দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল ইয়াস। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় মৌসম ভবন প্রকাশিত বুলেটিনে এই তথ্য হয়েছে। ওই বুলেটিন জানাচ্ছে, গত সাড়ে ৫ ঘণ্টায় স্থলভাগের আরও কাছে চলে এসেছে ইয়াস। এখন তার অবস্থান পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা সৈকত থেকে মাত্র ২৪০ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। বুধবার ভোরেই তা স্থলভাগে পৌঁছে যেতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলে লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিং স্টর্ম বা অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কথা ছিল ইয়াসের। মৌসম ভবনের বুলেটিন বলছে, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে স্থলভাগের দিকে।
মৌসম ভবনের বুলেটিন বলছে, ঝড়ের অভিমুখ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমদিকে। এখন বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমে ১৯ ডিগ্রি ১ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮ ডিগ্রি ১ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে ইয়াস। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে ইয়াস। অন্যদিকে, ওড়িশার বালাসোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাগর আইল্যান্ড থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে ইয়াস।
বুধবার ২৬ তারিখ সকালে আবদুল কালাম দ্বীপের অদূরে ওড়িশার চাঁদবালি ও ধামারা বন্দরের মাঝখানে আছড়ে পড়বে ইয়াস। ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার, বেড়ে হতে পারে ১৮৫ কিলোমিটার (গাস্টিং)।
Very Severe Cyclonic Storm ‘Yaas’ , located about 160 km east-southeast of Paradip (Odisha), 250 km south-southeast of Balasore (https://t.co/QjQGSe3caY intensify further and to cross north Odisha-West Bengal coasts between Paradip and Sagar Islands during 26th May as a VSCS. pic.twitter.com/HyYkWFTeL6
— India Meteorological Department (@Indiametdept) May 25, 2021
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপট বেশি দেখা যাবে ওড়িশার চার জেলায়—কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, জগৎসিংপুর ও বালাসোর। এই চার জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নীচু এলাকাগুলি থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলি থেকে এখনও অবধি ৮১ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, জয়পুর, কটকেও ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বুলেটিন জানাচ্ছে,দীর্ঘ সময় ধরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বইতে থাকার পূর্বাভাস ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অতি ভারী এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে বুলেটিনে। পশ্চিবঙ্গের দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকাতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। ওড়িশার বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপড়া, জগৎসিংহপুরের মতো উপকূলীয় জেলাগুলিতে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে বুলেটিনে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিবিধিতে নজর রাখতে নবান্নের কন্ট্রোল রুমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি কন্ট্রোল রুমে যান। জায়ান্ট স্ক্রিনে আসা ছবি মনিটর করেন। রয়েছেন শীর্ষ আধিকারিকরাও। মঙ্গলবার নবান্নেই রাত কাটাবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সকাল থেকেও সামলাবেন কন্ট্রোল রুম।
মঙ্গলবার সন্ধেয় সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘ভোররাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে। সকালের দিকে ল্যান্ডফল হতে পারে। আবার অনেকে বলছেন দুপুর ১২টা নাগাদও আছড়ে পড়তে পারে ইয়াস। তবে সকালের দিকটাই একটু বেশি করে নজর রাখতে হবে।’’ তিনি জানান, ৪ হাজার ত্রাণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগের জন্য ওয়ার রুম তৈরি করা হয়েছে। আগেও এই পরিষেবা ছিল। তবে এবার ব্লক স্তরেও খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।