দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের আমজনতার অবদানকে কুর্নিশ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ‘মন কি বাত’-এর ৭৭তম এপিসোডে মোদীর জবানিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’-র ঐক্যের জয়গান। রবিবার করোনাযুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে লড়েছেন যাঁরা, সেই অক্সিজেন সাপ্লায়ার, সিলিন্ডার ড্রাইভার, রেলের লোকো পাইলট এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আজ নয়। বিগত সাত বছর ধরে দেশবাসী একজোট। যে কারণে শুধু কোভিডের মতো অতিমারী নয়, ইয়াস, তাউটের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও সফলভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জাতির উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘আমার প্রিয় দেশবাসী, যত বড়ই চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন, আমরা জোরদারভাবে তার মোকাবিলা করেছি। সকলের সম্মিলিত শক্তি আর সাহস দেশকে দুর্যোগ থেকে বের করে এনেছে।’
গত কয়েক দিন ধরে করোনার দুর্ভোগের মধ্যে বেশ কিছু রাজ্যে সাইক্লোন আছড়ে পড়েছে। মূলত উপকূলীয় জেলাগুলি এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমে তাউট। তারপর ইয়াস। বিগত ১০ দিনে জোড়া ঘূর্ণিঝড়ে বাংলা, কেরল, ওড়িশা, মুম্বই, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের অনেক গ্রাম ভেসে গেছে। শহরের বুকেও তাণ্ডব চালিয়েছে ঝড়। এতকিছুর মধ্যেও সেখানকার বাসিন্দারা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তাকেও বাহবা জানিয়েছেন মোদী।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে যাওয়ার পরে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিধ্বস্ত এলাকা হেলিকপ্টারে ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর রবিবার নিজের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ৩ রাজ্য, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের প্রশংসা করলেন মোদী।
মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত রাজ্যগুলি সাহস দেখিয়েছে। ধৈর্য ও অনুশাসন দেখিয়ে লড়াই করেছে তারা।’’ ইয়াস মোকাবিলায় যে ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে কাজ করেছে তারও প্রশংসা করেছেন তিনি।
শুক্রবার ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পরে প্রথমে ওড়িশা ও তার পর বাংলায় রিভিউ বৈঠকও করেন তিনি। বাংলায় মোদীর বৈঠকে প্রথমে থাকার কথা ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু পরে মমতা জানান, তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কলাইকুণ্ডায় মোদীর বৈঠক চলাকালীন গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রাজ্যের রিপোর্ট দিয়ে চলে আসেন তিনি।
এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। তার মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জরুরি ভিত্তিতে দিল্লিতে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই নির্দেশিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সঙ্ঘাতের মধ্যেই এ বার রাজ্যের প্রশংসা শোনা গেল মোদীর গলায়।
এরই মধ্যে দেখতে দেখতে সাত বছরে পা রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ক্ষমতায় আসার আগেই ডিজিটাল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এদিন তার সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আপনি সহজেই দেশের যে কোনও জায়গায় বসে ডিজিটাল পেমেন্ট করতে পারেন। কোভিডকালে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে আমাদের সরকার রেকর্ড সংখ্যক স্যাটেলাইট বসানো ও রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছে।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে অক্সিজেনের আকাল দেখা দেয়। ঘাটতি মেটাতে অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালু করে রেল। এ ছাড়া আন্তঃরাজ্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহন সুগম করা, অক্সিজেনের প্ল্যান্ট বসানোর মতো সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এই সমস্ত পরিষেবার জেরে দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন ১০ গুণ বেড়েছে বলে দাবি করেন মোদী। আপাতত দেশে দৈনিক ৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন তৈরি হয়। তাই এই গোটা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছোট-বড় সমস্ত কর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।