দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবারই রাজভবনে যাওয়ার কথা ছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ একঝাঁক বিজেপি বিধায়কের। ট্যুইটে সেকথা জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও ।
সোমবার বিকেলে বিধানসভা থেকে পায়ে হেঁটে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়করা রাজভবনে পৌঁছন। রাজ্যপালের সঙ্গে চা চক্রে যোগ দেন তাঁরা। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করেন বিরোধী বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। দলত্যাগ বিরোধী আইন-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া ও অভিযোগ সম্বলিত একটি মেমোরেন্ডাম রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন বিজেপি বিধায়করা।
এরপর শুভেন্দু অধিকারীদের পাশে বসিয়ে রাজভবনের খোলা বারান্দায় রাজ্যপাল সাংবাদিক বৈঠক করেন। কড়া ভাষায় আরও একবার রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন তিনি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “ভোট পরবর্তী রাজ্যে একাধিক জায়গায় অশান্তি হয়েছে। সেই জায়গাগুলিতে কেন মুখ্যমন্ত্রী গেলেন না?” ভোট পরবর্তী অশান্তি, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যপালের মন্তব্য, “বাংলায় গণতন্ত্র নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।”
Opposition delegation led by Shri Suvendu Adhikari, Leader of the Opposition in the West Bengal Legislative Assembly @SuvenduWB today called ob the Governor of West Bengal and submitted a representation as regards alarming law and order situation @MamataOfficial in the State. pic.twitter.com/E9mUL8zkCD
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) June 14, 2021
এদিন আরও একবার রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন জগদীপ ধনখড় ৷ তাঁর দাবি, উর্দিধারীরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না। তৃতীয়বারের জন্য বিপুল ভোটে জিতে বাংলার মসনদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মানুষের রায়ে বাংলা দখল হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন কোনও কাজ করছে না বলেও অভিযোগ জগদীপ ধনখড়ের। রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক যে সুমধুর নয়, তা তাঁর একের পর ট্যুইট বার্তায় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের পর দু’পক্ষের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
সোমবার বিরোধী দলেনতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে চা-চক্রের পর একই অভিযোগে রাজ্য সরকারকে ফের কড়া ভাষায় দুষলেন রাজ্যপাল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুললেন তিনি।
রাজ্যপালের সঙ্গে বিজেপি বিধায়কদের এই চা-চক্র নিয়ে তৃণমূলের তরফে দেওয়া হয়েছে পাল্টা খোঁচা। খাতায়-কলমে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৫। মুকুল রায় ইস্তফা দিলে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়াবে ৭৪। কিন্তু সোমবার রাজভবনে হাজির থাকলেন গেরুয়া শিবিরের ৫১ জন বিধায়ক। তার জেরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাকি ২৩ জন বিধায়ক কোথায় গেলেন? তাহলে কি তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে আছেন? প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিধায়কদের গড় হাজিরা নিয়ে।
সাংবাদিক বৈঠক করে এই প্রসঙ্গে সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “রাজ্যপালের কাছে বিজেপির পক্ষে অনেক বিধায়ক তো গেলেনই না। কেন অনুপস্থিত থাকলেন তাঁরা? সেটা নিয়ে বিজেপি তদন্ত করুক।”
একইসঙ্গে সোমবারের এই বৈঠক থেকে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, “বিজেপির কিছু লোক মাইকিং করে বলছেন ফিরে আসব। বাংলার বাইরে আমাদের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছে৷ কোনও বিশেষ রাজ্য শুধু নয়।” শুভেন্দু অধিকারীর ‘দলত্যাগ বিরোধী আইন’ এর দাবিকে কটাক্ষ করে সুখেন্দু শেখর বলেন, “দলত্যাগ বিরোধী আইন কী ভাবে বলবৎ হবে তাতে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা নেই।” নাম না করে শুভেন্দুকে একহাত নেন সুখেন্দু শেখর। তিনি বলেন, “উনি সীমায় থেকে কাজ করুন। যে দলের সভাপতি তার সাঙ্গপাঙ্গরা যে ধরণের মন্তব্য করেছেন। তা উস্কানিমূলক মন্তব্য। আকাশ বাতাস কলুষিত করেছে। তাদের কন্ঠে আজ আর্তনাদ কেন? আমাদের লোকেদের খুন করবে বলেছিল। গুলি করবে বলেছিল। তারা আজ এমন করছে কেন?”
উল্লেখ্য,শনিবার ভারতীয় জনতা পার্টির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভায় হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেদিনই স্পষ্ট করে বলেছিলেন, বাংলায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করবই করব।
এদিন ৫১ জন বিধায়ককে নিয়ে মিছিল করে রাজভবনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছি। বুধবারই আবেদন করা হবে।”
তাঁকে সংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, গত ১০ বছরে অনেক এমন দলবদল ঘটেছে কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই এই আইন প্রয়োগ হয়নি। তাহলে মুকুল রায়ের বেলায় কী হবে? জবাবে শুভেন্দু বলেন, “মাননীয় অধ্যক্ষ সম্মানীয় ব্যক্তি।১০ বছর ধরে বিধানসভা পরিচালনা করছেন। আমরা বুধবার আবেদন করছি। অতীতে সঠিক ভাবে প্রক্রিয়া মেনে কোনও দল দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগের আবেদন করেছিল কিনা জানা নেই। কিন্তু বিজেপি করবে। গত ১০ বছরের বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বিজেপিকে গুলিয়ে ফেলবেন না। বিজেপি কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছে, ১৫টি রাজ্যে সরকার পরিচালনা করছে।”
এদিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, দিল্লিতে একসঙ্গে ২৬ জন বিধায়কের পদ গিয়েছিল। মণিপুর, উত্তরাখণ্ড—১০টা উদাহরণ রয়েছে। এখানে না হলে কোথায় কী করতে হয় জানা আছে।”মুকুলবাবুর বিধায়কপদ খারিজ যদি অধ্যক্ষ না করেন তার বিকল্প কী ব্যবস্থা রয়েছে তাও তাঁর জানা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিন রাজ্যপালও দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ধনকড় বলেছেন, বাকি রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও দলত্যাগ বিরোধী আইন বলবৎ রয়েছে। এটা যেন কেউ ভুলে না যান।
এখন কৌতূহল হচ্ছে, তৃণমূল কী পদক্ষেপ করবে? বিজেপি আবেদন করার আগেই মুকুলবাবু কি বিধায়ক পদ থেকে নিয়ম মেনে ইস্তফা দেবেন? নাকি গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সরাসরি সাংবিধানিক সংঘাতে যাবেন? যাই হোক না কেন, মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে নতুন চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল।
সূত্রের খবর, বিশেষত বিজেপি ছেড়ে মুকুল তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ভাঙনের চোরাস্রোত বইছে। কয়েকজন বিধায়ক ইতিমধ্যে বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন। কয়েকজন মুকুল-ঘনিষ্ঠও তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে আছেন। মুকুলও নাকি চুপচাপ বসে নেই। তিনি আবার নাকি তৃণমূলে গিয়েই ফোন ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছেন।
ফোন যাচ্ছে বিজেপি বিধায়কদের কাছে। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে ২৩ জন বিধায়ক অনুপস্থিত থাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি বিজেপির ঘরে আরও ভাঙন ধরতে চলেছে?