রাখির উৎস নিয়ে তিনটি কাহিনী শোনা যায় জানুন কি কি গল্প রয়েছে

0
1074

পিয়ালী মুখার্জী: রাত পেরোলেই রাখি পূর্ণিমা। ভাইয়ের হাতে বোনেদের রাখি বাঁধার দিন। সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় এই উৎসব। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সুখ সমৃদ্ধির কামনায় বোনেরা রাখি পরান। আর ভাইরা বোনকে জীবনের সব রকম বিপত্তি থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। ভারতে বহু প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে এই সুন্দর উৎসব।

ভারতে রাখি বন্ধন উৎস নিয়ে তিনটি কাহিনী শোনা যায়। প্রথম কাহিনী টি রামায়ণের। শ্রীরাম ভালোবাসার আর তাঁদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি তে বানর সেনাদের হাতে ফুলের রাখি বেঁধেছিলেন। দ্বিতীয় কাহিনী টি হল দেবী লক্ষ্মী বালি কে ভাই হিসাবে রাখি পরিয়েছিলেন। তার উপহার হিসেবে বিষ্ণুদেব কে স্বর্গে ফিরে পাবার আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। অবশেষে তিন নম্বর গল্পটিও একটি পৌরাণিক কাহিনী। সেটি মহাভারতে বর্ণিত। শ্রীকৃষ্ণ, সুভদ্রা এবং দ্রৌপদীর কাহিনী, যাতে রাখিবন্ধনে ভাই বোনের এই উৎসবের অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। সুভদ্রা নিজের বোন হলেও দ্রৌপদী কে বেশি স্নেহ করতেন শ্রীকৃষ্ণ। সেটা বুঝতে পেরে সুভদ্রা তার কারণ জানতে চেয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের কাছে, তাতে তিনি বলেছিলেন সঠিক সময়ে সুভদ্রা তা জানতে পারবেন। একটি ঘটনায় নিজের সুদর্শন চক্রে শ্রীকৃষ্ণের আঙ্গুল কেটে রক্তপাত হতে থাকে। সুভদ্রা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বস্ত্র খণ্ড খুঁজতে যা কৃষ্ণের আঙুলে বেঁধে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। সেই সময় দ্রৌপদী সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজের পোষাক থেকে আঁচলের অংশ ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন। সুভদ্রা সেদিন বুঝতে পারেন ভাই বোনের সম্পর্কের অনন্তর্নিহিত অর্থ। এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আদি ও অকৃত্তিম। সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় উৎসব হিসাবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন।

এই বার ২১শে আগস্ট সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা থাকছে ২২শে আগস্ট বিকেল ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত। অনেকে এই পুণ্য তিথিতে বাড়িতে নারায়ণ পুজো করে থাকেন।

এর সাথেই আর একটি উৎসব পালন হয়, সেটি হলো ঝুলনযাত্রা। রাখি পূর্ণিমার সাথে এর পরিসমাপ্তি ঘটে।

১৮ অগাস্ট বুধবার থেকে শুরু হয়েছিল এই বছরের ঝুলন যাত্রা। শ্রাবণ মাসে একাদশী থেকে পূর্ণিমা, এই পাঁচদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব ঝুলন উৎসব। শ্রাবণ মাসের প্রতিপদ তিথি থেকে আবম্ভ হয়ে পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত পাঁচ-দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি উদযাপন করা হয়। রাখি পূর্ণিমার মাধ্যমে ঝুলন যাত্রার সমাপ্তি ঘটে। মথুরা-বৃন্দাবনের মতোই বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এটি দোল পূর্ণিমার পরবর্তী বৈষ্ণবদের আর একটি বড় উৎসব। শাস্ত্রমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্ত অভক্ত নির্বিশেষে সকলকে অনুগ্রহ করবার জন্য গোলকধাম থেকে ভূলোকে এসে লীলা করেন। ঝুলন শব্দেরটির সঙ্গে ‘দোলনা’ শব্দটি রয়েছে। তাই এই সময় ভক্তরা রাধাকৃষ্ণকে সুন্দরকে দোলনা তে বসিয়ে পূজো করেন।

শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণর প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে দ্বাপরযুগে এই ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এক এক অঞ্চলে দোল বা দুর্গোৎসবের মতো ঝুলন উৎসবের আকর্ষণ কিছু মাত্র কম নয়। ঝুলনেও দেখা যায় নানা আচার অনুষ্ঠান ও সাবেক প্রথা।

শুধুমাত্র রাধাকৃষ্ণের যুগলবিগ্রহ দোলনায় স্থাপন করে হরেক আচার অনুষ্ঠান উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। শ্রাবণের শুক্লা একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে এই উৎসব। নানা ধরনের মাটির পুতুল, কাঠের দোলনা আর গাছপালা দিয়ে ঝুলন সাজানোর আকর্ষণ ছোটদের মধ্যে আগে থাকলেও এখন কালের স্রোতে ডিজিটাল মাধ্যমের আধিপত্যে তা লুপ্তপ্রায়। কোথাও কোথাও ঝুলন উপলক্ষে চলে নামসংকীর্তন।

রাধা গোবিন্দের বিগ্রহ স্থাপন করে পূর্ব-পশ্চিম দিক দিয়ে ঝোলানোর তাৎপর্য কী? এ বিষয়ে, শাস্ত্রীয়, ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দোলনাটি দোলানো হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। সূর্যের উদয় অস্ত ও অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করেই তা করা হয়। সূর্য হচ্ছে পৃথিবীতে সর্ব প্রকার শক্তির উৎস। আর পৃথিবীর গতি হচ্ছে-দু’টো, আহ্নিকগতি ও বার্ষিক গতি। দুই গতিধারায় বছরে দু-বার কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখায় গিয়ে অবস্থান করে। তখন ঘটে সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন অবস্থান। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা অনুষ্ঠানে দোলনাটিকে ঝোলানো হয় উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে।

Previous articleকাবুল বিমানবন্দরে সত্যিই ১৫০ ভারতীয়দের অপহরণ? আসল সত্য সম্পর্কে সরকারি সূত্র থেকে যা জানাগেছে !
Next articleটাকা নিয়ে বিজেপি-তে যোগদানের চেষ্টা! হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে বনগাঁর রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here