পার্থ সারথি নন্দী, পেট্রাপোল: সুখবর আগেই এসেছিল ওপার বাংলা থেকে। দুর্গাপুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গকে ইলিশ উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার।সেই মতো শেখ হাসিনা সরকারের পুজোর উপহার পদ্মার ইলিশ এলো রাজ্যে ৷
পেট্রাপোল শুল্ক দফতর সূত্রে জানাগিয়েছে বুধবার রাতে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ১৮ টি ট্রাকে প্রবেশ করেছে ৯০ টনের বেশি পদ্মার ইলিশ । আজ বৃহস্পতিবার বিকালে আরও তিন ট্রাকে ১৬ টন ইলিশ ঢুকেছে পেট্রাপোল স্থল বন্দরে৷ দেখুন ভিডিও
সূত্রের খবর এবছর বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে আসছে দু’হাজার আশি মেট্রিক টন ইলিশ। ধাপে ধাপে ওই ইলিশ এ রাজ্যে এসে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক।।এ নিয়ে গত সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকার সচিবালয়। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ রফতানি করা যাবে বলেও জানিয়েদেয় হাসিনা সরকার।
বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ওই বিপুল পরিমাণ ইলিশ এ রাজ্যে আসার খবরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বাঙালি। তবে ওই ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এদিন ট্রাক বদলে এই ইলিশ রওনা দিয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের পাইকারি মাছ বাজারের উদ্দেশ্যে।
আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দিনই এই ইলিশ মাছ ভারতে আমদানি হতে থাকবে। বাংলাদেশের এই ইলিশ আমদানির খবরে খুশির হাওয়া ইলিশপ্রিয় বাঙালীদের মনে। খুশি মাছ ব্যবসায়ীরাও।
ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের কাছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। একসময় বর্ষার শুরু থেকে প্রতিদিন টন টন ইলিশ আমদানি হতো ভারতে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হতো। গত কয়েক বছর ধরে ।
বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সেদেশ থেকে ইলিশ মাছ আসা বন্ধ রয়েছে।
অনেক আবেদনের পর গত বছর পুজোর আগে দু’ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানী করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। এবছরও যাতে ইলিশ রপ্তানীতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেয়, তারজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এদেশের ইলিশ আমদানিকারীরা। অবশেষে সেই আবেদনে সাড়া দেয় বাংলাদেশ সরকার।।
২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব তানিয়া ইসলাম এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, বাংলাদেশ সরকার পুজো উপলক্ষে এবছর ভারতে ২০৮০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানীর অনুমতি দিল। ৫২ টি সংস্থার মাধ্যমে (প্রত্যেকের জন্য ৪০ মেট্রিক টন বরাদ্দ) এই মাছ ভারতে রপ্তানী হবে। ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এই মাছ রপ্তানী করা যাবে।
পেট্রাপোল সীমান্তের ক্লিয়ারিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী এবং ব্যাবসায়ী প্রদীপ দে’র কথায় , বাংলাদেশের হাসিনা সরকার পশ্চিমবঙ্গের ভোজন প্রিয় বাঙালীর জন্য পুজোর উপহার স্বরুপ পদ্মার ইলিশ পাওয়ায় তাঁরাও খুশি৷দু’দেশের সম্পর্ক যে প্রকৃত বন্ধুর তা প্রমান হলো,প্রথমে হাঁড়িভাঙা আম তারপর এবার ইলিশ আদান প্রদানের মাধ্যমে৷
ভারতের ইলিশ আমদানিকারী সংস্থার পক্ষে ক্লিয়ারিং এজেন্ট ফিরোজ মন্ডল জানান, ‘বাংলাদেশ সরকারের জারি করা নির্দেশিকার ভিত্তিতে বুধবার প্রথম পর্যায়ে ১৮ টি ট্রাকে ৯০ টন ইলিশ ভারতে ঢুকেছে।এবং বৃহস্পতিবার বিকালে আরও ১৬টন ইলিশ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছায়। এরপর সমস্ত সরকারি নিয়ম সম্পন্ন করে এদিন সন্ধেয় পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে মাছের ট্রাক ভারতীয় সীমান্তে এসে পৌঁছায়।’
২০১২ সালে বাংলাদেশ এ দেশে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে মাঝে মাঝে পুজোর আগে ইলিশ এসেছে। গত বছর প্রায় ৫০০ টন ইলিশ এসেছিল। তবে এত বিপুল পরিমাণ ইলিশ শেষ কবে এ দেশে এসেছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। বিক্রেতাদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে বাজারে ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তা অনেকে নিমরাজি হয়েই কিনছেন। বিক্রেতাদের আশা, বাংলাদেশের ইলিশের বিক্রি বাড়বে।
‘এবছর যে ইলিশ আমদানি হচ্ছে, তার ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কিলোগ্রাম। পাইকারি বাজারে এর দাম কিলোপ্রতি ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।’
এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হাঁড়িভাঙা আম উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা পেয়ে আপ্লুত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হাসিনাকে বাংলায় চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সেই সময় হাঁড়িভাঙা আমের স্বাদ পেয়ে আহ্লাদিত রাজ্যের মানুষজন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি ইলিশ পাঠানোর আবদারও জানিয়েছিলেন।
সেই আবদারই রাখলেন বন্ধু দেশের প্রধান। ৷
আর বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আগেই আসতে শুরু করেছে সেই অনির্বচনীয় উপহার, পদ্মার ইলিশ।
এমনিতেই এখন বাংলার বাজারে রুপোলি শস্যের আকাল। চড়া দাম দিয়েও মিলছে না ইলিশের সেই স্বাদ। তবে ওপার বাংলার ইলিশ বাজারে পৌঁছানোয় সেই খরা মিটবে বলেই আশাবাদী মৎস্যপ্রিয় বাঙালি ৷৷