
তারা আরও জানান গতবছর থেকে এখনও পর্যন্ত মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ আছে, টা সত্ত্বেও শ্রমিক রা যাতে আর্থিক সংকটে না পড়েন তার জন্য কাজ চালিয়ে গিয়েছেন, তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে। জমি জমা বিক্রি করে মূলধন জোগাড় করে তারা ভিন রাজ্য থেকে কাপড় কিনেছেন। সেই পোশাক ও কাপড় যদি কাজে না লাগে তাহলে তারা সর্বশান্ত হবেন। তাঁদের শেষ সম্বল টুকুও তাঁরা বিনিয়োগ করে বসে আছেন। তাই তাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের কাছে বিনীত অনুরোধ এই বিষয় গুলি মাথায় রেখে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পুরুষ ও মহিলাদের জন্য যেন ভাবা হয় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা হয়।
এদিনের সন্মেলনে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার, চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত, বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দাস,শ্রমিক নেতা নারায়ণ ঘোষ সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
বেঙ্গল টেলারিং লেবার ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তীর কথায়, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার, চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত এবং শ্রমিক নেতা নারায়ণ ঘোষেরা এদিন তাঁদেরকে এই বলে আশ্বস্থ করেছেন যে শ্রমিকদের এই দাবি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্ববিস্তারে জানাবেন৷