দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইয়াস পরবর্তী বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলাইকুণ্ডায় তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপরই বিপর্যয় নিয়ে একটি রিভিউ বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদী। তবে সেই বৈঠকে থাকছেন না বলে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমার একটি কাগজ দেওয়ার আছে। সেটা দিয়েই আমি চলে আসব। প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠকে আমি থাকছি না।’ শুক্রবার সকাল থেকেই দুই ২৪ পরগনার বিস্তারিত এলাকা আকাশপথে পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন না।
শুক্রবার সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী ও দেবশ্রী চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিন সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তিনি কলাইকুণ্ডে উড়ে যাবেন। তবে রিভিউ মিটিংয়ে থাকবেন না। কেবলমাত্র একটি প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে মিনিট ১৫-এর মধ্যে ফিরে আসবেন।
অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা আকাশপথে পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যা কবলিত সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ অঞ্চল হেলিকপ্টারে পরিদর্শন সেরে সাগরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সেখানে জেলাশাসক পি উলগানাথনের থেকে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে নেন। বৈঠকে তিনি বারবার বলেন, ‘ত্রাণ নিয়ে কোনওরকম গাফিলতি যেন না হয়। কোনও বদনাম বরদাস্ত করা হবে না।’ এদিন সাগরের বন্যা কবলিত বেশ কিছু এলাকা পায়ে হেঁটেও পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইয়াস -এর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড দুই ২৪ পরগনা। শুক্রবার পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে মমতা জানিয়ে দিলেন, ত্রাণ নিয়ে কোনও রকম ‘বঞ্চনা’ সহ্য করবেন না তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ত্রাণ বণ্টণে কোনও রকম ‘কার্পণ্য’ চলবে না।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে দেখতে শুক্রবার কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে মমতার। তার আগে সকালে দুই ২৪ পরগনার পরিস্থিতি তদারকি করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রথম উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জে পৌঁছন। সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ত্রাণ নিয়ে কোনও বঞ্চনা সহ্য করব না আমি। খাবার-দাবার, ত্রিপল বণ্টণে কার্পণ্য করা চলবে না। কারণ এ সব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের।’’
যাবতীয় ত্রাণকার্য প্রশাসনের হাতে থাকবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ বার সরকারি আধিকারিকদের সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
কোভিড পরিস্থিতিতে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের নিরাপত্তায় জোর দিতে বলেছেন মমতা। আশ্রিত সকলকে বিশুদ্ধ পানীয় জল, মাস্ক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, আমপান পরবর্তী পরিস্থিতির মতো এ বারও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর একটি দল বাংলায় আসছে। ত্রাণশিবিরগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখবে তারা। ত্রাণশিবিরে আশ্রিত গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য বাচ্চাদের খাবারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
হিঙ্গলগঞ্জের বৈঠকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহানও। সেখানে ব্যারাকপুর, বারাসত, বনগাঁ এবং বসিরহাট-কে চারটি সাব ডিভিশনে ভেঙে ত্রাণকার্য চালানোর পরামর্শ দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘চারটি ভাগ করে নোডাল অফিসারদের দায়িত্ব দিতে হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান রাজ্যকে জানাবেন তাঁরা। সেই অনুযায়ী ১ থেকে ৮ জুলাই দুয়ারে ত্রাণ পরিষেবা পাবেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে। এ ব্যাপারে কোনও সমস্যা হলে ওই নোডাল অফিসাররাই দায়ী থাকবেন। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার আগে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। শুক্রবার তিনি জানান, সন্দেশখালি, ধামাখালি, সাগরের মতো এলাকা দুর্যোগের কবলে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি, ৭ হাজার জলাশয়, ৫৫টি বাঁধ এবং ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা। পথশ্রী প্রকল্পে নতুন রাস্তা গড়ে দেওয়া হবে বলে জানান মমতা। আমপানের সময় ম্যানগ্রোভ রোপণে গুরুত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো চারারোপণ হলেও, দুর্যোগ সামাল দিতে তাদের আরও সময় লাগবে। ১০০ দিনের প্রকল্পে আরও বেশি করে ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে বলে মত মুখ্যসচিবেরও।