’মমতার আচরণ দুর্ভাগ্যজনক’ প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য, সমালোচনা অমিত, নাড্ডা, ধনখড়, শুভেন্দুর

0
1071

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমানায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক কখনওই খুব একটা মধুর ছিল না। মনমোহন সিং সরকারের সঙ্গে যেমন সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল, তেমনই মোদী সরকারের সঙ্গে অহোরাত্র সংঘাত তো চলছেই। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করে সেই পরিবেশ আরও এক প্রস্ত তিক্ত হল। তা এতটাই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দাম্ভিক’, রাজ্যের মানুষের কল্যাণের ব্যাপারে ‘উদাসীন’ বলে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রের শীর্ষ কর্তারা।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান নিয়ে শুক্রবার বৈঠকে বসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু এদিন বৈঠকে যোগ দেননি মমতা। সূত্রের খবর, রাজ্যে ইয়াসে মোট ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েই কলাইকুণ্ডায় বৈঠকস্থল ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, এদিন বৈঠকস্থলে ৩০ মিনিট দেরিতে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। বৈঠকে উপস্থিত না থাকার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় সরব হয়েছেন অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিন দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটে পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডাতে মোদী-মমতার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ ৩০ মিনিট দেরিতে মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে উপস্থিত না থাকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাসের বিরুদ্ধে সরব প্রথম সারির বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন টুইটে লেখেন, ‘মমতা দিদি আজ যা করেছেন তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইয়াসে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এই সময় সাধারণ মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু জনস্বার্থের জন্যও ঔদ্ধত্য ছাড়তে পারেননি দিদি।’

এদিকে টুইটে জেপি নাড্ডা টুইটে লেখেন, ‘যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার মানুষের পাশে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন, তখন মমতা জীর উচিত ছিল জনগণের কল্যাণার্থে নিজের অহং-কে বিসর্জন দেওয়া। পিএম এর বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি হল সাংবিধানিক নীতি আর সমবায় মৈত্রীতন্ত্রের হত্যা।’

অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আজকে একটি কালো দিন। মুখ্যমন্ত্রী আবার প্রমাণ করে দিলেন মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি চিন্তিত নয়।’ বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত টুইটে লেখেন, ‘ইয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে না বসার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয়। উনি রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে একটি সংঘাত তৈরি করার চেষ্টা করছেন।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি যে, আপনি এতদূর থেকে দেখা করতে এসেছেন, তাই আমি দেখা করতে এলাম। আমার অন্য মিটিং ঠিক রয়েছে। আমাকে যেতে হবে”।

ওড়িশা বা বাংলার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যে সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওড়িশায় যেমন তিনি মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে নিয়ে রিভিউ মিটিং করেছেন, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে বলা হচ্ছে, এ ধরনের বিপর্যয়ের পর বিরোধী দলনেতাদেরও বৈঠকে ডাকা প্রধানমন্ত্রী প্রথায় পরিণত করেছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। অতীতে কেরল, কাশ্মীরেও এমনটাই হয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ বিরোধী নেতা হিসাবেই কাশ্মীরের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন যা করেছেন, তা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বেনজির ঘটনা।

কেন্দ্রের এও বক্তব্য, এর আগে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বা রাজ্যপালের ডাকা বৈঠক নিয়ে এমন সংকীর্ণ আচরণ করেননি। এই রাজনীতির আসলে ক্ষতি হবে রাজ্যের মানুষেরই।

বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়েছেন। আবার পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক বলেছেন, যে হেতু কেন্দ্রের উপরে কোভিডের এত বোঝা, তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনও অর্থ সাহায্য চাননি।

Previous articleএকুশ সাল শেষ হওয়ার আগেই দেশের সকলে ভ্যাকসিন পাবেন, ঘোষণা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
Next articleDaily Horoscope: কোন রাশির জাতকের কেমন কাটবে শনিবার? জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here