পার্থ সারথি নন্দী:-
বনগাঁর পুজোর ময়দানে উৎসবের গন্ধটুকুও নেই৷ বড় পুজোগুলি প্রচার থেকে অনেক দূরে। ছোট মাপের পুজোগুলি একেবারেই নীরব।
বেশির ভাগ পুজো কমিটির কর্তাদের মুখে মুখে একটাই কথা শোনা যাচ্ছে এবছর ৷ তাঁরা বলছেন, একে তো অতিমারিতে ভাঁড়ারের অবস্থা ভাল নয়। তাই খরচ বহুলাংশে কমাতে হয়েছে। সর্বোপরি করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। অভিযান সংঘ , শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাব, উজ্জ্বল সংঘের মতো বনগাঁ শহরের এই অভিজাত পুজো গুলির এখনও থিমই ঠিক করেনি! পুজোর কর্তারা বলছেন, পুজোর বহর কমছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ছোট মাপের থিম-পুজো হবে শেষ পর্যন্ত।
মতিগঞ্জের ঐক্য সম্মেলনী ,১২-র পল্লী স্পোর্টিং ক্লাব, প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাব এবং শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোয় উপচে পড়ে ভিড়। কিন্তু অতিমারিতে খরচে রাশ টানছে তারাও। ঐক্য সম্মেলনী পুজো কমিটির কর্তা দেব দাস মন্ডল জানান , ২০১৮-১৯ সালে মোটামুটি ১৫- ২০ লক্ষ টাকার বাজেট ছিল। গত বছর সেটা কমে হয় পাঁচ লক্ষ টাকা। এ বার পাঁচ লক্ষের বাজেট করা হয়েছে। তাঁর মতে, পরিস্থিতি তো জাঁকজমক করে পুজোর মতো নয়। কিন্তু বনগাঁ সহ গোটা জেলার মানুষ এই পুজোর টানে ছুটে আসেন এটা তাঁদের প্রাণের পুজো,যাতে একটু মানসিক আনন্দ পান তাঁরা, সেটাই মূল লক্ষ্য।
১২-র পল্লী সর্বজনীনের পুজোর খরচেও বিপুল রাশ টানা হচ্ছে। অতিমারির আগে তাদের গড় বাজেট হত ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। গত বছর এক ধাক্কায় নেমে তা এসেছিল ৫ লক্ষে। পুজো কমিটির কর্তা নারায়ণ ঘোষ (নান্তু) জানাচ্ছেন, এ বার ৫ লক্ষ টাকার মধ্যেই পুজো সারতে হবে। ওই চত্বরের রামনগর রোড স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর খরচেও রাশ টানা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুজো কমিটির এক কর্তা৷
শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাব কর্তা শঙ্কর আঢ্য বলেন দূর্গা পুজো প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হবে,তবে রাজ্য সরকারের দেওয়া কোভিড বিধি মেনেই সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
শিমুলতলা শান্তি সংঘের ক্লাবের সম্পাদক নিত্য গোপাল দাস, বলেন “পুজো ছোট করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পথচলতি মানুষ যাতে ভিড় এড়িয়ে পুজো দেখতে পারেন, তার জন্য জায়ান্ট স্ক্রিন করা হতে পারে,তবে এখনও কোনও থিম নিয়ে ভাবা হয়নি।”
এগিয়েচলো সংঘ ৩ নং টালি খোলার নিতাই বাবুদের পুজোর খ্যাতি শহরময়। কিন্তু এ বার তাঁরা ঠিক করেছেন, পুজোর ভোগের চাল, আনাজ, ডাল ঠাকুরকে নিবেদনের পরে প্যাকেটে ভরে পৌঁছে দেওয়া হবে গরিবদের দুয়ারে।
পাইক পাড়া সবুজ সংঘের পুজোকর্তা অশোক কীর্তনীয়া বলেন,“পুজো তো হবেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে মণ্ডপের পরিকল্পনা করব ,গান্ধীপল্লী স্পোটিং ক্লাবের পুজোতেও একই ভাবে কাট ছাঁট করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।” প্রতাপ গড় পুজোকর্তাদের কথায়, গত বছরের মতো ছোট মাপের খোলামেলা মণ্ডপ এবং সাবেকি প্রতিমাতেই পুজো সারবেন তাঁরা।
অতিমারির প্রভাব ফেলেছে বনেদি বাড়ীর পুজোতেও , খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সার্বিক অর্থনীতিতে অতি মারির প্রভাব এতটাই পড়েছে যে টান পড়েছে বনেদি বাড়ির পুজোর ভাঁড়ারেও। বনগাঁ মতিগঞ্জ মিলিটারী রোডের দে বাড়ির প্রদীপ দে বলেন, প্রায় দু’বছর ব্যাবসার পরিস্থিতি খুবই সংঙ্কট জনক তাই গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কম খরচে পুজো সারতে হবে৷
অভিযান সংঘের পুজো কমিটির কর্তা তুহীন ঘোষ বলেন,স্পনসরেরা আগের মতো দরাজ নন। বিজ্ঞাপণদাতাদের সহযোগিতায় অনেকটাই পুজোর বহর বাড়ত এ বছর সে সব উধাও ৷
পুজো সংক্রান্ত বিপণনে যুক্ত শ্রেয়সী বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, স্পনসরেরা বিজ্ঞাপন দেন মন্ডপের ভিড় অনুযায়ী। নতুন কোনও পণ্য বাজারে আনলে তার বিপণনে বেশি খরচ করেন। কিন্তু এ বছর ভিড় করতেই দেবে না প্রশাসন এবং অতিমারি পরিস্থিতিতে কোনও নতুন পণ্য সে-ভাবে বাজারে আসছে না। তাই বিজ্ঞাপন জগতেও এখন ভাটা চলছে ।
তাই এবার পুজোর ময়দানে কান পাতলে অবশ্য নানা ধরনের খবরও ভেসে আসছে। কোথাও ঘট পুজো সারবে তো কোথাও একচালার ঠাকুর গড়েই কোন রকমে পুজো হবে৷ কারণ পুজো কমিটির কর্তারা জানতেন, ভিড় এবং পুরস্কারের দৌলতে স্পনসরের কাছ থেকে কোন টাকা উঠবেন তাই তাঁরা ধরে নিয়েছেন, অতিমারির মন্দা সহজে দূর হওয়ার নয় । তাই এ বছর হাত উপুড় করে খরচের বদলে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে অনেক পুজো কমিটি। তারই প্রভাবে এবার নমো নমো করেই পুজো হতে চলেছে বনগাঁয় ৷