দেশের সময়, বনগাঁ: আশঙ্কাই সত্যি হলো। শেষ পর্যন্ত পৌর প্রশাসকের পথ থেকে সরতে হলো শংকর আঢ্যকে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তার জায়গায় নতুন পৌর প্রশাসক করা হলো গোপাল শেঠকে।
২০১১ সাল থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পৌরসভার দায়িত্ব সামলেছেন বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি শংকর আঢ্য। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই সময়কালে বনগাঁ পৌর এলাকায় যত উন্নয়নের কাজ হয়েছে তা একটা রেকর্ড। এযাবত কালে কেউ এত কাজ করতে পারেনি। আগামীতেও পারবে কিনা সন্দেহ আছে।
এতকিছুর পরেও কোথায় যেন খামতি রয়ে গেছে মানুষের মনে। আর তাই বিভিন্ন সময়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে মানুষ নিঃশব্দ প্রতিবাদ করেছেন। আর সেই খবর পৌঁছে গেছে তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছেও। সেই কারণে তিনি বনগাঁতে নির্বাচনী প্রচারে এসে তার ইঙ্গিতও দিয়ে গেছেন। তাঁর সেই ইঙ্গিতই এতদিন পর ফলপ্রসূ হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
শংকর আঢ্যর বিরোধী গোষ্ঠীর কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পৌরসভার যেকোনো কাজ একার সিদ্ধান্তেই করতেন শংকর আঢ্য। এ ব্যাপারে মতামত দেয়ার কোন জায়গাই ছিল না অন্যান্য কাউন্সিলরদের। আর এমন পরিস্থিতিতে একসময় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন দলেরই ১৩ জন কাউন্সিলর। পৌর প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পাশাপাশি তাকে পৌর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।
কিন্তু দল সেই আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় ওই কাউন্সিলরের বিজেপিতে যোগদান করেন। পরে তাদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য ফিরে আসেন। এরপর আস্থাভোটে যেই হোন শংকর আঢ্য। পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাকে হয়তো রাজনৈতিক কারণে এতদিন প্রশাসকের পদে রেখে দিয়েছিল দল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ হল হওয়ার মাসুল দিতে হলো তাকে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে টিকিট না পাওয়ায় বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন শংকর। শোনা যায় সেই সময় তিনি বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা করেন। এসব খবরই ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। তারা হয়তো সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী হওয়ার মাশুল দিতে হলো শংকর আঢ্যকে।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন বনগাঁ তে আমি যে পরিমাণে উন্নয়নের কাজ করেছি তা কারোর পক্ষে করা সম্ভব না তৃণমূল নেত্রী’ আমার জায়গায় অন্য কাউকে প্রশাসক পদে আনার কথা ভেবেছেন বলেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্যদিকে, নতুন প্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন, মানুষের উন্নয়নে আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।
অন্যদিকে বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, বনগাঁর মানুষ এতদিন পৌরসভায় ঢুকতেই ভয় পেতেন। নতুন প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি, তিনি যেন মানুষকে মর্যাদা দিয়ে মানুষের উন্নয়নে কাজ করেন।
একুশের বিধানসভা ভোটে বনগাঁ উত্তরের কেন্দ্রে তৃণমূলের ভরাডুবির পর থেকে পুর প্রশাসককে সরানোর দাবি ক্রমশই জোরদার হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। মঙ্গলবার রাজ্য পুরদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, বনগাঁর পৌর প্রশাসক পদে রদবদল করা হচ্ছে। মুখ্য প্রশাসক পদের ভার দেওয়া হচ্ছে গোপাল শেঠকে। তাঁকে শিগগির দায়িত্বভার গ্রহণ করে কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে পুরদপ্তর।
উল্লেখ্য,২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে বনগাঁর ২২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২o তৃণমূল জয়লাভ করে৷ ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শংকরবাবু। বনগাঁ তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ পৌরসভা এলাকায় বিজেপি থেকে ভোটের নিরিখে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে যায় তৃণমূল।
এরপরেই বনগাঁ পৌরসভার ১৪ জন জন কাউন্সিলর শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে স্বৈরাচার ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে অনাস্থা এনেছিল। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূল জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে শংকর বাবুকে অপসারণের আবেদন জানিয়েছিলেন। পরে কয়েকজন কাউন্সিলর তৃণমূলে ফিরে আসায় ফের ভোটে জয়লাভ করেন শংকরবাবু। এরপরেই বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বাকি কাউন্সিলররা জেলা ও রাজ্য নেতাদের উপর ক্ষোভ জানিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ পৌর এলাকায় তৃণমূল ভাল ফল না করায় প্রশাসক বদলের গুঞ্জন চলছিল। এদিন প্রশাসক বদলের খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূলের একাংশ ও প্রাক্তন কাউন্সিলররা। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল শংকর আঢ্যকে সরিয়ে দিল, কিন্তু তা অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিধানসভার আগে তাঁকে সরানো হলে বনগাঁয় আরও ভাল ফল করতে পারত তৃণমূল।
এ বিষয়ে শংকর আঢ্য জানান, ”আমাকে কেন সরানো হল সেটা দল বলতে পারবে। যে উন্নয়ন করেছি সেটা সাধারণ মানুষ জানে এবং অনুধাবন করছে। যদি বনগাঁ উত্তর বিধানসভায় হারার জন্য আমাকে সরানো হয়, তাহলে আমি মনে করব, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এটা অন্যায় করা হয়েছে ,তবে কাজ করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে এবং অনেকেই আমার ব্যাবহারে দুঃখ পেয়েছেন তাঁদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”